Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আগাম নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে

| প্রকাশের সময় : ১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিগত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই দেশে একটি মধ্যবর্তি অথবা আগাম নির্বাচনের সম্ভাবনার কথা বেশ জোরেশোরে আলোচিত হচ্ছিল। যদিও সরকারের সাথে সংশ্লিষ্টরা পূর্নমেয়াদ ক্ষমতায় থাকার ব্যাপারেই তাদের প্রত্যয় ঘোষণা করে আসছেন। সংবিধান অনুসারে ২০১৮ সালের শেষদিকে অথবা ১৯ সালের জানুয়ারীতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও এবার খোদ প্রধান নির্বাচন কমিশনারই একটি আগাম নির্বাচনের জন্য নিজেদের প্রস্তুতির কথা জানালেন। উল্লেখ্য, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন গত জুলাই- আগস্টমাস ব্যাপী নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, নির্বাচন পর্যবেক্ষক, গণমাধ্যম প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিদের সাথে সংলাপ করে। এসব সংলাপে অংশগ্রহনকারিরা একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যে সুপারিশমালা ও দাবীদাওয়া পেশ করেছিল তা’ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কোন সুস্পস্ট অবস্থান এখনো জানা যায়নি। নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা, সংসদ ভেঙ্গে দেয়া, নির্বাচনে মেজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েন, বিরোধিদলের নেতাকর্মীদের হয়রানিমূলক মামলা থেকে অব্যাহতি, সব দলের সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার মত দাবীগুলো পুরণে সরকারের বা নির্বাচন কমিশনের অবস্থান এখনো পরিস্কার নয়। একটি অংশগ্রহণমূলক ও অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরীর জন্য প্রধান রাজনৈতিকদলগুলোর মধ্যকার দূরত্ব ও মতপাথর্ক্য দূর করতে রাজনৈতিক সংলাপ ও সমঝোতার কোন বিকল্প নেই। সংলাপ, সমঝাতা ও মতপার্থক্য জিইয়ে রেখেই আগাম জাতীয় নির্বাচনের যে কোন উদ্যোগ দেশে আবারো একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরী করতে পারে।
বেশীরভাগ নিবন্ধিত রাজনৈতিকদল ও জোটকে নির্বাচনের বাইরে রেখে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার দোহাই দিয়ে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীতে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশের গণতন্ত্র ও নির্বাচনের ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত অধ্যায় সৃষ্টি করেছে। দেশের মানুষ যেমন সে নির্বাচনে ভোট দিতে যায়নি, একইভাবে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরাও নির্বাচন পর্যবেক্ষনে আসেনি। অধিকাংশ আসনে কোন প্রতিদ্ব›িদ্ব প্রার্থী না থাকায় ১৫৩টি আসনে বিনাভোটে নির্বাচিত সংসদ নিয়ে দেশে সাংবিধানিক ও আইনগত বিতর্কের পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবে নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এ কারণেই প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারীদলের সিনিয়র নেতারা আগামীতে আর কোন প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন দেখতে চাননা বলে বিভিন্ন সময়ে মত প্রকাশ করেছেন। তবে একটি অংশগ্রহনণমূলক নির্বাচন আয়োজনে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সংলাপ বা সমঝোতার কোন প্রস্তাব বা উদ্যোগেও তারা সাড়া দেননি। এখন পর্যন্ত তারা সংবিধান অনুসারে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলছেন। অন্যদিকে প্রধান বিরোধিদল বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচনে না যাওয়া এবং একতরফা নির্বাচন হতে না দেওয়ার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।
আগামী নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে কয়েক সপ্তাহ আগে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের একটি মন্তব্যকে ঘিরে নির্বাচন কমিশনে এক ধরনের সমন্বয়হীনতার আলামত দেখা গিয়েছিল। সে সময়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার মন্তব্য করেছিলেন, নির্বাচনের আরো একবছর বাকি, সেনা মোতায়েন বিষয়ে এখনি কোন সিদ্ধান্ত নয়। আর এখন তিনি বলছেন সরকার চাইলে আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন প্রস্তুত রয়েছে। দেশের গণতন্ত্র এবং জনগণের অবাধে ভোট দিতে পারার অধিকার নিশ্চিত করা নিয়ে যখন বড় ধরনের অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে তখন আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠানে কমিশনের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মন্তব্য ভিন্ন বার্তা দিচ্ছে বলে পর্যবেক্ষক মহলের ধারনা। ইতিপূর্বে ২০১৫ সালে যখন একটি আগাম নির্বাচনের সম্ভাব্যতা নিয়ে কথা উঠেছিল তখনো বিরোধিদলকে কোনঠাসা রেখে মামলার রায় ঘোষনা করে খালেদা জিয়াসহ শীর্ষনেতাদের নির্বাচনের বাইরে রেখেই একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের আশঙ্কা করেছিল সংশ্লিষ্ট পর্যবেক্ষকরা। এরপর গত দুই বছরেও অবস্থার তেমন কোন পরিবর্তন ঘটেনি। আলোচিত বিষয় হচ্ছে দেশে গণতন্ত্রের মানোন্নয়ন এবং ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে সরকার যে নৈতিকভাবে দুর্বল অবস্থানে পড়েছে তা থেকে উত্তরণের জন্য একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা। শুধুমাত্র ভোট দিয়ে ক্ষমতার পালাবদল নিশ্চিত করার নামই গণতন্ত্র নয়। নির্বাচনের আগে ও পরের বাস্তবতা এবং দেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে সব দল- মতের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সামাজিক-রাজনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণই এই মুহূর্তে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়নের সবচে প্রত্যাশিত পন্থা। বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রেখে কোন জাতীয় নির্বাচন জনসমর্থন ও গ্রহণযোগ্যতা অর্জনে নিশ্চিতভাবেই ব্যর্থ হবে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত শীর্ষ সংবাদে প্রধান নির্বাচন কমিশানারের সাথে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদল নির্বাচনী রোডম্যাপের অগ্রগতি সম্পর্কে আলোচনার এক পর্যায়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আগাম নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা প্রকাশ করেন। অন্যদিকে বিএনপি নেতা খালেদা জিয়া আদালতে হাজিরা দিতে না যাওয়ায় গতকাল আদালত তার জামিন বাতিল করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে বলে অনলাইনে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়। সার্বিক অবস্থার পর্যালোচনা করলে অবস্থা এই দাঁড়াচ্ছে যে, একটি অবাধ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের প্রত্যাশা এখনো বড় ধরনের অনিশ্চয়তার দোলাচলেই ঘুরপাক খাচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন