পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : সরকারের দুজন মন্ত্রীকে উচ্চ আদালতে তলবের বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, আমরা এর আগেও বলেছি যে বিচার বিভাগ স্বাধীন। বিচার বিভাগ নিয়ে অহেতুক কোনো বিতর্ক সৃষ্টি করা ও কথাবার্তা বলা জাতির প্রত্যাশা নয়। এটা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগও প্রত্যাশা করে না।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশে (টিসিবি) নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
হানিফ বলেন, বিচার বিভাগ নিয়ে কোনো বিতর্ক হোক, এটা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ চায় না, জাতিও চায় না। আমি আশা করি, অতীতের ভুল শুধরে নিয়ে ভবিষ্যতে বিচার বিভাগ নিয়ে অহেতুক কেউ বিতর্ক সৃষ্টি করবে না। বিচার বিভাগ যেন স্বাধীনভাবে তাদের কাজ করতে পারে, এ ব্যাপারে সবাই সহযোগিতা করবেন।
বিচারাধীন বিষয় নিয়ে দুজন মন্ত্রীর বক্তব্যে সর্বস্তরে বিতর্ক সৃষ্টির বিষয়ে সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, রায়কে কেন্দ্র করেই যদি এই বিতর্কের সূত্রপাত হয়ে থাকে, তাহলে চূড়ান্ত রায় ঘোষিত হওয়ার পর এটা নিয়ে কোনো বিতর্কের সুযোগ থাকল না। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে সরকারের দুজন মন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী গত সোমবার মন্ত্রিসভায় বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। এর মধ্য দিয়ে সরকার ও দলের মনোভাব পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে জামায়াতের নেতা মীর কাসেম আলীর ফাঁসি বহাল থাকার বিষয়ে মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, এই রায় জাতির প্রত্যাশিত রায়। জাতি প্রত্যাশা করেছিল যে, শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হোক। যে রায়টা ট্রাইব্যুনাল দিয়েছেন, সেটা উচ্চতর আদালত বহাল রেখেছেন। এই রায়ে জাতি সন্তুষ্ট। আমরা আশা করি, এই রায় দ্রুত বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত হওয়ার পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে।
এদিকে একাত্তরে গণহত্যার দায়ে আলবদর বাহিনীর তৃতীয় শীর্ষনেতা মীর কাসেম আলীর ফাঁসির আদেশ বহাল থাকায় রাজপথে আনন্দ মিছিল করেছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ। রায়কে স্বাগত জানিয়ে আনন্দ মিছিল করেন আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরাও।
মঙ্গলবার রায় ঘোষণার পর ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে আনন্দ মিছিল বের হয়ে নগরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে আবার দলীয় কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়। এ সময় দলটির নেতারা বলেন, এ রায়ের মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, আর সমস্ত ষড়যন্ত্র পরাজিত হয়েছে।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, কৃষক লীগ, আওয়ামী ওলামা লীগ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, রমনা থানা মহিলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা পৃথক পৃথক আনন্দ মিছিল বের করেন। এ সময় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুল হক, উপ-দফতর সম্পাদক সহিদুল ইসলাম মিলন, মোঃ জামাল উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর সর্বোচ্চ আদালতে বহাল রাখা ফাঁসির রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আনন্দ মিছিলপূর্ব সমাবেশে তিনি এ দাবি জানান।
মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, আজ বাংলাদেশের সকল শহীদ পরিবারের সদস্যরা ও সকল জনগণ শোকরিয়া আদায় করছে। বাংলার মানুষ ন্যায়বিচার পেয়েছে। এই কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেমের ফাঁসির রায় ঠেকাতে জামায়াত-শিবিরের সকল প্রকার প্রয়াস আজ ব্যর্থ হয়েছে। তিনি দ্রুত এ রায় কার্যকরের দাবি জানান। পরে নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আনন্দ মিছিল করেন।
শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু কামনা করে ওলামা লীগের দোয়া
অপরদিকে মীর কাসেম আলীর রায় ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু কামনা করেছে ওলামা লীগ। ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের তৃতীয় তলায় দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন ওলামা লীগের সভাপতি ইলিয়াছ হোসাইন বিন হেলালী। এ সময় মিছিলে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহসভাপতি খাজা হামিদ চিশতি, মাওলানা মিজানুর রহমান, হাফেজ খলিলুর রহমান, মাওলানা আজিজ খান, হোসাইন মোহাম্মদ ফরিদ, ডেমরা ওলামা লীগের সভাপতি আমির হোসেন, সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন প্রমুখ।
হেলালী বলেন, এ রায়ের মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং পাকিস্তানি দোসরদের সমস্ত ষড়যন্ত্র পরাজিত হয়েছে।
এর আগে একাত্তরে গণহত্যার দায়ে আলবদর বাহিনীর তৃতীয় শীর্ষনেতা মীর কাসেম আলীর ফাঁসির আদেশ বহাল থাকায় সকালে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে আনন্দ মিছিল ও সমাবেশ করে আওয়ামী ওলামা লীগ।
এর আগে সোমবার ভোর থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি রাজধানীর পল্টন, গুলিস্তান, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী, ফার্মগেট, মিরপুর, মহাখালী, রামপুরাসহ বিভিন্ন স্থানে সতর্ক অবস্থানে ছিলেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বেলা সাড়ে ১১টায় ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার জন্য করা রিভিউ আবেদন উচ্চ আদালত খারিজ করে ফাঁসি বহাল রাখলে বিভিন্ন স্থানে আনন্দ মিছিল করে ক্ষমতাসীন দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এই রায়ে বিভ্রান্তি দূর হয়েছে
মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদ- আপিল বিভাগে বহাল রাখায় ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠিত ও বিভ্রান্তি দূর হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ-১ মঙ্গলবার সকালে এ রায় বহাল রাখেন।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় রাশেদ খান মেনন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আমি মনে করি এ রায়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। যুদ্ধাপরাধের ভিত্তিতে যে বিচার চলছে তার ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতাও এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হলো। এ নিয়ে মাঝখানে যেসব বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছিল এর মাধ্যমে সেটাও দূর হয়ে গেল। আমি মনে করি, আমাদের সবারই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে একেবারে একনিষ্ঠ থেকে একে সমর্থন করে যেতে হবে। তিনি বলেন, আমরা আশা করি এ রায় শিগগিরই কার্যকর হবে।
এদিকে বিচারাধীন কোনো বিষয় নিয়ে বক্তব্য না দিতে সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর ফাঁসির দ- বহাল রাখার পর প্রতিক্রিয়া জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
তিনি বলেন, সবার কাছে বিনীত অনুরোধ থাকবে, সুপ্রিম কোর্ট একটি প্রতিষ্ঠান। এখানকার বিচারপতিগণ সেই প্রতিষ্ঠানের অংশ। যখন আদালতের কোনো বিষয় তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে, সেসব বিচারাধীন বিষয় নিয়ে বক্তব্য দেওয়া ঠিক নয়। এতে এই প্রতিষ্ঠানের সম্মান ক্ষুণœ হয়। এই প্রতিষ্ঠানের সম্মান ক্ষুণœ হলে দেশের সম্মান ক্ষুণœ হয়।
আরেক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, দেশের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বর্তমান সরকারের আমলে দৃঢ় হয়েছে। বিচার বিভাগে তারা কোনো হস্তক্ষেপ করে না বা চাপ দেয় না। তবে দুই মন্ত্রীকে আদালতের ‘রুল-নিশি’ জারির বিষয়ে আইনমন্ত্রী কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তিনি বলেন, বিচারাধীন বিষয় নিয়ে তিনি আগেও কখনো মন্তব্য করেননি, এখনও করবেন না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।