Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

আবারো ‘দ্য বেস্ট’ রোনালদো

ইমামুল হাবীব বাপ্পি | প্রকাশের সময় : ২৫ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:১৬ পিএম, ২৪ অক্টোবর, ২০১৭

আকাশ থেকে যেন এক ঝাঁক তারা নেমে এসেছিল লন্ডনের পালেডিয়ামের বিশাল মিলনায়তনে। তারকা বললে হয়তো কমই বলা হয়। ডিয়াগো ম্যারাডোনা, রোনালদো, জিনেদিন জিদান, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, লিওনেল মেসি , নেইমার সবগুলো যে একেকটা নক্ষত্রের নাম। বর্তমান আর সাবেক ফুটবলারদের নিয়ে ‘ফিফা দ্য বেস্ট ফুটবল অ্যাওয়ার্ড’ নামক সেই মিলনমেলায় সব আলো ছিল একজনের উপরÑ ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো।
জমকালো সেই অনুষ্ঠানের সবচেয়ে বড় পুরস্কার ‘দ্য বেস্ট মেনস প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার’-এর নাম ঘোষণা করেন আর্জেন্টাইন ফুটবল কিংবদন্তি ম্যারাডোনা। এসময় তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি ‘সিনিয়র’ রোনালদো। খুব স্বাভাবীক ভঙ্গিতেই সামনের একই দর্শক সারিতে বসে থাকা লিওনেল মেসির পাশ থেকে উঠে এসে বর্ষসেরার ট্রাফিটা ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর হাত থেকে তুলে নেন রোনালদো। যেন সবকিছু আগে থেকেই ঠিকঠাক ছিল। মেসির চোখে-মুখে এসময় তাই কোন বিহŸলের ঝাপসা পর্দাও পড়েনি। রুপালি ট্রফি হাতে নিয়েই তাতে পরম মমতায় চুমু এঁকে দেন রিয়াল মাদ্রিদের পর্তুগিজ তারকা। ‘কৃত্রিম’ হাসি আর ‘প্রতীকি’ হাত তালিতে চিরপ্রতিদ্বন্দীকে শুভেচ্ছা জানান আর্জেন্টাইন তারকা। অনুষ্ঠানের বাকি আমন্ত্রিত অতিথীদের সাথে একই ভঙ্গিমায় বিজয়ীকে শুভেচ্ছা জানান তাদের নব্য প্রতিদ্ব›দ্বী হয়ে ওঠা নেইমারও।
এ নিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মত ফিফা বর্ষসেরা খেতাব জিতলেন রোনালদো। সব মিলে পঞ্চমবারের মত ফিফা এই পুরস্কার জিতে ছুঁয়ে ফেললেন লিওনেল মেসিকে। গোল সংখ্যায় মেসি এগিয়ে থাকলেও ক্লাবের হয়ে ঘরোয়া লিগ, ক্লাব বিশ্বকাপ ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতায় পুরস্কারটির একক দাবিদার ছিলেন রোনালদোই। পুরস্কার পেয়ে উচ্ছ¡সিত ৩২ বছর বয়সী তারকা বলেন, ‘এটা দারুণ একটি স্বীকৃতি। আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই আমার সতীর্থ বন্ধুদের। এটা আমার ক্যারিয়ারের লক্ষ্য পূরণের মুহূর্ত যা নিজেকে আবেগঘন করে দেয়। এটি জিততে পেরে সত্যিই আমি খুশি।’
১৯৯১ সাল থেকে বর্ষসেরা পুরস্কারুু দিয়ে আসছিল ফিফা। ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠানটি ফ্রান্স ফুটবলের সাথে একীভূত হয়ে একই পুরস্কার দেওয়া শুরু করে ‘ফিফা-ব্যালন ডি’অর’ নামে। ছয় বছর একসঙ্গে চলার পর গেল বছর থেকে আবার আগের নিয়মে ফিরে আসে ফিফা। তবে পুরস্কারের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘দ্য বেস্ট’।
গত এক দশকে পুস্কারটি হাতবদল হয়েছে কেবল এই দু’জনের মধ্যে। সেরাদের তালিকায় বাকিদের কেউ তাদের ধারেকাছেও ভিড়তে পারেনি। ২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত রেকর্ড টানা চারবার বিশ্বসেরার মুকুট ওঠে ফুটবল জাদুকরের খেতাব পাওয়া লিওনেল মেসির মাথায়। মাঝে দুই বছর চিরপ্রতিদ্ব›দ্বীর কাছে হেরে ২০১৫ সালে পুনঃরায় মুকুট ফিরে পান মেসি। এরপর আবার তাকে টানা দুবার দর্শক বানিয়ে মুকুট নিজের মাথায় তোলেন রোনালদো। প্রথমটি জিতেছিলেন ২০০৮ সালে।
বয়স হয়ে গেছে ৩২। আবারো কি একই মঞ্চে এসে একই পুরস্কার নেয়া সম্ভব? নামটি যেহেতু রোনালদো সেহেতু তার পক্ষে বাজি ধরা যেতেই পারে। অন্তঃত আরো দুবার এই শিরোপা জিততে চান ‘সিআর-সেভেন’। সব মিলে সংখ্যাটা নিযে যেতে চান সাতে। কোথায় থামতে চান তিনি? ফিফা ডট কমের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আশা করি সাতে! কারণ এটা আমার লাকি নম্বর (হাসি)। তবে এটা ভবিষ্যতের কথা। এবং এখন আমি যতটা সম্ভব এটা উপভোগ করতে চাই।’
দর্শক, সাংবাদিক, ফিফা সদস্যভুক্ত জাতীয় দলের কোচ ও অধিনায়কের ভোটে নির্বাচিত হন বর্ষসেরারা। রোনালদো ও মেসিও নিজ নিজ জাতীয় দলের অধিনায়ক হওয়ায় ভোট দেয়ার অধিকার আছে তাদেরও। সুতরাং তাদের ভোট কে কে পেলেন এ নিয়েও ফুটবল ভক্তদের মাঝে থাকে এক ধরনের কৌতুহল। বরাবরের মত এবারো তারা কেউ কাউকে ভোট দেননি। রোনালদোর বিচারে বছরের সেরা তিনজন হলেন তারই ক্লাব সতীর্থ যথাক্রমে লুকা মড্রিচ, সার্জিও রামোস ও মার্সেলো। মেসির ভোট পড়ে ক্লাব সতীর্থ আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, লুইস সুয়ারেজ ও সাবেক ক্লাব সতীর্থ নেইমারের ঝুলিতে।
আসরের আরেক প্রধান আকর্ষন ‘দ্য বেস্ট মেনস কোচ অব দ্য ইয়ার’ খেতাবটিও গেছে রিয়াল মাদ্রিদের দখলে। রেকর্ড টানা দুবার রিয়ালকে চ্যাম্পিয়ন্সলিগ শিরোপা এনে দেয়া জিনেদিন জিদানের মাথায় উঠেছে এর মুকুট। বর্ষসেরা নারী ফুটবলার ও কোচ নির্বাচিত হয়েছেন যথাক্রমে হল্যান্ডের বার্সা ফরোয়ার্ড লেক মার্টিনস ও হল্যান্ডের সারিনা উইগম্যান।
তবে আসরের সবচেয়ে বড় বিষ্ময় উপহার দেন ইতালিয়ান ‘চিরতরুণ’ গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি বুফন। ৪০ ছুঁই ছুঁই বয়সে এসে জিতে নিলেন বর্ষসেরা গোলরক্ষকের খেতাব। শেষ চার বছর যে পুরস্কারটি নিজের করে নিয়েছিলেন জার্মানির বায়ার্ন মিউনিখ গোল প্রহরী ম্যানুয়েল নয়্যর।
সন্দেহতীত ভাবে ফিফা বর্ষসেরা একাদশের গোলরক্ষকও বুফন। ২০০৭ সালের পর একাদশে সুযোগ পেলেন তিনি। বর্ষসেরার এই পর্বেও রিয়ালের জয়জয়কার। স্প্যানিশ জায়ান্ট দল থেকে আছেন সর্বোচ্চ ৫জন খেলোয়াড়। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর সাথে আছেন সার্জিও রামোস, মার্সেলো, টনি ক্রুস ও লুকা মড্রিচ। বার্সেলোনা থেকে লিওনেল মেসির সাথে সুযোগ পেয়েছেন আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা। এক বছর পর একাদশে ফিরেছেন নেইমার। প্রথমবারের মত সুযোগ পেয়েছেন এসি মিলানের ইতালিান ডিফেন্ডার লিওনার্দো বানুচ্ছি। বাকিজন হলেন জুভেন্টাসের ব্রাজিলিয়ান রাইট ব্যাক দানি আলভেস। একাদশ থেকে ছিটকে গেছেন জেরার্ড পিকে ও রু।সি সুয়ারেজ।
ফুটবল রোমান্টিকদের আলাদা নজর থাকে বছরের সেরা গোলের দিকেও। বিশ্বের হাজার হাজার দর্শকের ভোটে ‘পুসকাস গোল অব দ্য ইয়ার’এর সেই খেতাবটি জিতে নেন আর্সেনালের ফরাসি স্ট্রাইকার অলিভার জিরুদ। প্রিমিয়ার লিগে ক্রিস্টাল প্যালেসের বিপক্ষে ‘স্কর্পিয়ন কিক’ নামের শটে গোলটি করেছিলেন তিনি।
সেল্টিকের ফুটবল ভক্তরা দ্বিতীয়বারের মত জিতেছেন ‘ফ্যান অ্যাওয়ার্ড’। এছাড়া ‘ফিফা ফেয়ার প্লে অ্যাওয়ার্ড’ তুলে দেওয়া হয় ফ্রান্সিস কোনের হাতে। প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড় আঘাতপ্রাপ্ত হলে মাঠেই দ্রæত প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তার জীবন রক্ষায় ভুমিকা রেখেছিলেন টোগো জাতীয় দলের এই স্ট্রাইকার।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালকের ভুমিকায় ছিলেন ইংলিশ অভিনেতা, কন্ঠশিল্পী ও ডিজে ইদ্রিস এলবা। সন্ধ্যাটা আরো আনন্দঘন করে তুলতে উপস্থিত ছিলেন ব্যান্ড শিল্পী স্টোম ও কাসাবিন। ‘ইল রে’ গান দিয়ে পুরো সেখানে ভিন্ন এক আবহ তৈরী করেন তারা। সবকিছু মিলে অনুষ্ঠানটি এতই উৎসবমুখর ছিল যেমনটা এর আগে দেখিনি লন্ডনের পালেডিয়াম মিলনায়তন।
এক নজরে
এক নজরে ফিফা বর্ষসেরা ২০১৭
বর্ষসেরা ফুটবলার দেশ/দল
পুরুষ ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো পর্তুগাল/রিয়াল মাদ্রিদ
নারী লেকি মার্টিনস হল্যান্ড/বার্সেলোনা
গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি বুফন ইতালি/জুভেন্টাস
পুরুষ কোচ জিনেদিন জিদান রিয়াল মাদ্রিদ
নারী কোচ সারিনা উইগম্যান হল্যান্ড
সেরা গোল অলিভার জিরুদ ফ্রান্স/আর্সেনাল
ফেয়ার প্লে ফ্রান্সিস কোনে আইভরি কোস্ট/
ফ্যান সেল্টিক সাপোর্টার
শেষ ১০ বারের বিজয়ীরা
ফিফা বর্ষসেরা
২০০৮ ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো
২০০৯ লিওনেল মেসি
ফিফা ব্যালন ডি’অর
২০১০ লিওনেল মেসি
২০১১ লিওনেল মেসি
২০১২ লিওনেল মেসি
২০১৩ ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো
২০১৪ ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো
২০১৫ লিওনেল মেসি
‘দ্য বেস্ট’ ফিফা মেনস প্লেয়ার
২০১৬ ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো
২০১৭ ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো

 

২০১৭ বর্ষসেরা একাদশ
গোলরক্ষক : জানলুইজি বুফন (জুভেন্টাস, ইতালি)
ডিফেন্ডার : দানি আলভেস (পিএসজি, ব্রাজিল), লিওনার্দো বোনুচ্চি (এসি মিলান, ইতালি), সার্জিও রামোস (রিয়াল মাদ্রিদ, স্পেন), মার্সেলো (রিয়াল মাদ্রিদ, ব্রাজিল)। মিডফিল্ডার : লুকা মদ্রিচ (রিয়াল মাদ্রিদ, ক্রোয়েশিয়া), টনি ক্রুস (রিয়াল মাদ্রিদ, জার্মানি), আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা (বার্সেলোনা, স্পেন)। ফরোয়ার্ড : নেইমার (পিএসজি, ব্রাজিল), লিওনেল মেসি (বার্সেলোনা, আর্জেন্টিনা), ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো (রিয়াল মাদ্রিদ, পর্তুগাল)।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোনালদো

১১ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ