Inqilab Logo

বুধবার ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রার্থী বাছাইয়ে আওয়ামী লীগে অনৈক্য বিএনপিতে ধীরগতি

প্রকাশের সময় : ৮ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কামরুজ্জামান টুটুল, হাজীগঞ্জ (চাঁদপুর) থেকে
ঘনিয়ে আসছে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। সেই আলোকে উপজেলার মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে চলছে মিটিং-সিটিং, আঁতাত-কোন্দল আর গোপন অর্থের লেনদেনসহ যত কৌশল রয়েছে তার সবই প্রয়োগ হচ্ছে প্রার্থীতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে। প্রার্থীতা ঘোষণার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ স্থানীয় বা উপজেলা এমনকি জেলা কমিটি কোন প্রার্থীর নাম ঘোষণা দেয়ার ক্ষমতা রাখেন, আর বিএনপি সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নগুলোতে নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রার্থীতা ঘোষণা দিতে শুরু করেছেন অত্যন্ত ধীর গতিতে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আওয়ামী লীগ থেকে উপজেলার যে কয়টি ইউনিয়ন দলীয় প্রার্থীতা দেয়ার ক্ষেত্রে সাধারণ সভা ডাকা হচ্ছে এর মধ্যে কোন ইউনিয়নে এখন পর্যন্ত এককভাবে কারো নাম ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি। রবং অন্যবার যেখানে আওয়ামী লীগের ২/৩ জন প্রার্থী ছিলেন সেখানে এবার আওয়ামী লীগের ৫ থেকে ৮ জনের নামের তালিকা চলে আসছে। এমন কি এ সকল তালিকা কোনভাবে কাট-ছাঁট করতে পারছেন না দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের শীর্ষনেতারা। ফলে বাধ্য হয়ে প্রতিটি ইউনিয়নে প্রার্থীতার নামের ফর্দ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। উপজেলার ইউনিয়নগুলোতে আওয়ামী লীগের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকগণ প্রার্থী হচ্ছেন বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে। কিন্তু এই সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকগণের সাথে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে বহু আগ থেকেই। কর্মীদের সাথে নেতার দূরত্ব থাকার কারণে কর্মীরা নির্বাচনে নেতার থেকে একেবারে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে দলের ভিতরেই বিকল্প প্রার্থী তৈরি করে নিয়েছে। এ কারণে ইউনিয়নগুলোতে এককপ্রার্থীর তালিকা তৈরি করা শীর্ষ আওয়ামী লীগের জন্য চ্যালেজ্ঞ হয়ে দাঁড়িয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একক প্রার্থী নির্ধারণে আওয়ামী লীগের প্রধান বাঁধা হচ্ছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, চাওয়া-পাওয়ার হিসেব, দল ক্ষমতায় থেকে ও ত্যাগীদের মূল্যায়ন না করা, ইউনিয়নগুলোতে বিশেষ করে সভাপতি সাধারণ সম্পাদকগণের একচ্ছত্র আধিপত্ত বিস্তার। আবার দল থেকে ২/১জন বাদে অন্য সকল নেতাকর্মীরা সুবিধাবঞ্চিত হওয়ার বিষয়গুলো সামনে চলে আসছে আর সেই সকল ক্ষোভ থেকে ইউনিয়নগুলোতে একের অধিক প্রার্থীর নাম থেকেই যাচ্ছে। অনেক ইউনিয়নে সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকগণ তাদের পছন্দের লোকদেরকে একের অধিক পদ ও সুবিধা দিয়ে রেখেছেন। দলের অন্যদেরকে মূল্যায়ন না করার কারণে একক প্রার্থিতা নির্ধারণে এবং আসছে নির্বাচনের দিন সেই ক্ষোভ মাথায় রেখে ভোট কেন্দ্রে যাবেন বঞ্চিত বা ত্যাগী নেতাকর্মীরা। বাস্তবতায় দেখা যায়, উপজেলা বাকিলা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ থেকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৮ জনের নাম এসেছে দলীয় মনোনয়নের জন্য। অনরূপভাবে উপজেলার ৫নং সদর ইউনিয়নে ১১ জন দলীয় মনোয়নয়ন চেয়েছেন। এখানে প্রথমে সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলাম মীরের নাম পাঠানোর চেষ্টা করা হয়েছে হাজীগঞ্জ বাজারের একটি রেস্টুরেন্টে বসে। সেই একক নামের বিরোধিতা করেন দলীয় সমর্থন পেতে মরিয়া অপর ৬ প্রার্থী। এমনকি এক সভায় এই ৬ জন এক হয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক সফিককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। পরে আবার একক প্রার্থী নির্ধারণের জন্য আরেক সাংগঠনিক সভা গত শুক্রবার ডাকা হলে এই সভায় আরো নতুন নাম মিলিয়ে দলের মনোনয়ন চান মোট ১১ জন। এই ১১ জনকে কেউ এক করতে পারবে কিনা এমন সম্ভাবনা একেবারে ক্ষীণ হয়ে দেখা দিয়েছে। একইভাবে উপজেলার ৬নং বড়কুল ইউনিয়নে ১৯ জন, কালোচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নে ১৩ জন, ১০নং গর্ন্ধবপুর ইউনিয়নে ৫ জন দলীয় মনোনয়ন পেতে মরিয়া হয়ে পড়েছেন। এভাবে প্রতিটি ইউনিয়নে চলছে মনোনয়নের দৌড়ঝাঁপ। এ সংবাদ লিখা পর্যন্ত ঐক্যের বিষয়ে কোন ইউনিয়নেই একক প্রার্থীর নাম এখন পর্যন্ত আসেনি বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। আর এ সবের সমাধান কিভাবে সম্ভব সেই হিসেব মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে আওয়ামী লীগের দলীয় হাইকমান্ড। অপরদিকে উপজেলা বিএনপি ও দায়িত্বপ্রাপ্তরা ধানের শীষ প্রতীকে দলীয় মনোনয়ন দিতে ধীর গতি অবলম্বন করছেন বলে বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে। এই ধীর গতি অবলম্বন করা মানে বিএনপির কোন্দল চাপিয়ে রাখার এক কৌশল বলে ইনকিলাবকে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা। শীর্ষ এই নেতা বলেন, তাদের দলীয় প্রার্থিতা চূড়ান্ত করে রাখা হয়েছে যা কেন্দ্রে পাঠানো হবে। উপজেলা থেকে যে তালিকা কেন্দ্রে পাঠানো হবে কেন্দ্র সেই তালিকা চূড়ান্ত করে ফের উপজেলায় পাঠাবেন এর পরেই চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করবে উপজেলা বিএনপি। অন্যদিকে বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে স্থানীয় বিএনপি সাংগঠনিকভাবে এককভাবে প্রার্থীর তালিকা ঘোষণা দিতে সক্ষম হয়েছে। এর মধ্যে ৩ নং কালোচোঁ উত্তরে  জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু সায়েম মিয়াজী, ৪ নং কালোচোঁ দক্ষিণে গোলাম মোস্তফা স্বপন, ৫ নং সদর ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান মামুনুর রহমান মজুমদার, ৭ নং বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নে নূরুল আমিন হেলাল, ১০নং গর্ন্ধব্যপুর ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেন বেলাল, ১১নং হাটিলায় মাসুদ আলম খাঁন ও ১২নং দ্বাদশগ্রাম ইউনিয়নে আনোয়ারুল ইসলাম বাবুলকে স্ব-স্ব ইউনিয়ন দলীয় মনোনয়ন দেবার জন্য একক প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করে দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকগণের স্বাক্ষরে চূড়ান্ত প্রার্থীর নামের সুপারিশ করে ইতিমধ্যে উপজেলায় পাঠনো হয়েছে। আবার ইউনিয়ন থেকে দলীয় সিদ্ধান্তে যে সকল প্রার্থীর নাম দেয়া হয়েছে সেই নামগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে তাতে সুপারিশ করে কেন্দ্রে পাঠানো হবে বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা বিএনপির নীতিনির্ধারক এক নেতা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রার্থী বাছাইয়ে আওয়ামী লীগে অনৈক্য বিএনপিতে ধীরগতি
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ