Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

সত্যিই, বদলে যাওয়া বাংলাদেশ!

ইমরান মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ২৪ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

লক্ষ্যটা যখন ৩৭০ রানের, ম্যাচ একরকম শেষ হয়ে গিয়েছিল তখনই। গৌরবময় অনিশ্চয়তার মুখস্থ বুলিটা ভুলে বলতেই হচ্ছে, এ লক্ষ্য অন্তত এ সফরের বাংলাদেশের পক্ষে ছোঁয়া সম্ভব নয়। কিন্তু এমন ব্যাটিং-ধ্বসের কথাও নিশ্চয় কেউ ভাবতে পারেননি কেউ। প্রথম ম্যাচে ২৭৮ রান করেও ১০ উইকেটে হার। পরের দুটিতে ৩৫৩ ও ৩৬৯ রানের দুটি এভারেস্টের নিচে পড়ে ১০৪ ও ২০০ রানের হার। ইস্ট লন্ডনের বাফেলো পার্কে ১৬৯ রানে অলআউট হয়ে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে ২০০ রানের ব্যবধানে হার ষোলকলা পূর্ণ করেছে ব্যর্থতার বৃত্ত। নিজেদের ইতিহাসের তৃতীয় বৃহত্তম পরাজয় এটি। সেই ২০০৮ সালের মত এবারও দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ।
ইদানীং বাংলাদেশের ম্যাচ মানেই দর্শকের মনে বিভ্রান্তি। বাংলাদেশ যখন বোলিং করে, তখন উইকেট যেন ব্যাটিংস্বর্গ। তখন মনে হয়, এমন উইকেট নিয়েই তো স্বপ্ন দেখেন ব্যাটসম্যানরা। এ উইকেট পারলে পকেটে পুরে নিয়ে যাবেন তাঁরা। মাঠটাও মনে হয় হঠাৎ ছোট হয়ে যায়। পুরো সিরিজ জুড়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে ভোগান্তির নাম বোলিং। তা আগে হোক বা পরে। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরা যেভাবে অনায়াসে পেটালেন, মনে হলো সেরে নিচ্ছেন নেট প্র্যাক্টিস। সবই যেন তাদের নিয়ন্ত্রণে, চাইলেই ব্যাট করে যেতে পারেন ইচ্ছামতো। টাইগার বোলারদের মধ্যে তিন ম্যাচে সবচেয়ে ভালো ইকোনমি যার, সেই সাকিব আল হাসানও রান দিয়েছেন ওভারপ্রতি প্রায় ছয় করে। বুঝুন বাকিদের কি অবস্থা! কেউ সাত, কেউ সাড়ে সাত কেউ সাড়ে আট করে দিয়েছেন রান। দেখলে মনে হবে, কার থেকে কে খারাপ প্রতিযোগিতা বোধহয় তা নিয়েই। তিন ম্যাচ থেকে সবচেয়ে বেশি ৫ উইকেট রুবেল হোসেনের। সাকিব, মিরাজ, তাসকিনের দুটি করে। ওদিকে প্রোটিয়াদের পাঁচ বা তারবেশি উইকেট নিয়েছেন তিনজন। চারটি করে পেয়েছেন আরও দুজন।
কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটিং শুরু হতেই মনে হয় অন্য কিছু! হঠাৎ করেই বধ্যভূমিতে রূপ নেয় উইকেট। ব্যাটসম্যানদের নাভিশ্বাস ওঠে রান তুলতে। দেখে মনে হয়, বোলিং প্রান্তে যাঁরা বল করছেন, তাঁরা সব ম্যালকম মার্শাল কিংবা ওয়াসিম আকরামের ভাবশিষ্য। স্পিনাররাও যেন একেকজন হয়ে ওঠেন মুত্তিয়া মুরালিধরন কিংবা শেন ওয়ার্ন। গতি, আগ্রাসন, সুইং অথবা স্পিনের ভেলকিতে পটাপট উইকেট হারাতে থাকে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচেই ছিল ব্যাটিং বান্ধব পিচ। প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের যে-ই নেমেছেন, তারই মনে হয়েছে কিছু রান করে নেওয়ার এইত সুযোগ। তিন ম্যাচে ২৮৭ রান করেছেন কুইন্টেন ডি কক, দুই ম্যাচে ব্যাটিং পেয়ে এবিডি ভিলিয়ার্স করেছেন ১৯৬ রান, শেষ ম্যাচ না খেলেও হাশিম আমলার ব্যাট থেকে এসেছে ১৯৫ রান। আমলা ছাড়া বাকি দুজনের স্ট্রাইকরেট ১০০ এর উপরে, ভিলিয়ার্সের তো দেড়শ ছাড়িয়ে গেছে তা। সব মিলিয়ে পুরো সিরিজের ১০০ এর উপর স্ট্রাইক রেট রেখে রান পেয়েছেন প্রোটিয়াদের নয়জন। বাংলাদেশের কেবল একজন। তাও যিনি করেছেন সেই মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন খেলেছেন মাত্র ১১টি বল। সব ম্যাচেই ব্যাটসম্যানরা ভুগেছেন, কখনো টিকে থাকার চেষ্টায় , কখন রান আনতে না পারায়। সিরিজে মুশফিকুর রহিম এক সেঞ্চুরি আর এক ফিফটিতে করেন ১৭৮ রান। এক ফিফটিতে ইমরুল কায়েসের রান ঠিক ১০০। শেষ ম্যাচে ৬৩ রানের ইনিংস খেলে সাকিব করেছেন ৯৭ রান। বাকিদের অবস্থা আর না-ই-বা বললাম।
তিন ম্যাচের এ ওয়ানডে সিরিজ যেন ভুলে যেতে চাইবেন বাংলাদেশের বোলাররা। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের কাছে বাংলাদেশের বোলাররা ছিলেন সম্পূর্ণ অসহায়। কুইন্টন ডি কক-এবি ডি ভিলিয়ার্স-হাশিম আমলাদের সামনে বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণ ছিল নখদন্তহীন। পরিসংখ্যানেও ফুটে উঠেছে বাংলাদেশের বোলিং চিত্রের বাজে অবস্থা। এ প্রথমবারের মতো তিন ম্যাচের কোনো দ্বিপাক্ষিক সিরিজে ১০০০ এর বেশি রান দিয়েছে বাংলাদেশের বোলাররা। তিন ম্যাচের কোনো ওয়ানডে সিরিজে এত রান আগে দেয়নি বাংলাদেশ। এর আগে ২০১১ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ৮৬৩ রান দিয়েছিল বাংলাদেশ। এ সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরা রান তুলেছে ১০০৪।
ওয়ানডে জার্সি পরলেই বাংলাদেশকে পাওয়া যেত চাঙাভাবে। টেস্ট সিরিজে নাজেহাল হওয়ার পর অনুপ্রেরণাদায়ী অধিনায়ক মাশরাফিও জাগাতে পারেননি দলকে। দুর্বল শরীরী ভাষা সিরিজ জুড়েই বেরিয়ে এসেছে দৃষ্টিকটুভাবে। পাওয়া যায়নি লড়াইয়ের মনোবল, তেতে উঠার বারুদ দেখা যায়নি চোখেমুখে। অথচ কিছুদিন আগ পর্যন্ত, ঘরে কিংবা ঘরের বাইরে- বাংলাদেশকে ‘বদলে যাওয়া’ এক পরাশক্তি হিসেবেই দেখছিল বিশ্ব। সাততাড়াতাড়ি সেই দলটির এই ‘বদল’ নিশ্চয়ই কেউ ভাবেনি কখনও।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাংলাদেশ


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ