Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফরিদপুর-৪ আসনে বিএনপির একক প্রার্থী আওয়ামী লীগে বিভক্তি

নাজিম বকাউল ফরিদপুর থেকে | প্রকাশের সময় : ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ফরিদপুর-৪ আসন (ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন) তিন উপজেলা নিয়ে পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদ ঘেঁষে এ আসন গঠিত। এ আসনে ২৩টি ইউনিয়ন রয়েছে। তার মধ্যে ১০টি ইউনিয়ন চরাঞ্চলে হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব একটা ভালো না। প্রায় সাড়ে তিন লাখ ভোটারের দ্বারে দ্বারে পৌঁছাতে অনেক পরিশ্রম হচ্ছে প্রার্থীদের। এই আসনটি বিগত দিনে বরাবর আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। গত নির্বাচনে ফরিদপুরের চারটি আসনের মধ্যে এই একটি মাত্র আসনে নির্বাচন হয়েছিল। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারিয়েছে এক আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে। সেই থেকে এই আসনে আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। বর্তমানে তা আবার তিন ভাগের পথে। সম্প্রতি ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিও প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। পরে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বহিষ্কার করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের বিভক্তিতে এবার শক্তিশালী হয়ে উঠেছে বিএনপিবিএনপির একক প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। তিনি হলেন কেন্দ্রীয় সেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সভাপতি ও ভাঙ্গা উপজেলা বিএনপি সভাপতি খন্দকার ইকবাল হোসেন সেলিম। আওয়ামী লীগের মাঠে রয়েছেন প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ। তবে শেখ হাসিনার আত্মীয় ও বর্তমান এমপি নিক্সন চৌধুরীও আওয়ামী লীগ বলে দাবি করেন। এলাকার ভোটারদের সাথে কথা হলে তারা জানান, এ আসনে মূল ভোটযুদ্ধ হবে ত্রিমুখী। বিএনপির একক প্রার্থী হওয়ায় এগিয়ে রয়েছেন তৃণমূল নেতা খন্দকার ইকবাল হোসেন সেলিম ও আওয়ামী লীগের কাজী জাফরউল্লাহ, বর্তমান এমপি মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন।
নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্যাপক গণসংযোগ করছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ। তিনিই দলের মনোনয়ন পেতে পারেন বলে মনে করছেন ভোটাররা। তিনি নিয়মিত এলাকায় আসছেন, গণসংযোগ করছেন। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছেন। এই আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে তিনি ভালো অবস্থানে আছেন। গত নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হয়েছেন মুজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী। তিনি শেখ হাসিনার আত্মীয় বলে তিনিও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে পারেন।
কাজী জাফরউল্লাহ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী নিক্সন চৌধুরী আওয়ামী লীগের একই ঘরানার লোক। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের ভোট দুই ভাগ হচ্ছে। অন্যদিকে কাজী জাফরউল্লাহর ছোট ভাই কাজী হেদায়েতউল্লাহ সাকলানও প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
ভাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক ফজলে সোবাহান শামীম বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে জোরে মাঠে নেমেছেন সব বিএনপির নেতাকর্মী, তাদের একক প্রার্থী। এ ছাড়া খন্দকার সেলিম এলাকায় স্বচ্ছ ইমেজের মানুষ হিসেবে পরিচিত লাভ করেছেন। তৃণমূল থেকেই মাঠ তৈরি করছেন তিনি।
এই আসনে প্রচার-প্রচারণায়ও এগিয়ে রয়েছেন তৃণমূণ নেতা ভাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সভাপতি শিল্পপতী আলহাজ খন্দকার ইকবাল হোসেন সেলিম। তিনি বিএনপির একক প্রার্থী হওয়ায় তিন উপজেলার সব বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা তার সাথে রয়েছেন বলে জানা গেছে। তিনি এলাকার ছেলে, তার বাড়ি ভাঙ্গা উপজেলা সদরে। তার এলাকায়ও ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। গত নির্বাচনেও তার প্রস্তুতি ছিল। বিএনপির নির্বাচনে না যাওয়ায় তার নির্বাচন করা হয়নি। পরে ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাচন করে তার প্রমাণ দিয়েছেন। এক উপজেলা থেকে তিনি প্রায় ৩০ হাজার ভোট পেয়েছেন। তিনি এবার বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থী। সব নেতাকর্মী তার সাথে রয়েছেন। তিনি এক উপজেলা নির্বাচন করে বিএনপির পক্ষে যত ভোট পেয়েছেন, বিগত দিনে এ আসনে কোনো বিএনপির মনোনিত প্রার্থীও এত ভোট পাননি। তিনি যেভাবে মাঠ তৈরি করছেন, তার ভবিষ্যৎ জ্বলজ্বল করছে।
এলাকার বিএনপির নেতারা মনে করেন, তিন উপজেলায় বিএনপিরও বেশ ভোট রয়েছে। গত নির্বাচনে তারা না থাকায় তাদের সব ভোট স্বতন্ত্র প্রার্থী পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। এবার তারা নির্বাচন করলে তাদের ভোট বিএনপির মনোনিত প্রার্থী পাবেন।
মিষ্টভাষী সাদালাপি নেতা হলেন খন্দকার সেলিম। তিনি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তিনি দীর্ঘদিন মানুষের পাশে থেকে দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। এলাকায় তিনি সমাজিক কর্মকান্ড করেন দলমতের ঊর্র্ধ্বে উঠে। তিনি মসজিদ গড়েন, মন্দিরে অর্থ দেন। এলাকার যে কোনো প্রান্তে কারো ঘরবাড়ি আগুনে পুড়লে সেখানে হাজির হন সেলিম। বসতবাড়ি নির্মাণে সহায়তা করেন। নির্বাচনী এলাকার মসজিদ, মন্দির, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেগে আছে তার হাতের ছোঁয়া। এলাকার বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ান তিনি আপনজনের মতো। ইতোমধ্যেই নির্বাচনী এলাকায় কর্মীবান্ধব নেতার খ্যাতি পেয়েছেন তিনি। তিনি নিয়মিত এলাকায় আসছেন, গণসংযোগ করছেন। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছেন।
দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে তিনি শতভাগ আশাবাদী। খন্দকার ইকবাল হোসেন সেলিম বলেন, দেশে নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হলে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। আর সাধারণ ভোটারা ভোট দিতে পারলে সারা দেশে বিএনপির প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয় লাভ করবে। দেশের জনগণ ভোট দিতে পারলে ভোটের মাধ্যমে এই সরকারের পতন ঘটাবে। তিনি আরো বলেন, তিনটি উপজেলায় যে পরিমাণে বিএনপির নেতাকর্মী রয়েছে, তারা সবাই আমার সাথে রয়েছেন। দলীয় মনোনয়ন পেলে আমাকে জনগণ তাদের মূল্যবান ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন। এ ব্যাপারে জনগণের প্রতি আমার শতভাগ আস্থা আছে।



 

Show all comments
  • সালাউদ্দিন ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:১৮ এএম says : 0
    নির্বাচনের আগে ওসব ঠিক হয়ে যাবে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আওয়ামী লীগে


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ