Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিচার বিভাগ জিম্মি

প্রকাশের সময় : ৮ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মালেক মল্লিক : মাসদার হোসেন মামলার শুনানিকালে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তাকে উদ্দেশ করে বলেছেন, সারা বিচার বিভাগ জিম্মি হয়ে আছে। কাজ করতে পারছে না। আপনাকে একটা শব্দ বাদ দিতে বলেছিলাম। পারেননি। একটি শব্দের জন্য বছরের পর বছর কেটে গেছে। দেশের একটি বিভাগ জিম্মি হয়ে থাকবে, এটা হতে পারে না। আপনাদের সুবিধার জন্য খসড়ায় লাল কালি দিয়ে মার্ক করে দিয়েছিলাম। গতকাল সোমবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের নয় বিচারপতির বেঞ্চ থেকে এ মন্তব্য আসে। অন্যান্য বিচারপতিরা হলেন বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার, বিচারপতি মো. নিজামুল হক এবং বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান। গত রোববার মামলাটি শুনানির জন্য কার্য তালিকায় এলে অ্যাটর্নি জেনারেল কোনো অগ্রগতি জানাতে না পারায় বিধিমালা চূড়ান্ত করার বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা লিখিতভাবে জানাতে রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দেয় আপিল বিভাগ। সোমবার অ্যাটর্নি জেনারেল সময় চেয়ে আবেদন করেন। পরে ২৪ নভেম্বরের মধ্যে বিধিমালা চূড়ান্ত করে তা গেজেট আকারে জারি এবং আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত। আদালত আরো বলেন, শেষবারের মতো সময় দিচ্ছি।
গত ৩১ অক্টোবর এক বাণীতে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ বিচার বিভাগের ধীরগতির অন্যতম কারণ। এই অনুচ্ছেদের ফলে অধস্তন আদালতের বিচারকদের পদোন্নতি, বদলি ও শৃংখলামূলক কার্যক্রম সুপ্রিমকোর্টের পক্ষে এককভাবে গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। দ্বৈত শাসনের ফলে বহু জেলায় শূন্যপদে সময়মতো বিচারক নিয়োগ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে বিচারকার্য বিঘœ ঘটে এবং বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি বেড়ে যায়।
গতকাল সকাল ৯টায় আদালতের কার্যক্রম শুরুর পরই অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ৮ সপ্তাহের সময় প্রার্থনা করেন। আপিল বিভাগ বলেন, এর আগে আমরা দুই মাসের বেশি সময় দিয়েছিলাম, এর মধ্যে আপনারা রুল তৈরি করতে পারেননি। আদালত বলেন, আপনি না পারলে বলেন, সারেন্ডার করেন। আমরা দেখছি। যে পিটিশন দিয়েছেন এটা ফলস স্টেটমেনেট। এর কোনো সত্যতা নেই। কবে এ বিধি প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠিয়েছেন তা সাড়ে এগারোটার মধ্যে বলেন। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেনÑ উনিতো দেশের বাইরে। এ মামলায় এর আগে অনেকবার দাঁড়িয়েছি। এটা অনেকটা আসামির মতো।
আদালত বলেন, ১৪ বছর পার হয়ে যাচ্ছে মাসদার হোসেন মামলার আসল জিনিস বাস্তবায়ন হচ্ছে না। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, হবে। এটাও হবে। আদালত বলেন, এমন কিছু বলবেন না। এর মধ্যে দুইবার প্রেসিডেন্টের সাথে আমার দেখা হয়েছে। মন্ত্রী বলতে পারবেন কবে প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠিয়েছেন। অক্টোবরের এ সপ্তাহ বা অমুক তারিখে। এটা অ্যাবসুলেটলি ভেইক। আড়াই মাস হয়ে গেছে কিছু করতে পারলেন না। অ্যাটর্নি জেনারেলÑ কথা হয়েছে। দেখা হয়েছে। আমি নিজেও হাসপাতালে ছিলাম।
আদালতÑএকটি দেশের একটি বিভাগ জিম্মি হয়ে থাকবে, এটা হতে পারে না। আপনাদের সুবিধার জন্য খসড়ায় লাল কালি দিয়ে মার্ক করে দিয়েছিলাম। একজন বিচারককে হাতেনাতে ধরে ফেললে তখন মিনিস্ট্রি বলে প্রেসিডেন্ট অনুমোদনের জন্য পাঠাবে। এভাবে কি চলবে? আর কতদিন অপেক্ষা করবো। বিচার বিভাগ চলছে না। অ্যাটর্নি জেনারেল, লেট আস ট্রাই। সময় দেন আট সপ্তাহ। আদালত-৪টি বিধি করছেন। ১৭০ জন বিচারক বসে বসে আড্ডা দিচ্ছেন। তাদের কোর্ট রুম নেই। একটা ভবন নির্মাণে তিন বছর সময় নেন। পরে বলেন বিদ্যুৎ নেই। আদালত আরো বলেনÑ আমরা রুলস করেছি মাসদার হোসেনের মামলায় দেয়া গাইড লাইনের বাইরেও না। এখানে প্রেসিডেন্টের কথা নেই। বন্ধের দুই মাস পরেও পারলেন না। ২৪ নভেম্বরের মধ্যে গেজেট দাখিল করবেন। একদিকে প্রেসিডেন্টের কথা বলবেন, আবার আইনমন্ত্রীর কথা বলবেন, এভাবে সময় ক্ষেপণ করা যাবে না। আদালত বলেন, শেষবারের মতো সময় দিচ্ছি। এর মধ্যে বিধি চূড়ান্ত করে গেজেট আকারে জারি করবেন।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুরি, নিয়ন্ত্রণ, শৃঙ্খলা বিধান এবং চাকরির অন্যান্য শর্তাবলী) বিধিমালা-২০০৭ অনুযায়ী এখন অধস্তনও আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলা পৃথক বিধি তৈরি না হওয়া পর্যন্ত ১৯৮৫ সালের গভর্নমেন্ট সার্ভিস রুল অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত হবে। ১৯৯৯ সালে মাসদার হোসেন মামলার রায়ের ৭ নম্বর নির্দেশনা অনুযায়ী পৃথক শৃঙ্খলা বিধি তৈরি হয়নি। মাসদার হোসেন মামলার রায় ঘোষণার আট বছর পর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করা হয়। ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেন মামলায় ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেয়া হয়। ওই রায়ের আলোকে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল। সেই শৃংখলাবিধি তৈরি করে গত রোববার আপিল বিভাগকে জানানোর কথা ছিল। তবে অ্যাটর্নি জানাতে পারেনি। গতকাল আদেশের জন্য ছিল। এর আগে গত বছরের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় একটি খসড়া শৃংখলাবিধি তৈরি করে সুপ্রিমকোর্টে পাঠায়। কিন্তু তা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে না হওয়ায় সুপ্রিমকোর্ট কর্তৃপক্ষ কমিটি গঠন করে আলাদা একটি শৃংখলাবিধি তৈরি করেন।



 

Show all comments
  • Anwaruzzaman Kamrani ৮ নভেম্বর, ২০১৬, ২:৪১ পিএম says : 0
    The government donot belive in rules of law and that is why they never apear to to give Juditial Indipendence.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিচার বিভাগ জিম্মি

৮ নভেম্বর, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ