Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিচার বিভাগে চাই হস্তক্ষেপমুক্ত পরিবেশ

সুপ্রিম কোর্ট দিবসে সরকারের প্রতি ৬ সিনিয়র আইনজীবী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বিচার বিভাগের উপরে নির্বাহী বিভাগের আধিপত্য ও হস্তক্ষেপমুক্ত পরিবেশ তৈরির জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশের বরেণ্য ৬ আইনজীবী। দেশে প্রথমবার সুপ্রিম কোর্ট দিবস পালন করার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলেন, এমন একটা সময়ে সুপ্রিম কোর্ট দিবসটি পালিত হচ্ছে যখন এদেশের বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ অভিভাবক প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ব্যারিস্টার এম. আমীর-উল ইসলাম, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফ ও ফিদা এম কামাল।
দেশের আইনাঙ্গনের উজ্জল এই নক্ষত্র আইনজীবীরা বিবৃতিতে বলেন, প্রথমবার সুপ্রিম কোর্ট দিবস পালন করার উদ্যোগকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার নির্মিত্তে বিচার বিভাগের উপরে নির্বাহী বিভাগের আধিপত্য ও হস্তক্ষেপ মুক্ত একটি পরিবেশ তৈরি করার আহ্বান জানাতে চাই। সেই সঙ্গে মাসদার হোসেন মামলার রায়ের মাধ্যমে যাতে অধঃস্তন আদালতকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথকীকরণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদালতের দিক নির্দেশনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে নির্বাহী বিভাগ সংবিধান ও সর্বোচ্চ আদালতে রায়ের প্রতি সম্মান দেখাবেন বলে আশা করি।
বিবৃতিতে ৬ আইনজীবী আরও বলেন, অধঃস্তন আদালতে বিচারক নিয়োগ ও বদলি বিষয়ের বিধিমালা দীর্ঘ কালক্ষেপণের পর নির্বাহী বিভাগ ও মন্ত্রণালয় এমন একটি সময়ে স্থানান্তরিত হয়েছে যখন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য এবং যা সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের সঙ্গে প্রয়োজনীয় অর্থবহ পরামর্শ ব্যতীত প্রণয়ন করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অধঃস্তন আদালতকে ১৯৯৯ সালের পূর্বের যুগে নির্ধারিত করার সামিল।
এতে আরো উল্লেখ করা হয়, সংবিধান এর অখন্ডতা রক্ষা, সমর্থন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, এদেশের নাগরিকদের সকল মৌলিক অধিকার বলবৎ করার আদেশ বা নির্দেশ, সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার প্রতিষ্ঠার অংগীকারের পাশাপাশি সংবিধানের যে কোন অংশের সঙ্গে সঙ্গতিহীন কোন আইন বা সরকারী বিধি বা আদেশ যা সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক এমন কোন প্রশ্ন কিংবা জনগুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট এর গুরুত্বপূর্ণ রায় ও ঐতিহ্য গর্বের সাথে স্মরণ করছি।
সাম্প্রতিক সময়ে সংসদে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অপসারন সংক্রান্তে আনীত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা ও বাতিলের রায়সহ জনস্বার্থে দেওয়া অসংখ্য রায় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। উপরোল্লিখিত রায় সমূহের মাধ্যমে এটাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে জনগণের অধিকার রক্ষার্থে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো ও ভারসাম্য কোন অবস্থাতেই পরিবর্তন ও ব্যত্যয় ঘটানো যাবেনা।
সম্প্রতি মাসদার হোসেন মামলার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি পুনঃ স্মরণ করতে গিয়ে দেখা যায় যে অধঃস্তন আদালতের ক্ষেত্রে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিধি প্রণয়নে সংবিধানের মূলধারার বিচ্যুতি পরিলক্ষিত হয়। এটা গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। কারণ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও স্বকীয় অবস্থানের জন্য সংবিধান যে সুরক্ষা দিয়েছে তা বাস্তবায়ন করা সর্বোচ্চ আদালতের দায়িত্ব।
দীর্ঘ ৪৬ বছর কালক্ষেপনের পর এই বিধিগুলো বর্তমানে অধঃস্তন বিচার বিভাগের জন্য সরকার সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৩৩ অনুযায়ী করেছে, অথচ উক্ত ১৩৩ অনুচ্ছেদে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত কর্মচারীদের নিয়োগ ও কর্মের জন্য প্রণীত হওয়ার বিষয়টি সংবিধানের কর্ম বিভাগের জন্য প্রযোজ্য। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, অধঃস্তন আদালতে বিচার বিভাগীয় পদে নিয়োগ, নিয়ন্ত্রন, পদোন্নতি প্রদান ও ছুটি মঞ্জুরীসহ শৃঙ্খলা বিধান সংক্রান্ত বিষয় সংবিধানে দুটি অনুচ্ছেদ ১১৫ ও ১১৬ তে পৃথকভাগে বিচার বিভাগের অংশে প্রণীত আছে। তথাপিও উক্ত আইন প্রনয়নের মাধ্যমে অধঃস্তন বিচার বিভাগের বিচারকদের নির্বাহী বিভাগের অধঃস্তন হিসেবে গণ্য করা হয়েছে, যা ক্ষমতার পৃথকীকরণ নীতির লঙ্ঘনসহ মাসদার হোসেন মামলার রায়ের সাথেও সাংঘর্ষিক। উক্ত আইন সমূহ সংবিধানের অধীনে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের দুটি বিভাগ এর সাথে যথাযথ পরামর্শ ব্যতীত প্রনয়ন করা হয়েছে।
বিবৃতির প্রথমেই বলা হয়ছে, ১৯৭২ সালে ২৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট উদ্বোধন করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এবার প্রথম, সুপ্রিম কোর্ট দিবস পালিত হতে যাচ্ছে ২ জানুয়ারি। এমন একটা সময়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে যখন এদেশের বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ অভিভাবক প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, সর্বোচ্চ আদালত দিবসে আমরা কি বার্তা প্রেরণ করব? এ বিষয়ে জনগণ ও সুশীল সমাজকে সচেতন করার কোন বিকল্প নেই। আমাদের ঐক্য মতের মাধ্যমে একত্রিত হয়ে দেশের সাংবিধানিক ভারসাম্য রক্ষা করার প্রচেষ্টাকে একত্রিত করে দৃঢ় ও সংকল্পিতভাবে জনগণের অধিকার পুনরুদ্ধার করা এবং সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর ভিত্তিতে একটি উপযুক্ত স্বাধীন ও পৃথক বিচার বিভাগের ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা ব্যতীত অন্য কোন বিকল্প নেই।



 

Show all comments
  • ALIM ২ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:৫৯ এএম says : 0
    “ আইনমন্ত্রীর বাড়ীতে ডিজিটাল আইনের চাষ হচ্ছে, তা বোধ হয় জানেন না ৷”
    Total Reply(0) Reply
  • Abdul Matin ২ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:১৮ পিএম says : 0
    কে শুনে কার কথা
    Total Reply(0) Reply
  • আমিনুল ইসলাম ২ জানুয়ারি, ২০১৮, ২:৩৯ পিএম says : 0
    বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও স্বকীয় অবস্থানের জন্য সংবিধান যে সুরক্ষা দিয়েছে তা বাস্তবায়ন করা সর্বোচ্চ আদালতের দায়িত্ব।
    Total Reply(0) Reply
  • জীবন ২ জানুয়ারি, ২০১৮, ২:৪৭ পিএম says : 0
    আমরা সর্বদা বিচার বিভাগকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ অবস্থানে দেখতে চাই।
    Total Reply(0) Reply
  • ইয়াসমিন ২ জানুয়ারি, ২০১৮, ৩:০৯ পিএম says : 0
    বিচার বিভাগ নিয়ে এখন গভীরভাবে ভাবার সময় এসেছে
    Total Reply(0) Reply
  • তাজরিয়া ২ জানুয়ারি, ২০১৮, ৩:১১ পিএম says : 0
    ন্যায় বিচার না থাকলে সেই দেশের উন্নতি কখনোই সম্ভব নয়।
    Total Reply(0) Reply
  • আফসানা ২ জানুয়ারি, ২০১৮, ৬:১০ পিএম says : 0
    ডিজিটাল বাংলাদেশে ন্যায় বিচারের খুবই অভাব। ন্যায় বিচার না হলে কখনোই উন্নতি সম্ভব না।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিচার বিভাগ

৮ নভেম্বর, ২০১৬

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ