পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রফিকুল ইসলাম সেলিম : ‘বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতি’ ইস্যুতে চট্টগ্রামে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে গৃহবিবাদ চরমে উঠেছে। হাজার কোটি টাকার মানহানির মামলা, সংবাদ সম্মেলন, ‘থুথু’ নিক্ষেপ, বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশের পর নেতারা জড়িয়ে পড়েছেন বাকযুদ্ধে। পক্ষকালের বেশি সময় ধরে চলা এইসব পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি থামার কোনো আলামত নেই। বরং দিনে দিনে এই কলহ-বিবাদ বিস্তৃত হচ্ছে। তৃণমূল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে গৃহবিবাদের উত্তাপ।
দৃশ্যত এই বিরোধের কেন্দ্রে একদিকে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, অন্যদিকে নগরীর বন্দর-পতেঙ্গা আসনের সংসদ সদস্য এম এ লতিফ। তবে ওই দুজনের পক্ষে-বিপক্ষে মহানগর জেলা নেতাদের অবস্থান নেয়ায় দলে বিভক্তি ফের প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। দলীয় কলহ-বিবাদ মহানগরের গ-ি ছাড়িয়ে জেলা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। জানা গেছে, চট্টগ্রামে শাসক দলের নেতায় নেতায় দ্বন্দ্ব-কলহে বিরক্ত দলের হাইকমান্ডও। সার্বিক পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন দলের নীতিনির্ধারকেরা। এখানকার রাজনীতি সচেতন মহলেরও তীক্ষè দৃষ্টি এই বিরোধের গতিপ্রকৃতির ওপর।
সর্বশেষ গতকাল (বৃহস্পতিবার) প্রকাশ্য জনসভায় ‘হত্যার হুমকি’ দেওয়ার অভিযোগে অভিযোগ করে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে নগরীর ১৬ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে লিখিত কপি পাঠিয়েছেন সংসদ সদস্য এম এ লতিফ। ঢাকা থেকে ই-মেইলে নগরীর ১৬ থানায় এই জিডি পাঠান তিনি। জিডির আবেদনে এম এ লতিফের স্বাক্ষর আছে। জিডি পাওয়ার কথা জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার মোহা. আব্দুল জলিল ম-ল। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এমপি সাহেবের জিডি’র কপি পেয়েছি। আমরা যাচাই-বাছাই করে একটা সিদ্ধান্ত নেব। তবে সন্ধ্যায় নগরীর কোতোয়ালি, বন্দর ও ডবলমুরিং থানায় যোগাযোগ করা হলে এই ধনের কোনো জিডি তখনো এন্ট্রি হয়নি বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তারা।
জিডির আবেদনে এম এ লতিফ লিখেছেন, ১৫ ফেব্রুয়ারি নগরীর লালদিঘি ময়দানে নাগরিক মঞ্চ আয়োজিত এক সমাবেশে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে চলাফেরায় সতর্ক করেন। ‘মহিউদ্দিন এ-ও বলেছেন, যুবসমাজ কিংবা ব্যক্তিবিশেষ আমাকে আক্রমণ করতে পারে। এতে আমার মৃত্যুও হতে পারে। আমার মৃত্যুর জন্য তাকে অর্থাৎ মহিউদ্দিন চৌধুরীকে আসামি করার জন্যও তিনি ঘোষণা দেন।’ মহিউদ্দিন চৌধুরী ও তার অনুসারীদের প্রকাশ্য হুমকির কারণে লতিফ জীবননাশের আশংকা করছেন বলে জিডির আবেদনে উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমাকে প্রতিরোধসহ হত্যার নির্দেশনা দিয়ে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী তার অনুসারীদেরকে আমার পেছনে লেলিয়ে দিয়ে হত্যার দায়দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে আমার জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। মহিউদ্দিন চৌধুরী ও তার অনুসারীদের অব্যাহত হুমকির মুখে আমি ও আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছি।’
গত ৩০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম-১১ আসনের (বন্দর, হালিশহর ও পতেঙ্গা) এমপি এম এ লতিফ বন্দরনগরীর বিভিন্ন স্থানে ফেস্টুন প্রদর্শন করেন। অভিযোগ উঠে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির মুখম-লের সঙ্গে লতিফের নিজের শরীরজুড়ে দিয়ে তৈরি করা হয় ফেস্টুনগুলো। এ ঘটনায় চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগে তোলপাড় শুরু হয়। লতিফের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় তোলেন আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মীরা। প্রতিবাদী জনতার ব্যানারে যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা লতিফের ছবিতে জুতা-থুথু নিক্ষেপ করে এবং মানববন্ধন ও সমাবেশ করে প্রতিবাদ জানায়। নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী লতিফের বিরুদ্ধে প্রথমে মামলা করার হুমকি দেন। তিনি তাকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠাবেন বলে জানান। এর মধ্যে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতারা লতিফের বিরুদ্ধে হাজার কোটি টাকার মানহানি ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনে মামলা করেন। মামলা চারটির তদন্ত করছে পুলিশ।
অন্যদিকে এম লতিফ দুই দফায় সংবাদ সম্মেলন করে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। তিনি দাবি করেন বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতির সাথে তিনি জড়িত নন। ফ্যাস্টুন তৈরির দায়িত্বে থাকা ডিজাইনারের ভুলে এমনটি হয়েছে। এক সংবাদ সম্মেলনে ওই ডিজাইনারকেও হাজির করা হয়। ডিজইনার তার দোষ স্বীকারে বলেন, এই ভুল ইচ্ছাকৃত ছিল না। মহানগর আওয়ামী লীগের কয়েজন নেতা লতিফের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ছবি বিকৃতি লতিফ-বিরোধীদের চক্রান্ত বলেও পাল্টা অভিযোগ করেন। এরপরও বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতির অভিযোগ থেকে মুক্তি পাচ্ছে না এমএ লতিফ। বুধবার তার পাসপোর্ট জব্দ করার আবেদন করেছেন তার বিরুদ্ধে করা মামলার বাদি সাবেক যুবলীগ নেতা রবি। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন এমপি লতিফ বিদেশে পালাতে পারেন। আদালত এবিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেন।
এর পাশাপাশি লতিফের বিরুদ্ধে মানববন্ধন, সভা-সমাবেশ চলছেই। ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘ভালবাসা দিবসে’ ছাত্রলীগ ছবি বিকৃতির প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধুর আসল প্রতিকৃতিতে ভালবাসার ফুল দিয়ে দিবসটি পালন করে। ১৫ ফেব্রুয়ারি লালদীঘি ময়দানে এক সমাবেশে মহিউদ্দিন চৌধুরী লতিফকে গ্রেফতারে ১৫ দিনের আল্টিমেটাম দেন। তিনি লতিফকে ‘কুলাঙ্গার’ আখ্যা দিয়ে তাকে চট্টগ্রামে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। এছাড়া লতিফকে চট্টগ্রামে চলাফেরায় সাবধান হবার পরামর্শ দেন। পর দিন লতিফ লালদীঘি মাঠে দেয়া মহিউদ্দিন চৌধুরী ও তার স্ত্রী মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী হাসিনা মহিউদ্দিনের বক্তেব্যের প্রতিবাদ জানান। বুধবার লতিফের পক্ষ নিয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরী বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন চট্টগ্রামে সরকার দলীয় সাত এমপি।
তারা মহিউদ্দিনের চৌধুরীর বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়ে লতিফকে নির্দোষ দাবি করেন। বিবৃতিদাতারা হলেন, চট্টগ্রাম ১০ আসনের সংসদ সদস্য ও নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ডা. আফছারুল আমীন, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী (চট্টগ্রাম-৬), শামসুল হক চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১২), মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১৪), মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১৬), দিদারুল আলম (চট্টগ্রাম-৪) ও মাহফুজুর রহমান (চট্টগ্রাম-৩)। লালদীঘির সমাবেশে দেয়া বক্তব্যে মহিউদ্দিন চৌধুরী দলীয় ও রাজনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্গন করেছেন এমন অভিযোগ লতিফের পক্ষ নেয়া ওই সাত এমপির। মহিউদ্দিন চৌধুরী লতিফকে গ্রেফতারের আল্টিমেটাম দেওয়ার দুই দিনের মাথায় ওই সাত এমপি লতিফের পক্ষে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেন।
একই দিন মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রামে লতিফকে যেখানে পাওয়া যাবে সেখানে প্রতিরোধের ঘোষণা দেন। বুধবার আগ্রাবাদে যুবলীগের এক সমাবেশে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী বর্ণচোরা ও কুলাঙ্গারদের দাম্ভিকতার দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেয়া হবে। বঙ্গবন্ধুর ছবিকে বিকৃত করে লতিফ শাক দিয়ে মাছ ডাকার চেষ্টা করলেও তার বর্তমান ও অতীত কর্মকা- জনগণের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, হাইব্রিড আওয়ামী লীগাররা আখের গোছাতে তৎপর। এদের অনেকেই চোরাকারবারী ও মাদক ব্যবসায়ী। অবৈধভাবে তারা বিপুল পরিমান অর্থবৃত্তের মালিক হয়েছেন। এরা ক্ষমতার অপব্যবহারই শুধু করেননি। মহান মুক্তযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে তলে তলে অবস্থান নিয়েছেন। তাদেরকে চিহ্নিত করে বিচারের কাঠগড়া দাঁড় করিয়ে প্রাপ্য শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।