নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
সপ্তাহখানেক আগেও যে ‘বেটউইনার’ নামটা বাংলাদেশে অপরিচিত ছিল, সাকিব আল হাসানের কল্যাণে তা এখন প্রায় সবারই জানা। এটাও অজানা নেই যে এই বেটউইনার একটি বেটিং আর ক্যাসিনোর ওয়েবসাইট। বাংলাদেশে বেটিং নিষিদ্ধ, অথচ এই বেটিং ওয়েবসাইটেরই শুভেচ্ছাদূত হিসেবে চুক্তি করে নতুন এক বিতর্ক উষ্কে দিয়েছেন বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক।
যেকোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার আগে ক্রিকেটারদের বিসিবি থেকে অনুমতি নেওয়াটা বাধ্যতামূলক। সাকিব সেটির কোনো তোয়াক্কাই করেননি। কারণ, তিনি জানতেন, বিসিবি কখনোই এটি অনুমোদন করবে না। এমন শৃঙ্খলাভঙ্গের কাজ সাকিব অতীতেও করেছেন। একাধিকবার নিষিদ্ধ হয়েছেন, কখনোবা পার পেয়ে গেছেন। এবারও হয়তো দ্বিতীয়টাই হবে বলে আশা করেছিলেন। কিন্তু বিসিবি শুরু থেকেই এবার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় এক দৈনিককে দেয়া সাক্ষাৎকারে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেছেন, ‘আই ওয়াজ শকড। এটা মেনে নেওয়া খুব কঠিন। ওকে আমরা টেস্ট ক্যাপ্টেন করলাম, টি-টোয়েন্টি ক্যাপ্টেন করব বলে ঠিক করলাম... আর ও কিনা এমন একটা কাণ্ড করল! কোনো সাবেক খেলোয়াড় এমন করলে তা-ও না হয় একটা কথা ছিল। বর্তমান খেলোয়াড় হয়ে ও কীভাবে এটা করে? এটা তো আমাদের দেশের আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ। সংবিধানেও এটা পরিষ্কার লেখা আছে। ব্যক্তিগতভাবে আমার খুব খারাপ লেগেছে।’
বিসিবি তাঁকে আবার টেস্ট দলের অধিনায়ক করেছে, টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক হিসেবে ফিরিয়ে আনা একরকম চূড়ান্ত করে ফেলেছে। এমন একটা সময়ে সাকিব কিনা এমন একটা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে বসলেন, যা শুধু নিয়ম বা আইনবিরুদ্ধই নয়, নৈতিকতার দিক থেকেও ঘোরতর অন্যায়। টেস্ট অধিনায়ক তিনি এখনো আছেন, টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক হিসেবেও বিসিবি তাঁকে ভাবছে এখনো। তবে বিসিবি সভাপতি বলেছেন, ভবিষ্যতে সাকিবকে কড়া নজরদারিতে রাখা হবে, ‘আজ (গতকাল) রাতে ও দেশে আসছে। কাল (আজ) ওর সঙ্গে বসি। জানা দরকার, কেন ও এমন একটা কাজ করল। বিসিবির আইন, আইসিসির আইন, দেশের আইন... সব আইনেও এটা নিষিদ্ধ। সাকিবের এটা জানা না থাকার কথা নয়। আমার তাই জানা দরকার, ও কী ভেবে এটা করল। এটা কি টাকার জন্য করেছে? তা-ই যদি হয়, তাহলে সামনে তো আরও বেশি টাকার অফার পাবে। তখন কী করবে?’ সাকিবের ব্যাখ্যা যদি আপনার কাছে সন্তোষজনকও মনে হয়, তারপরও তো এমন কাউকে অধিনায়ক করা নিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে প্রশ্ন উঠতে পারে। বিশেষ করে সাকিব যেখানে এর আগে ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পাওয়ার কথা না বলায় এক বছর নিষিদ্ধ হয়েছেন! উত্তরে পাপন বরেছেন, ‘এবার হয়তো ওকে বেনিফিট অব ডাউট দেব। তবে আপনাকে এটা বলে দিতে পারি, এটাই হবে ওর জন্য শেষ সুযোগ। ওকে অবশ্যই কড়া নজরদারিতে রাখা হবে। ভবিষ্যতে এমন কিছু হলে আমি কারও সঙ্গে আর আলাপ করব না। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলব। আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই, আমাদের সিনিয়র প্লেয়ার যারা আছে, তারা ভালোভাবে শেষ করুক। তাই বলে বারবার তাদের সুযোগ দেওয়া হবে না।’
বিষয়টি নিয়ে যখন দেশজুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা, ঠিক সেই সময় এই আগুনে ঘি ঢেলে দিলেন ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। গতকাল নিজের ফেসবুক পেজ থেকে এক ভিডিও পোস্ট করে নিজের সঞ্চয় থেকে সাকিবকে ৩ লাখ টাকা দিতে চেয়েছেন ব্যারিস্টার সুমন। প্রিয়জনকে উপহার হিসেবে কিছু দিতে চাওয়া, সাদা চোখে এটা খুবই ভালো সংবাদ। তবে এই টাকা দিতে চাওয়ার কারণ হিসেবে যেটি সামনে এনেছেন ব্যারিস্টার সুমন, সেটি সত্যিই নতুন করে ভাবাচ্ছে ক্রিকেট প্রশাসনকে। প্রস্তাবের কারণ বর্ণনা করে এই আইনজীবী বলেন, ‘আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাদের কৃতি ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে ৩ লাখ টাকা দেবো। আমার কাছে ৩ লাখ টাকা আছে পারিবারিক খরচের জন্য, সেটা দিয়ে দিব। এই ৩ লাখ টাকা দিলে যদি অন্তত তার টাকা আয়ের তাড়না কমে।’
মূলত মোটা অঙ্কের বিনিময়ে বিতর্কিত ব্যবসা এবং সেবার পণ্যদূত হতে সাকিবকে নিরুৎসাহিত করতেই এই অর্থ প্রদান করতে চেয়েছেন ব্যারিস্টার সুমন। দেশের প্রতি সাকিবের দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘দায়িত্ব সব কি রাজনীতিবিদদেরই? ফেসবুকে সাকিব আল হাসানের দেড় কোটি অনুসারী। সব তরুণ অনুসারী। বাংলাদেশের মানুষদের কি সিগন্যাল দিতে চাচ্ছেন তিনি? সাকিবের মতো দেশসেরা একজন ক্রীড়াবিদের কাছ থেকে দেশের তরুণ খেলোয়াড়রা কি শিক্ষা পাচ্ছে, সেটা নিয়েও প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন ব্যারিস্টার সুমন, এই ধরনের মানুষরা (সাকিব আল হাসান) যদি তরুণদের জন্য আইডল না হয়, তাহলে দেশ বাঁচবে কীভাবে? সাকিবকে অনুসরণ করে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা, ফুটবলাররা; তারা সাকিবের কাছ থেকে কি শিখছে?’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন ১৬ বছরের বেশি। ক্রিকেটের এই অন্ধকারজগৎ সম্পর্কে সাকিব ভালোই ওয়াকিবহাল। সাকিব যা করেছেন, তা না বুঝে করেছেন এটা ভাবার কোনো কারণ নাই। বিপুল অর্থের প্রলোভন ছাড়া যা করার আর কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ভাবতে অবাক লাগে, ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব গোপন করার অপরাধে এক বছরের নিষেধাজ্ঞা তো বেশি দিন আগের কথা নয়। সাকিবের বর্ণিল ক্যারিয়ারে যা বড় এক কলঙ্ক হয়ে আছে। এরপর তো বেটিং-ফিক্সিং নিয়ে ন্যূনতম বিতর্কের সম্ভাবনা আছে, এমন কিছু থেকে সাকিবের শত হস্ত দূরে থাকার কথা। কিন্তু সাকিব কিনা টাকাকেই বড় করে দেখলেন!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।