নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
‘যদি আমরা স্পন্সর পেতাম, তাহলে প্রতি সিরিজ শেষে আঠা দিয়ে জুতা সারাতে হতো না’। গত বছরের ১২ মে নিজের ছেড়া জুতোর একটি ছবি দিয়ে ঠিক এই টুইটটি করেন পরশু রাতে জিম্বাবুয়ের ইতিহাসগড়া জয়ের নায়ক রায়ান বার্ল।
ফ্লাওয়ার ব্রাদার, ক্যাম্পবেলদের সোনালী জিম্বাবুয়ে আর নেই। তাদের ক্রিকেট এবং ক্রিকেটারদের অবস্থা বার্লের টুইটির মতই করুণ। এই টুইটের পর ক্রীড়া সামগ্রী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান পুমা তার স্পন্সর হয়। তাতে দেশটির বোর্ড মানহানির অভিযোগ এনে বার্লকে শাস্তির মুখোমুখিও করে। এই বার্লের দানবীয় ব্যাটে চড়েই বাংলাদেশকে গতপরশু ১০ রানে হারিয়ে, প্রথম বারেরমতো কোন টেস্ট খেলুড়ে দিশের বিপক্ষে টি-২০ সিরিজ জয়ের স্বাদ পায় সুবিধা বঞ্চিত এই দল। তবে বাংলাদেশ যতটা না বার্লের কাছে বা নাসুমের বোলিংয়ের দরুণ পরাজিত, তার চেয়ে বেশি পিষ্ট ক্রিকেটারদের অপরিকল্পিত মনোভাবে এবং বোর্ডের অপরিপক্ক সিদ্ধান্তে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সংশ্লিষ্টরা প্রায় বলে থাকেন বোর্ডের রিজার্ভে আছে বহু টাকা। গত মাসে এজিএমের অর্থ বাজেটে প্রকাশ করা হয় বোর্ডের তহবিল ৯০১ কোটি ৬৪ লক্ষ ১১ হাজার ৮৮৪ টাকা। আর্থিক দিক থেকে ‘বিগ থ্রি’র পরেই বিসিবির অবস্থান। কিন্তু এত অর্থিক সুবিধা ও জৌলুস কি এই দেশের ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট কর্তারা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারছেন? সঠিক জায়গায় বিনিয়োগ না করে আর্থিক গড়িমাই প্রকাশ করছে বোর্ড।
টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার ২২ বছর পরও আমাদের দেশের প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটটাই সবচেয়ে অবহেলিত। আগে যখনই টেস্টে বাজে পারফরম্যান্স আসত টাইগারদের তরফ থেকে তখনই বোর্ড থেকে জানানো হতো, তারা সামনের মৌসুম থেকেই ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটকে সবচেয়ে গুরুত্বের সাথে দেখবেন। যতবার বোর্ড থেকে এই কথা বলা হয়েছে, সে কথায় ছিটেফোঁটাও সত্যতা যদি থাকত তবে আজ টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থা থাকতো অনেক উপরে।
আগে একটা অভিযোগ বোর্ড থেকে করা হত যে পর্যাপ্ত সময়ের অভাবে কাজ সম্পন্ন হচ্ছে না। তবে সর্বশেষ কমিটি বোর্ডে আছে ১০ বছরের কাছাকাছি। এত সময় পেয়েও আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা তৈরির প্রস্তাব উত্থাপিত করেছেন তারা, আলোর মুখ এখনো দেখেনি। ডিপিএল, বিপিএল, বিসিএল বা এনসিএল যাইহোক না কেন ঢাকায় ক্রিকেট হলে সব দলকে আসতে হয় মিরপুরের প্র্যাকটিস গ্রাউন্ডে। যেখানে পাশের দেশ ভারত তাদের ১ম শ্রেনী ও ২য় শ্রেনীর ক্রিকেটারদেরকে সর্বোচ্চ সুবিধা সরবরাহ করে, সেখানে বিসিবি সক্ষমতা থাকার পরও জাতীয় দল থেকে ফর্মের কারণে বাদ পড়া ক্রিকেটারদেরই যথেষ্ট সুবিধা প্রদান করতে ব্যর্থ। ‘এ’ দলের জন্য নেই আলাদা সুযোগ-সুবিধা। বাংলাদেশের ক্রিকেট কর্তা ও খেলয়াড়দের কাছে সবচেয়ে পছন্দের টুর্নামেন্ট ডিপিএল। সেই ডিপিএলের নেই নির্ধারিত স‚চি। দেশের ক্রিকেট যেই ক্লাবগুলোর মাধ্যমেই পথচলা শুরু করেছিল সেই ক্লাব গুলোই হতে পারেন পেশাদার। এই ক্লাবগুলোর সাথে আবার জড়িত ক্রিকেট বোর্ডের কর্তারাই।
এবার সরাসরি আসা যাক টি-২০তে খুবই নিন্মমানের ব্যাটিং শৈলীর ব্যাখ্যায়। ডিপিএল বা এনসিএল সব জাগাতেই যে পিচ থাকে তা আদতে স্পোর্টিং না। এই ধরণের সেøা উইকেটে খেলে কোনদিনই অন্তত ঝড়ো ইনিংস খেলা শিখবে না দেশের ব্যাটসম্যানরা। একমাত্র ক্রিকেট বোর্ড ছাড়া সবাই একবাক্যে বলে যে ‘হোম অব ক্রিকেটের’ প্রধান কিউরেটর গামিনী ডি সিলভার আর দেওয়ার কিছুই নাই এই দেশের মাঠগুলোকে। কিন্তু এক অদৃশ্য শক্তির বলে গামিনী সদা বিরাজমান। গত অক্টোবরের টি-২০ বিশ্বকাপের আগে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মত দুই ক্রিকেট পরাশক্তির সাথে দাপটে কুড়ি ওভারের সিরিজ জেতে বাংলাদেশ। কিন্তু টাইগারদের এই সংস্করণের আসল চেহরা ফুটে উঠে বিশ্বকাপের স্পোর্টিং উইকেটে। আফিফ, সোহান বা মেহাদির মতন যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যাটারদের সেরাটা বের করতে লাগবে উন্নত মানের পিচ।
জিম্বাবুয়ের সাথে হারারেতে তৃতীয় টি-২০ হারার জন্য যতটা ক্রিকেটারদের মাঠের পারফরম্যান্স দায়ী ঠিক ততটাই বোর্ডের মাঠের বাহিরে সিধান্তও দায়ী। এই সিরিজের আগে সোহানকে অধিনায়ক করা হলো, ঠিক সামনেই যখন এশিয়া কাপ ও টি-২০ বিশ্বকাপ। এই সিধান্তটা যদি গত বছরের বিশ্ব টি-২০’র আসরের পর পরই নেওয়া হত তাহলে সাদুবাদ দেওয়া যেত বোর্ডকে। কিন্তু বোর্ড এমন সময় পরিবর্তন আনল যখন মোমেন্টাম বা মানসিকতায় বিশাল থাবা দিতে পারে এই সিদ্ধান্ত। সোহান শেষ ম্যাচে চোটের কারণে খেলতে পারবেন না, আপনি সেই জায়গাটা যদি সদ্যই প্রাক্তন রিয়াদকে দিয়েই প‚রণ করবেন তাহলে অধিনায়কের দায়িত্ব কেন মোসাদ্দেকের কাঁধে? যে মোসাদ্দেক এখনও দলে নিজের জায়গাটা পাকা করতে পারেননি! যে জিম্বাবুয়ে পাকিস্তানকেও টি-২০ ম্যাচে হারায়, সে দলের বিপক্ষে এমন অপরিপক্ক এবং অপেশাদার সিদ্ধান্তের সুযোগ কি তারা নেবে না?
সুযোগ-সুবিধা ও আর্থিক সঙ্গতির মতো আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে ঢের পিছিয়ে জিম্বাবুয়ে। বোর্ডের মাপকাঠিতেও (যদি অর্থই সকল মানদÐ হয়) বিসিবির কাছে জেডসিবি তো নস্যি! ক্রিকেটহীন সময়টা তাদের ক্রিকেটারদের অনেকেই পার্ট-টাইম কাজ করেই জীবন পরিচালনা করেন- এমন গল্প বাংলাদেশ সফরে এসে বহুবার শুনিয়েছেন দেশটির ক্রিকেটাররা। বিশ্বকাপের মতো একটি আসরের আগে সেই দেশের কাছেই সিরিজ হারের পর বাংলাদেশের মেরুদÐ সোজা করা হয়তো কুব একটা সহজ হবার কথা নয়!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।