পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
তিন সন্তানের জননী আসমা বেগমের (৩৫) বান্ধবীর বাসায় আর দাওয়াত খাওয়া হলো না। প্রাইভেটকারের ধাক্কার ৪বছরের শিশু কন্যার সামনেই প্রান গেল তার। শিশুটি প্রানে বেঁচে গেলেও মায়ের মৃত্যুর মর্মান্তিক দৃশ্য ভয়ে নিয়েই কাটাতে হবে সারাটা জীবন। গতকাল শনিবার সকালে যাত্রাবাড়ীর মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়ালসেতুর নিচে রাস্তা পার হওয়ার সময় দ্রæতগতির একটি প্রাইভেট কার ধাক্কা দিলে মা-মেয়ে দু’জন আহত হয়। পরে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা আসমাকে মৃত ঘোষনা করেন। দেশে আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে সড়ক দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো অঞ্চলে সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করার কারণেই এর পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়ার কারণেই এ দেশের মানুষ আপনজন হারিয়ে চোখের পানি ঝরাচ্ছে আর নিঃস্ব হচ্ছে অসংখ্য পরিবার। গতকাল দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে গিয়ে আসমা বেগমের লাশ শনাক্ত করেন স্বামী আবুল কাশেম। আবুল কাশেম এসময় সাংবাদিকদের বলেন, ধোলাইড়পাড়ের এক নম্বর গলিতে তাঁরা বসবাস করেন। দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে তাঁদের সংসারে। গতকাল সকালে এক বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার জন্য মেয়েকে নিয়ে বের হয়েছিলেন তার স্ত্রী। স্ত্রী আসমার লাশ শনাক্তর পর ক্ষুব্ধ আবুল কাশেম বলেন, অহন আমি কার কাছে বিচার চামু। মামলা কইরা তো বিচার হয় না। গাড়িটারে (প্রাইভেট কার) পাবলিকে ধাওয়া দিসিল। কিন্তু ধরতে পারে নাই। পুলিশ ধরসে কিনা জানি না। তবে নূর নাহার সুস্থ আছে। ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই বাচ্চু মিয়া জানান, নূর নাহার সুস্থ আছে। সে শুধু মা ও তার নাম বলতে পারে। পরে নিহতের স্বামী মর্গে এসে লাশ শনাক্ত করেন। এর আগে ১২ সেপ্টেম্বর দুপুরে শেওড়াপাড়া ও কাজীপাড়ার মাঝামাঝি জায়গায় তেঁতুলিয়া পরিবহনের একটি বাসের ধাক্কায় প্রাণ যায় মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি স্কুল ও কলেজের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী তাসনিম আলম তিশার। স্কুল ছুটির পর মা রিমা আক্তার ও পাঁচ বছর বয়সী ছোট ভাই তাহমিদ আলমের সঙ্গে নিজের বাসায় ফিরছিল তিশা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেপরোয়া গাড়ি চালানো এবং চালকের প্রশিক্ষনের অভাবের কারনেই সড়ক দুঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া সড়ক দুঘটনার পর চালকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা সম্ভব হয় না। নানা কৌশলে গাড়ি চালকরা ছাড় পেয়ে যায়। তাছাড়া সড়ক দুঘটনা নিয়ে সাধারন মানুষের মধ্যে সচেতনতারও অভাব রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
সূত্র মতে, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য একতরফা বাস চালকদের দায়ী করা সমীচীন নয়। পথচারীদের অসতর্কতা, দায়িত্বহীনতার পাশাপাশি ক্রটিপূর্ণ সড়কপথও দুর্ঘটনার জন্য বহুলাংশে দায়ী। এর পাশাপাশি হাইওয়েতে স্কুটার, নসিমন, করিমন, রিকসাভ্যানসহ অন্য ছোট আকারের যানবাহন চলাচলও দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। সেই সাথে পরিবহন মালিকদের অতিমুনাফা প্রবৃত্তি এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর উদাসীনতার কারণে ফিটনেস বিহীন গাড়ি চালাতে বাধ্য হন পরিবহন চালকরা। সড়ক দুর্ঘটনার আরেকটি কারণ এটিও। তাছাড়া খরচ কমানোর জন্য বেশির ভাগ পরিবহন মালিক শ্রম আইনে বর্ণিত কাজের সময়সীমা না মেনে পরিবহন শ্রমিকদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৮ ঘণ্টা কাজ করিয়ে থাকেন। ক্লান্ত ও অবসন্ন বাস চালকরা অনেক সময় অসাবাধনতা বশতঃ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটিয়ে থাকেন। যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যমতে, গত বছর দুর্ঘটনা প্রান হারিয়েছেন ছয় হাজার ৫৮১জন। এই হিসাব মতে, গত বছর প্রতিদিন গড়ে দুই ডজন করে মানুষ রাস্তায় প্রাণ হারিয়েছে। দেশে কমপক্ষে কয়েক লাখ চালকের কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। অথচ তারা দীর্ঘদিন ধরে গাড়ি চালাচ্ছেন। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে নানা রকম কথাবার্তা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম থেমে নেই, মানুষকে সচেতন করতে হাজারো আলোচনা সভাও হচ্ছে। কিন্তু অবস্থার যেন কোনো উন্নতি নেই। প্রতিদিনই এই মৃত্যুর মিছিলে মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিনই আমরা হারিয়ে ফেলছি আমাদের অনেক স্বজন। সড়ক দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করে বিশেষজ্ঞরা বের করে এনেছেন অনেক বিষয়, কিন্তু সেগুলোর যথাযথ সমাধান হয়নি, ফলে সড়ক দুর্ঘটনার পরিমাণও কমেনি। সূত্র জানায়, সারাদেশে গত আট মাসে ২ হাজার ৪১৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২ হাজার ৮৭৩ জনের প্রাণ ঝরেছে। এ সব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও সাড়ে ৬ হাজার ৫০০ জন। নিহতদের মধ্যে ৩৪৪ নারী ও ৩৮১ শিশু রয়েছে। জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন সড়ক, মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।