Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগে গৃহবিবাদ তুঙ্গে

প্রকাশের সময় : ৩০ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সভাপতির বিরুদ্ধে দলকে কলঙ্কিত করার অভিযোগ প্রতিমন্ত্রীর
চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগে গৃহবিবাদ ফের তুঙ্গে উঠেছে। কোন্দলের জেরে জেলা, উপজেলা, পৌরসভা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত দ্বিধা-বিভক্ত নেতাকর্মীরা। এই বিরোধের একদিকে রয়েছেন জেলা সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, অন্যদিকে ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ।
সম্প্রতি জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে আওয়ামী রাজনীতিকে ‘কলঙ্কিত’ করার অভিযোগ আনেন প্রতিমন্ত্রী জাবেদ। মোছলেম উদ্দিনের নিজ উপজেলা বোয়ালখালীর এক দলীয় সভায় মনোনয়ন বাণিজ্য করে তিনি ‘মোছলেম সওদাগর’ উপাধী পেয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী। দলীয় সভায় প্রকাশ্যে দলের জেলা সভাপতির তীব্র সমালোচনা করায় খুশি জাবেদের সমর্থক নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ মোছলেম উদ্দিন ও তার অনুসারীরা। এর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হিসাবে দলের দুই অংশের মধ্যে দূরত্ব আরও বাড়ছে। কোন কোন এলাকায় দুই পক্ষ এখন মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে।
দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকের সাথে কথা বলে জানা যায়, চলমান বিরোধের নেপথ্যে রয়েছে ক্ষমতার হালুয়া-রুটির ভাগাভাগি। দীর্ঘদিন দল ক্ষমতায়, এ অবস্থায় কারা কি সুবিধা পেয়েছে, আর কারা পায়নি তা নিয়েই মূলত দ্বন্দ্ব। তবে এই কলহ বিবাদ চরমে উঠে বিগত পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচনে মনোনয়নকে ঘিরে।
জেলা সভাপতি মোছলেম উদ্দিনের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে দলের বাইরের লোক এমনকি মাদক ব্যবসায়ী, খুনের আসামি এবং বিরোধী দলের সমর্থকদের কাছেও ‘নৌকা’ বিক্রির অভিযোগ উঠে। মনোনয়ন বিরোধ নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। নালিশ করা হয় দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে।
দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা জানান, মনোনয়ন বাণিজ্যে মাধ্যমে যারা দলের টিকিটে চেয়ারম্যান হয়েছেন তারা এখন দলের নেতাকর্মীদের চিনেন না। তারা নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত। আর এই অবস্থার জন্য জেলা সভাপতিকে দায়ী করেন তারা। জেলা সভাপতির উপর ক্ষুব্ধ দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। প্রতিটি এলাকায় জেলা সভাপতি বিরোধীরা জাবেদের পক্ষ অবস্থান নিয়েছেন। এতে করে জেলা থেকে ইউনিয়ন- দলের ভেতর দুটি গ্রুপ এখন মুখোমুখি।
চট্টগ্রামের পটিয়া, আনোয়ারা, বোয়ালখালী, বাঁশখালী, চন্দনাইশ, লোহাগাড়া ও সাতকানিয়া উপজেলা এবং নগরীর কর্ণফুলী থানা নিয়ে আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা গঠিত। দক্ষিণ জেলার আনোয়ারা উপজেলা ও নগরীর কর্ণফুলী থানা নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম আসন-১৩-এর এমপি ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও দক্ষিণ জেলার দীর্ঘদিনের সভাপতি মরহুম আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর পুত্র।
রাজনীতির চেয়ে ব্যবসায় নিয়ে ব্যস্ত থাকা জাবেদ পিতার মৃত্যুর পর আনোয়ারা আসনে উপ-নির্বাচনে বিজয়ী হন। বিগত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনেও তিনি একই আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে ভূমি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর মৃত্যুর পর জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মোছলেম উদ্দিন আহমেদকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হয়। আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর সময়েও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগে অভ্যন্তরীণ কোন্দল ছিল। ওই কোন্দলের একদিকে ছিলেন বাবু, অন্যদিকে ছিলেন মরহুম জাফর আহমদ চৌধুরী। বাবু গ্রুপ আর জাফর গ্রুপের মধ্যে বিরোধ ছিল চরমে। বিরোধের জের ধরে খুনোখুনির মতো ঘটনাও ঘটেছে অনেক।
তবে আখতারুজ্জামান বাবুর সাথে মোছলেম উদ্দিনের কোন বিরোধ ছিল না। কিন্তু বাবুর মৃত্যুর পর তার পুত্রের সাথে বিরোধে জড়ান মোছলেন উদ্দিন। মাত্র চার বছরে তাদের মধ্যে বিরোধ চরমে উঠে। বোয়ালখালীর ওই সভায় জাবেদ বলেন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ যখন গঠিত হয় তখন দলকে সুসংগঠিত করা হবে এই আশায় বুক বেঁধে ছিলেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী পরিবারের নেতা-কর্মীরা।
কিন্তু রাজনীতির সব ধারাকে উপড়ে ফেলে এখানে মনোনয়ন বাণিজ্য এবং টাকা নিয়ে মাদক সম্রাট, ডাকাত, চোর, চাঁদাবাজদের পদ-পদবী দেয়ার বাণিজ্য করছেন দক্ষিণ জেলার সভাপতি। এভাবে তিনি দক্ষিণ চট্টগ্রাম তথা আওয়ামী রাজনীতিকে কলঙ্কিত করেছেন।
শুক্রবার জাবেদের ওই বক্তব্যে ক্ষুব্ধ মোছলেম উদ্দিন আহমেদ ও তার সমর্থকরা। তবে বিষয়ে মোছলেম উদ্দিন কোন প্রতিক্রিয়া জানাননি। তার অনুসারীরা জানান বিষয়টি তিনি দলের হাইকমান্ডের নজরে এনেছেন। মোছলেম উদ্দিনের সমর্থকরাও জাবেদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেন। তারা বলেন, তিনি নিজ এলাকায় দলের লোকজনদের বাদ দিয়ে তার আত্মীয়-স্বজনদের সরকারি সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছেন। এনিয়ে সেখানেও বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি বিরোধের জেরে প্রতিমন্ত্রীর বাসায় দুই পক্ষ মারামারিতে লিপ্ত হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগে গৃহবিবাদ তুঙ্গে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ