নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
স্পোর্টস রিপোর্টার : প্রথম ইনিংসের প্রথম সেশনে ৯৯, দ্বিতীয় সেশনেও তাই, শেষ সেশনে ১০০। দিন শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ ১ উইকেটে ২৯৮। পচেফস্ট্রুম টেস্টের দ্বিতীয় দিনেও একই ছবি। প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের সামনে অসহায় বাংলাদেশের বোলাররা। গতকাল প্রথম সেশনে মুস্তাফিজ-মিরাজরা এতটুকু আঁচড় কাটতে পারেননি দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিংয়ে। ১ উইকেটে ৪১১ রান তুলে লাঞ্চে যায় প্রোটিয়ারা। আগের দিন সেঞ্চুরি করা ডিন এলগার ১৭২ ও হাশিম আমলা অপরাজিত ছিলেন ১৩৭ রানে। তবে লাঞ্চ থেকে ফিরেই শফিউল যাদু। এই পেসারের অফ স্ট্যাম্পের বেশ বাইরের বলে রান আদায় করে নেয়ার লোভে ব্যাট চালিয়ে পয়েন্টে থাকা মিরাজের হাতে ক্যাচ তোলেন ১৩৭ রান করা আমলা। সেই সাথে সমাপ্তি ঘটে আমলা-এলগারের গড়া ডাবল সেঞ্চুরি পার্টনারশিপের।
আমলার বিদায়ে নতুন ব্যাটসম্যান টেম্বা বাভুমাকে দ্রæত সাজঘরে ফেরানোর সুযোগ এসেছিল ইনিংসের ১২৬তম ওভারে। তাসকিনের শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে পরাস্ত হওয়ার আগে বল বাভুমার ব্যাট ছুঁয়ে গিয়েছিল। রিভিউর সাহায্য নিলে ৪ রানেই সাজঘরে ফিরতে হতো বাভুমাকে। তবে আবারও বাংলাদেশের সিদ্ধান্তহীনতায় বেঁচে যান এই ব্যাটসম্যান। তার কিছু পরেই ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ১ রান দূরে থেকে এক রাশ হতাশা নিয়ে সাজঘরে ফেরেন এলগার। ওভারের প্রথম বলটি বাউন্সার মেরেছিলেন মুস্তাফিজ। পরেরটি আবারও শর্ট বল। এলগার না ভালো করে পুল করলেন, না ঠিক ছাড়লেন। বল ভাসল বাতাসে, জমল মিড উইকেটে মুমিনুলের হাতে। বাঁহাতি ওপেনার আউট ১৯৯ রানে! ড্রেসিং রুমে মাথায় হাত দিয়ে বসে তখন এইডেন মারক্রাম। এলগারের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে আগের দিন যিনি আউট হয়েছিলেন ৯৭ রানে।
তবে তার আগে একটি জীবন পাওয়া এলগার যা করে গেলেন তাতে বাংলাদেশকে ভুগতে হবে বেশ। তার ৩৮৮ বলের ইনিংসে চার ১৫টি, ছক্কা ৩টি। টেস্ট ইতিহাসে এ নিয়ে ১২বার ১৯৯ রানে থমকে গেলেন কোনো ব্যাটসম্যান। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে এই প্রথম। বাংলাদেশের বিপক্ষেও প্রথমবার। তারপর উইকেটে থাকা টেম্বা বাভুমার সাথে যোগ দেন প্রোটিয়া অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস। এই দুজনের ব্যাটেই ১৪৬ ওভার শেষে ৩ উইকেট হারিয়ে ৪৯৬ রান নিয়ে চা পানের বিরতির আহে ইনিংস ঘোষনা করে দক্ষিণ আফ্রিকা।
টেস্টে বাংলাদেশের এমন ভোগান্তি নতুন কিছু নয়। বাংলাদেশের বোলারদের হতাশার গল্প বলতে গেলে সবার আগে আসবে ২০০৮ সালের ফেব্রæয়ারিতে চট্টগ্রামে নিল ম্যাকেঞ্জি-গ্রায়েম স্মিথের ওপেনিং জুটিতে তোলা ৪১৫ রানের রেকর্ডটা। এই রেকর্ডের পুনরাবৃত্তি না হলেও ২০০৭ সালের মে মাসে ঢাকা টেস্টেও এমন ভুগিয়েছিলেন দিনেশ কার্তিক ও ওয়াসিম জাফর। সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন ভারতীয় দুই ওপেনার। ১৩৮ রানে জাফর আহত অবসর নেওয়ার পর বাংলাদেশ যখন প্রথম উইকেটের দেখা পেল ততক্ষণ ভারত করে ফেলেছে ৪০৮। যে দুটি টেস্টের কথা বলা হলো, দুটিতেই বাংলাদেশ হেরেছে ইনিংস ব্যবধানে।
ন্যাড়া উইকেটে দুর্দান্ত ব্যাটিং করা প্রোটিয়ারা এত ‘অল্পে’ বাংলাদেশকে ছেড়ে দিল ভেবে নিশ্চয়ই অবাক হয়েছেন! তবে তার চেয়ে অবাক করার বিষয়, তামিম ইকবাল কেন ওপেন করতে নামেননি! তামিমের জায়গায় ইমরুলের সঙ্গে প্রথমবারের মতো টেস্টে ওপেন করতে নেমেছেন লিটন দাস। তামিম চা বিরতির আগে ৪৯ মিনিট ছিলেন মাঠের বাইরে। তিনি ভাবতেও পারেননি চা বিরতির পর হুট করে দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংস ঘোষণা করবে। নিয়ম অনুযায়ী তামিম যতক্ষণ মাঠের বাইরে ছিলেন ঠিক ততক্ষণ তিনি ব্যাটিয়ে নামতে পারবেন না। বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট ওপেন করতে পাঠান লিটনকে।
ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ডান-বাঁহাতি সমন্বয় নিয়ে যখন বিপাকে বাংলাদেশ, মুশফিকুর রহিম চারে ব্যাটিং করতে নামেননি ১২০ ওভার কিপিং করেছেন বলে। আর গতকাল লিটন ওপেন করতে নেমেছেন ১৪৬ ওভার কিপিং করার ক্লান্তি নিয়ে। তামিমেরও একটা নতুন অভিজ্ঞতা হচ্ছে পচেফস্ট্রুমে। টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ওপেনিং করতে পারলেন না তিনি।
নেমেই দুর্দশা। দক্ষিণ আফ্রিকায় যাওয়ার আগে যেটি নিয়ে ছিল সবচেয়ে বড় ভয়, সেটির ছোবলই লাগল সবার আগে। শর্ট বল! কাগিসো রাবাদার শর্ট বল সামলাতে পারলেন না ইমরুল। গøাভসে লেগে বল গেল গালিতে, মারক্রামের হাতে সহজ ক্যাচ। ৭ রানে আউট হলেন ইমরুল। তার দুঃসময় দীর্ঘায়িত হলো আরেকটু। সবশেষ ১৬ ইনিংসে ফিফটি করেছেন মাত্র একটি। এই ইনিংসের আগে সবশেষ ৫ ইনিংস ০, ০, ২, ৪ ও ১৪!
সেই ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই আবারও বিপর্যয়। শুরুতে একটু নড়বড়ে থাকলেও পরে বেশ ভালো খেলছিলেন লিটন দাস। টানা দু বলে চার মেরেছিলেন মর্নে মর্কেলকে। কিন্তু আউটও হলেন মর্কেলের বলেই। শর্ট বলে অবশ্য নয়, অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে। বেশ বাইরের যে বল অনায়াসে ছাড়া যেত, সেটিই খেলতে গেলেন। ব্যাটের কানা ছুঁয়ে প্রথম ¯িøপে আমলার হাতে ক্যাচে থামে ২৫ রানের ইনিংসটি। বিপর্যয় ঠেকাতে নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও ব্যাটিংয়ে আসেন নি তামিম। ক্রিজে থাকা টেস্ট মাস্টার মুমিনুলকে সঙ্গ দিতে এসেছেন অধিনায়ক মুশফিক। থিতু হয়েও ফিফটির আগেই ফিরতে হয়েছে অধিনায়ককেও। ৪৪ রানে মুশফিক আউট হবার পর গতকালই নামতে হয়েছে তামিমকেও। রিপোর্টটি লেখা পর্যন্ত (৩১ ওভার) ৩ উইকেট হারানো বাংলাদেশের সংগ্রহ ১১৬।
যে পিচে উইকেট পেতে ধুঁকেছে বাংলাদেশের বোলাররা, সেই উইকেট কি তবে বদলে গেল?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।