নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
অধিনায়কের প্রতি সাব্বির-মুমিনুল-তাসকিনদের আনুগত্য সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। প্রথম দিনে টসভাগ্যে জেতার পর সবাইকে অবাক করে দিয়ে বাংলাদেশের ফিল্ডিং বেছে নেওয়াটা সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল বলে সংবাদ সম্মেলনে বার বার আওড়ে যান সাব্বির রহমান। এরপর একটি করে হতাশাময় দিন পার হয়, কিন্তু সুর পরিবর্তন হয় না। একই সুরে কথা বলেন বাকিরাও। বোলিংয়ে সারা দিন হতাশাময় সময় কাটানোর পরও তাসকিনের কন্ঠে তাই শোনা যায় ‘সফল’তার সুর। রানের পাহাড়ে চাপা পড়ে মুমিনুলদের কন্ঠে ‘ভালো কিছু করা সম্ভব’এর আশ্বাস।
এরপরও ভালো কিছু করা অবশ্যই সম্ভব ছিল। কিন্তু ভালো করতে হলে ২২ গজে যা করা দরকার ছিল তা বেমালুম ভুলে গেলেন মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ-ইমরুল-লিটনরা। গতকাল তারা যেন ব্যাটিং নয়, নেমেছিলেন আত্মহত্যার মিছিলে। পচেফস্ট্রুম টেস্টের পঞ্চম দিনের খেলা দেড় ঘন্টা না পেরুতেই ৩৩৩ রানের বিশাল ব্যবধানে ম্যাচও জিতে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। রানের ব্যবধানে টেস্টে যা বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হার। ২০০৯ সালে চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার কাছে ৪৬৫ রানে হেরেছিল বাংলাদেশ।
আগের দিন বৃষ্টির কারণে পুরো এক সেশন খেলাই হয়নি। বাংলাদেশের জন্যে যা এসেছিল আশির্বাদ হয়। আশির্বাদ হয়ে এসেছিল আগের দিন তামিম ও মুমিনুলকে শূন্য রানে ফেরানো মরনে মর্কেলের ইনজুরিও। কিন্তু এর কোন সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ দিন শেষ করেছিল ৩ উইকেটে ৪৯ রান নিয়ে। গতকাল লক্ষ্য ছিল হাতের ৭ উইকেট কাজে লাগিয়ে দিনের পুরো ৯০ ওভার কাটিয়ে দেওয়া। কিন্তু টিকতে পারল না এক সেশনও। মাত্র ৩২.৪ ওভার আর ১ ঘন্টা ২০ মিনিটেই সব শেষ। চোটের কারণে মর্কেলের অনুপস্থিতিটা যেন তাতিয়ে দিয়েছিল প্রেটিয়া দলের আরেক পেসার কাসিগো রাবাদাকে। মাত্র ৪ ওভারের ব্যবধানে মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ-লিটনকে নিজ শিকারে পরিণত করে বাংলাদেশকে দ্রæত গুটিয়ে দেওয়ার কৃতিত্ব তারই। ঘূর্ণি বলে লেজের অংশ গুটিয়ে বাকি কাজটা সারেন কেশভ মহারাজ।
টাইগার দলের সবচেয়ে বড় ভরসা হয়ে ছিলেন যে মুশফিকুর রহিম, সেই তিনিই আত্মহত্যার সামিলে নাম লেখান সবার আগে। নিজের নামের পাশে এদিন কোন রান যোগ না হতেই ফেরেন কাসিগো রাবাদার শিকার হয়ে। অফ স্টামের অনেক বাইরে প্রোটিয়া পেসারের লাফিয়ে ওঠা বলে ওভাবে খোঁচা না দিলেও পারতেন টাইগার দলনেতা। প্রথম ¯িøপে দাঁড়িয়ে মাথার উপর থেকে ক্যাচটা লুফে নিতে একদম বেগ পেতে হয়নি হাশিম আমলাকে।
রাবাদারই আরেক লাফিয়ে ওঠা বল ডিফেন্স করে স্টামে নেন ৯ রান করা মাহমুদুল্লাহ। আর লিটন তো রাবাদার ইনসুইঙ্গার বলটা পড়তেই পারেননি। লাইনে না গিয়ে ইচ্ছা করে বল ঠেকান প্যাড দিয়ে। স্পষ্টই দেখা যাচ্ছিল বল স্টামে আঘাত হানবে। রিভিউ নিয়েও তাই বাঁচতে পারেননি ৪ রান করা লিটন। বাংলাদেশের হার এরপর সময়ের ব্যাপারে পরিণত হয়।
কিছুটা প্রতিরোধ গড়তে পারতেন সাব্বির রহমান। তাতে হয়তো পরাজয়ের ব্যবধানটাও কমত। কিন্তু কেশব মহারাজের স্পিন বলে বিলাশবহুল সুইপ শট খেলতে গিয়ে বলের লাইন মিস করে তিনিও ফেরেন এলবিডবিøউয়ের শিকার হয়ে। বাকি সময়ে একটি করে ছক্কা চারে ১৫ রানে অপরাজিত থেকে কিছুটা প্রতিরোধের চেষ্টা করেন মিরাজ। ইমরুল ও মুশফিকের পর দুই অঙ্কের রান কেবল তারই। কিন্তু অপর প্রান্তে মহারাজে বলি হয়ে তাসকিন-মুস্তাফিজদের ফেরা ও শফিউলের অযাচিত রান আউট মিরাজের সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়। বাংলাদেশও গুটিয়ে যায় মাত্র ৯০ রানে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে যা সর্বনি¤œ। প্রটিয়া সফরও বাংলাদেশের শুরু হলো হার দিয়ে।
ইতিহাসের পাতা বলছে এর আগে সর্বশেষ বাংলাদেশ একশ রানের আগে গুটিয় গিয়েছিল দশ বছর আগে, শ্রীলঙ্কার পি সারাহ স্টেডিয়ামে। সেবার ৬২ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। নিজেদের টেস্টে ইতিহাসে যা সর্বনি¤œ স্কোরের রেকর্ড। একই সফরে আগের টেস্টে এসএসসিতে ৮৯ রানে আলআউট হয়ছিল বাংলাদেশ। টাইগারদের দ্বিতীয় সর্বনি¤œ স্কোরটাও শ্রীলঙ্কায় স্বাগতিকদের বিপক্ষে। ২০০৫ সালে প্রেমাদাশে ৮৬ রানে শেষ হয়েছিল বাংলাদেশের ইনিংস। সব মিলে এ নিয়ে নয়বার স্কোর বোর্ডে একশ হওয়ার আগেই অল আউট হলো বাংলাদেশ।
টেস্টে বাংলাদেশের সর্বনি¤œ স্কোর
স্কোর ওভার প্রতিপক্ষ মাঠ সাল
৬২ ২৫.২ শ্রীলঙ্কা কলম্বো ২০০৭
৮৬ ২৭.৪ শ্রীলঙ্কা কলম্বো ২০০৫
৮৭ ৩১.৫ উইন্ডিজ ঢাকা ২০০২
৮৯ ৩২.৩ শ্রীলঙ্কা কলম্বো ২০০৭
৯০ ৩৬.৪ শ্রীলঙ্কা কলম্বো ২০০১
৯০ ৩২.৪ দ. আফ্রিকা পচেফস্ট্রুম ২০১৭
স্কোর কার্ড
বাংলাদেশ-দ.আফ্রিকা, ১ম টেস্ট
সেনউইস পার্ক, পচেফস্ট্রুম
দ.আফ্রিকা: ৪৯৬/৩ ডিক্লে. ও ২৪৭/৬ ডিক্লে.
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ৩২০
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস রান বল ৪ ৬
তামিম ব মর্কেল ০ ২ ০ ০
ইমরুল ক ডি কক ব মহারাজ ৩২ ৪২ ৫ ০
মুমিনুল এলবিডবিøউ ব মর্কেল ০ ২ ২ ০
মুশফিকুর ক আমলা ব রাবাদা ১৬ ৫৫ ১ ০
মাহমুদুল্লাহ ব রাবাদা ৯ ১৮ ১ ০
লিটন দাশ এলবিডবিøউ ব রাবাদা ৪ ১৬ ০ ০
সাব্বির এলবিডবিøউ ব মহারাজ ৪ ৮ ১ ০
মিরাজ অপরাজিত ১৫ ৩২ ১ ১
তাসকিন এলবিডবিøউ ব মহারাজ ৪ ৯ ০ ০
শফিউল রান আউট (ডু প্লেসি/রাবাদা/ডি কক) ২ ১ ০ ০
মুস্তাফিজ ক ও ব মহারাজ ১০ ১২ ২ ০
অতিরিক্ত (লে বা ১, নো ২) ৩
মোট (৩২.২ ওভার, অল আউট) ৯০
উইকেট পতন : ১-০ (তামিম), ২-০ (মুমিনুল), ৩-৪৯ (ইমরুল ), ৪-৫৫ (মুশফিক), ৫-৬২ (মাহমুদুল্লাহ), ৬-৬৭ (লিটন), ৭-৬৭ (সাব্বির), ৮-৭১ (তাসকিন), ৯-৭৫ (শফিউল), ১০-৯০ (মুস্তাফিজ)।
বোলিং : মর্কেল ৫.২-২-১৯-২, রাবাদা ১০-৩-৩৩-৩, ওলিভার ৫.৪-১-১২-০, মহারাজ ১০.৪-১-২৫-৪, ফেলকওয়ায়ে ১-১-০-০।
ফল : দক্ষিণ আফ্রিকা ৩৩৩ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা : ডেন এলগার
সিরিজ : ২ ম্যাচ সিরিজে দ. আফ্রিকা ১-০তে এগিয়ে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।