Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অধিনায়কত্বই প্রধান সমস্যা নয়

সবার আগে দরকার বিসিবির মানসিকতার পরিবর্তন

রেজাউর রহমান সোহাগ | প্রকাশের সময় : ১০ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ম। ন্ত। ব্য প্র। তি। বে। দ। ন

ব্লু মফন্টেইন টেস্টের তৃতীয় দিন দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার ডুয়াইন অলিভারের একটি বাউন্স সজোরে আঘাত করে মুশফিকুর রহিমের মাথায়। সেই আঘাতে হাসপাতালেও যেতে হয় বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়ককে। শারীরিকভাবে যে আঘাত সেদিন পেয়েছিলেন, তার চাইতে বড় আঘাত হয়ে আসে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে তার দলের বাজে দু’টি হার। পচেফস্ট্রুমে সিরিজের প্রথম টেস্ট শেষে ৩৩৩ রানের পরাজয়ের পর বোলারদের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন মুশফিক। চিত্র পাল্টায়নি দ্বিতীয় টেস্টেও, বøুমফন্টেইনে আরো বাজেভাবে তার দল হারে ইনিংস ও ২৫৪ রানের ব্যবধানে। সেই সঙ্গে চলছে অধিনায়কত্ব থেকে তাকে সরিয়ে দেয়ার গুঞ্জন। মাত্র এক মাস আগে ঘরের মাটিতে যে দলটি অস্ট্রেলিয়াকে মাত্র সাড়ে ৩ দিনে হারিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল পুরো বিশ্বকে, সেই অধিনায়ক মুশফিকের অধিনায়কত্বই এখন কাঠগড়ায়!
মুশফিকের অধিনায়কত্বের অধ্যায় সাফল্য ও সমালোচনার অবিশ্বাস্য মেলবন্ধন। পরিসংখ্যানে দেশের সফলতম টেস্ট অধিনায়ক তিনি। কিন্তু একই সঙ্গে সম্ভবত দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে সমালোচিত অধিনায়কও। চলতি দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ সমালোচনার আগুনে ঘি ঢেলেছে নতুন করে। তার কারণ শুধুমাত্র দু’টি টেস্টে হার নয়, বোর্ড ও ম্যানেজমেন্ট নিয়ে মুশফিকের সরাসরি সমালোচনা। কিছুদিন আগেই সংবাদমাধ্যমে বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান বলেছিলেন, ‘মুশফিকের সমস্যা আছে’। তার কণ্ঠে একই কথা শোনা গেল আবারও। টস নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে ‘টসে জেতাটাই ভুল হয়ে গেছে’ মুশফিকের এমন মন্তব্য ভালোভাবে নেননি বিসিবি প্রধান, ‘ওর মধ্যে কিছু অস্বস্তিবোধ কাজ করছে। সেটা ম্যানেজমেন্টের কারণে হতে পারে, কোচ হতে পারে, আমরাও হতে পারি। সেটা বড় কিছু না। দেশে ফিরলে আলোচনা করব আমরা। তবে এ ধরনের মন্তব্য করাটা দেশের ভাবমর্যাদা নষ্ট করে।’
বিসিবি বসের এমন মন্তব্যের পর নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে মুশফিক বলেন, ‘আমি মনে করি, যখন দল ভালো করে তখন সব কৃতিত্ব যায় টিম ম্যানেজমেন্টের দিকে। যখন দল ভালো করে না, তখন সব দায় এসে পড়ে অধিনায়কের ওপর। পরে যে-ই আসুক আশা করি, বাংলাদেশ গত দুই টেস্টে যা করেছে, আশা করি তার চেয়ে অনেক ভালো করবে। যেটা সত্যি কথা, সেটাই বলেছি। এর জন্য যদি কারোর খারাপ লেগে থাকে আমার দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। মানুষ মাত্রই ভুল হতে পারে। তো আমিও মানুষ, আমার যদি ভুল হয়ে থাকে তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।’
২০১৫ সালটি বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য স্বর্ণালি সময় বললে ভুল বলা হবে না। ঘরে কিংবা বাইরের মাটিতে একের পর এক সাফল্য এসে ধরা দিয়েছে বাংলাদেশের ঝুলিতে। সাফল্যমন্ডিত ঐ বছরে কখনও বাইরে থেকে শোনা যায়নি বোর্ড কিংবা ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে ক্রিকেটারদের দ্ব›েদ্বর কথা। কিন্তু সম্প্রতি বেশ কিছু ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর অনেকটাই খোলাখুলি কাদা ছোড়াছুড়িতে মেতেছে দু’পক্ষই। যার প্রতিফলন ঘটেছে ক্রিকেটারদের মানসিকতায়, প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের সাফল্যে। যেটা অবশ্যই মঙ্গলকর নয়।
নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ এখন বিশ্ব ক্রিকেটের কঠিনতম পরাশক্তি। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ ক্রিকেট এখন দেশের পরিচায়ক, নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন অনেক পরিণত। তারপরও দেশের মাটিতে এবং দেশের বাইরে (বিশেষ করে এশিয়ার বাইরে) একই দলের ভিন্ন ফল চোখে পড়ে বেশ মোটা দাগে। যে দলটি মাত্র মাসখানেক আগে অস্ট্রেলিয়ার মতো সেরা টেস্ট খেলুড়ে দলকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ল মিরপুরে, সেই দলটিই কি না দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে জন্ম দিলো ইনিংস হারের লজ্জার! যা সত্যিই আশাহত করে বাংলাদেশের কোটি কোটি ক্রিকেটভক্তকে।
ক্রিকেটের বৃহত্তর স্বার্থে এখন সময় এসেছে এর মূল কারণ খুঁজে বের করার। শুধুমাত্র অধিনায়ক পরিবর্তন করেই এই সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করেন না বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেটবোদ্ধাই। ক্রিকেট আন্তর্জাতিক একটি খেলা, বিশ্বের বুকে দেশের পতাকা উজ্জ্বল করার এক সুবর্ণ সুযোগ। সেখানে শুধুমাত্র নেতিবাচক মানসিকতার কারণে এগিয়ে যাওয়ার বদলে বাংলাদেশ কেন পিছিয়ে যাবে দিন কে দিন? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে, আন্তর্জাতিক আসরগুলোতে বাংলাদেশের আরো সাফল্যের প্রতিবন্ধকতা শুধুমাত্র নেতৃত্ব বা অধিনায়কত্ব নয়, অন্য কিছু!
একটিবার ভাবুন তো, আপনার যে সন্তানটি আপনার ঘরে সারাক্ষণ মাতিয়ে বেড়ায়, সেই ছেলেটিই অন্যের ঘরে গেছে চুপটি মেরে বসে থাকে কেন? কারণ এই পরিবেশ তার অচেনা। বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের বেলায়ও সেরকমই ঘটছে। মিরপুর, ফতুল্লা কিংবা চট্টগ্রাম অথবা দেশের ভেতর অন্য যে কোনো ভেন্যুতে বাংলাদেশ কঠিন এক প্রতিদ্ব›দ্বী। প্রতিপক্ষরাও সমীহ করে মাশরাফি, মুশফিকদের। কিন্তু দেশের বাইরে, বিশেষ করে এশিয়া ছাড়িয়ে ওপারে গেলেই যেন মুখ থুবড়ে পড়ে দলটি! এর কারণ হিসেবে ক্রিকেট বিশ্লেষকরা দায়ী করছেন, নিজেদের মাঠে হোম কন্ডিশনের সুবিধা নেয়ার জন্য নিজেদের ফেভারে উইকেট নির্মাণ করাকেই! যে কাজটি সবচেয়ে বেশি করতে দেখা যায় প্রতিবেশী দেশ ভারতকে। তারা নিজেদের মাটিতে অজেয়, কিন্তু দেশের বাইরে গেলেই তারা মিউয়ে যায় কর্পূরের মতো। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও দীর্ঘদিন থেকে সেই একই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যেটা বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে সাফল্যবঞ্চিত করছে বলে মনে করছেন অনেক ক্রিকেটবোদ্ধাই। তাদের মতে, ঘরের মাঠেও যখন আন্তর্জাতিক মানের উইকেট থাকবে ক্রিকেটাররা সেই উইকেটে খেলার অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারবে বৈশ্বিক কোনো টুর্নামেন্টে।
কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করে বিদেশি কোচ আসছে, আসছে ফিজিও, বিশেষজ্ঞ কোচ কিংবা ফিজিও। তবুও কেন আমাদের ফল বিপর্যয় হয়? যদি সর্ষের মধ্যেই ভূত থাকে তবে সাফল্য ধরা দিতে বয়েই গেছে। এই প্রেতিবেদক বিষয়টি নিয়ে সাবেক কয়েকজন ক্রিকেট তারকার সঙ্গে কথা বলেছেন, যারা দীর্ঘদিন সুনামের সধ্যে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন- তাদের সকলেই বিষয়টির সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। বলেছেন এমন যদি হতে থাকে, তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট এখন যে উচ্চতায় গিয়েছে, সেখান থেকে নিচে নেমে আসতে খুব বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না। বিদেশের মাটিতে এমন দৃশ্য আর কতকাল!
তাই দেশের বাইরে এমন বিপর্যয়ের পর শুধুমাত্র অধিনায়কের দিকে অঙ্গুলি প্রদর্শন না করে বিসিবির উচিত এখনই বিষয়টি নিয়ে ভাবা।



 

Show all comments
  • Md Atikur Rahman ১০ অক্টোবর, ২০১৭, ১:০০ পিএম says : 0
    মুশফিককে দোষদিয়ে কোন লাভ নাই, সে আসহায় ক্ষমতাহীন এক ক্যাপটেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Atik Hasan ১০ অক্টোবর, ২০১৭, ১:০১ পিএম says : 0
    ব্যাটিং করার সামর্থ্য থাকলও যথেষ্ট ধর্য্য নেই। একজন ব্যাটিংকে দেখলাম না ভালো বলগুলোকে সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে। বরং বাজে বলে পিছনে বল দিয়ে আউট করে,,,দিচ্ছে। বল ছেড়ে দেওয়ার মত মানসিকতা খুবই কম। সৌম্য,কায়েসের বাদ দিয়ে,,দলে নাফিস, নাঈমের প্রয়োজন বোধ করছি।
    Total Reply(0) Reply
  • সাইফ ১০ অক্টোবর, ২০১৭, ১:০৩ পিএম says : 0
    There are many experienced player in our country please replace them in the team
    Total Reply(0) Reply
  • Aslam Hosain ১০ অক্টোবর, ২০১৭, ১:১৭ পিএম says : 0
    এর আগের সিরিজে মুশফিকুর রহীমের নেতৃত্বেই বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছে। ঠিক তার আগের সিরিজে মুশফিকের নেতৃত্বেই শ্রীলংকাকে তাদের নিজেদের মাটিতে হারিয়েছে। তার আগে ইংল্যান্ডকেও এই এই মুশফিক নেতৃত্ব দিয়ে হারিয়েছে। আমি ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশের যত ম্যাচ হয়েছে প্রত্যেকটি ম্যাচই শত প্রতিকূল পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও মিস করিনি। খেলার মধ্যে মুশফিকের যতটুকু দেশপ্রেম দেখেছি তা অন্যদের মধ্যে দেখিনি। আর সাউথ আফ্রিকার মাটিতে একটি সিরিজকে কেন্দ্র করে তাকে তিরস্কার করা হচ্ছে। আমরা এতই অকৃতজ্ঞ। ছি! ছি!! ছ!!!
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিসিবি


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ