Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ক্লান্ত মিরপুরে উইকেট বিতর্ক

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০০ এএম

খেলা ততক্ষণে শেষ। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের মাঝমাঠে মোহামেডান ও রূপগঞ্জ টাইগার্সের ক্রিকেটাররা সারিবদ্ধ হয়ে হাত মিলিয়ে যে যাঁর ড্রেসিংরুমের পথ ধরছিলেন। মোহামেডান ক্যাম্পে তখন একটা দমবন্ধ অনুভূতি। সেটির কারণ যে রূপগঞ্জের বিপক্ষে ৭ উইকেটের হার নয়, তা মাঠে উপস্থিত সবারই জানা। থমথমে মোহামেডান দল যখন ড্রেসিংরুমে ঢুকবে, তখনই দূর থেকে রূপগঞ্জের এনামুল হক জুনিয়র মোহামেডান অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর নাম ধরে ডাক দিলেন। এনামুলের ডাক শুনে মাহমুদউল্লাহও এগিয়ে এলেন। এই ম্যাচের প্রথম ইনিংস ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে দুজন কিছুক্ষণ কথা বললেন। পরে এনামুলের পিঠ চাপড়ে মাহমুদউল্লাহ ড্রেসিংরুমের পথ ধরেন।
লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো পাঁচ উইকেট নেওয়া এনামুল এগিয়ে যান ম্যাচসেরার পুরস্কার নিতে। ম্যাচ রেফারি শওকতুর রহমানও এগিয়ে এলেন। তার সঙ্গে হেঁটে যাওয়ার সময় এনামুল বলছিলেন, ‘এই ঘটনা কিন্তু আমাদের সঙ্গেও ঘটতে পারত।’ শওকতুর রহমানও যেন এনামুলের কথা সায় দিলেন।
ঘটনাটি ঘটে টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নামা মোহামেডান ইনিংসের ৩৭তম ওভারের প্রথম বলে। এনামুলের অফ স্টাম্পের বাইরের আর্ম বলটি মাহমুদউল্লাহর ব্যাট ছুঁয়ে উইকেটকিপার জাকির হাসানের গ্লাভসে যায়। ভালো লেংথ থেকে বলটি অস্বাভাবিক নিচু হওয়ায় কাট শট খেলার চেষ্টায় টাইমিংয়ে গড়বড় হন মাহমুদউল্লাহ। ৫২ বল খেলে ২টি চার ও ২টি ছক্কার পর মাহমুদউল্লাহ আউট হয়ে ড্রেসিংরুমের দিকে ফেরার পথে মাঠের বাইরে থাকা মাঠকর্মীর দিকে ব্যাট উঁচিয়ে কী যেন বলছিলেন। রাগে ফুঁসতে থাকা মাহমুদউল্লাহ ড্রেসিংরুমে প্রবেশ করেন দরজায় সজোরে লাথি দিয়ে। অসমান বাউন্সের উইকেট নিয়েই হয়তো মাহমুদউল্লাহর যত হতাশা।
এনামুল পরের বলেও উইকেট পেয়েছেন। মোহামেডানের পেসার ইয়াসির আরাফাতকে করা পরের বলটি ভালো লেংথ থেকে লাফিয়ে আঘাত করেছে অফ স্টাম্পের মাথায়। পরপর দুটি বলে বাউন্সের এমন তারতম্য ভুগিয়েছে মোহামেডানকে, শেষ পর্যন্ত অলআউট হয়েছে ১৪৩ রানে, যা ৩৬.২ ওভার খেলে টপকে যায় রূপগঞ্জ। আজকের পরাজয় মোহামেডানের সুপার লিগে পথটা কঠিনই হয়ে গেল, অন্যদিকে সুপার লিগ সম্ভাবনার দুয়ার খুলে গেছে রূপগঞ্জের।
তবে ম্যাচ শেষে সব আলোচনা ছিল মাহমুদউল্লাহর ওই ঘটনা নিয়ে। মাঠে অখেলোয়াড়সুলভ আচরণের জন্য মাহমুদউল্লাহর শাস্তি হবে কি না- এ নিয়ে ম্যাচ রেফারির কাছে ছিল সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসা। পুরস্কার বিতরণ শেষে শওকতুর রহমানকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে এক সূত্র এ ব্যাপারে বলেছে, ‘আচরণবিধি ভঙ্গ হয়েছে বলে মনে হয় না। এটা বড় কোনো সমস্যা মনে হয়নি। তারপরও একটা প্রটোকল আছে, সেই অনুযায়ী আমরা আম্পায়ারদের রিপোর্ট দেখে সিদ্ধান্ত নেব।’
এত বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে মূলত মিরপুরের অসমান উইকেট। ম্যাচ শেষে এনামুলকে উইকেটের আচরণ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলছিলেন, ‘উইকেট খুবই কঠিন ছিল। সকালবেলায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ টস আমরা জিতে গিয়েছিলাম। উইকেট সেøা ছিল, স্পিনিং ছিল। পুরোটা আমরা কাজে লাগিয়েছি। আমরা ব্যাটিং করলেও আমাদের এ সমস্যা হতে পারত। সুযোগটা সবাই কাজে লাগাতে না পারলেও আমরা পেরেছি।’
কেন মিরপুরের উইকেটের এমন আচরণ- এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বিসিবির গ্রাউন্ডস কমিটির প্রধান মাহবুব আনামের সঙ্গে সংবাদকর্মীরা কথা বলার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তিনি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে বিসিবির এক কর্মকর্তা উইকেট প্রসঙ্গে হতাশাই প্রকাশ করলেন, ‘কিছু করার নেই। এক মাঠে এত খেলা হলে কীভাবে ভালো উইকেট বানানো সম্ভব। একটা ওয়ানডে ম্যাচের পর ওই উইকেট কমপক্ষে এক সপ্তাহ বিশ্রামে রাখা উচিত। কিন্তু এখানে কি সেটা সম্ভব। আমাদের মাঠ নেই। কিন্তু খেলা চালাতেই হবে। এমন ক্লান্ত উইকেটে খেলা চালালে আজকের (গতকাল) মতো ঘটনা তো ঘটবেই।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ক্লান্ত মিরপুরে উইকেট বিতর্ক
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ