পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ত্রাণ বিতরণের সময় ইতিহাসের ভয়াবহতম নৃশংসতা দেখে ও অমানবিক মগ অত্যাচারের কাহিনী শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন প্রতিটি সহৃদয় ব্যক্তি। হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব কর্মসূচি ঘোষণার আগেই ফোনে কথা বলেছিলেন। এ ছিল তার মিডিয়ার সাথে যোগাযোগের অংশ। ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল, দূতাবাস ঘেরাও, জাতিসংঘসহ অন্যান্য ফোরামের অফিসে স্মারকলিপি প্রদান ইত্যাদি বিষয় জানাতে। এরপর উখিয়া ও টেকনাফে ত্রাণ দিতে গিয়ে তার ক্রন্দন দেশবাসীকে দারুণভাবে স্পর্শ করে। কান্না সংবরণ করতে পারেননি সরকারের মন্ত্রী থেকে শুরু করে নাগরিকসমাজের নেতারাও। ত্রাণ বিতরণ করছেন জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের নেতৃবৃন্দ। গড়ে চল্লিশজনের বেশি নেতা ত্রাণকার্যে অংশ নিচ্ছেন। রোহিঙ্গা মজলুম মুহাজিরদের জন্য আপাতত একটি মসজিদের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন তারা। অন্যদের পাশাপাশি ত্রাণ দিচ্ছে দেশের বিভিন্ন খানকাহ ও দরবার, বিভিন্ন ইসলামী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, দল ও সংগঠন। খেলাফত মজলিসের মাওলানা মাহফুজুল হকসহ বহু ইসলামী নেতা ও ব্যক্তিত্ব ওখানেই পড়ে আছেন। খাদ্য, ওষুধ, নগদ টাকা পৌঁছে দিচ্ছেন বিপন্ন মানুষের হাতে। ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামসহ বিভিন্ন সংগঠন কাজ করছে। সমন্বয়ের খবর পাচ্ছি শীর্ষ নেতৃবৃন্দের ফোনে। কথা বলেছেন মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা ফজলুল করিম কাসেমী। চরমোনাইয়ের পীর সাহেব, ছোট ভাই মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিম নিবেদিত হয়ে কাজ করছেন। মসজিদ করে দিয়েছেন। নলক‚প বসাচ্ছেন অগণিত। কিছু লঙ্গরখানা নিয়মিত চালু রেখেছেন তারা। দেশব্যাপী দীনি লাইনের নেতারা রাত-দিন সব জানাচ্ছেন। টেকনাফ ও উখিয়ায় যত আলেম, মুরব্বি, ছাত্র ও ভক্ত প্রত্যেকেই একেকজন অভিভাবক হয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সারাদেশ থেকে যাওয়া আলেম ওলামা, পীর মাশায়েখ ও ধর্মীয় কর্মীবাহিনীকে। অসংখ্য মাদরাসায় চলছে দু’বেলা খিচুড়ির লঙ্গর। ওলামা ওরিয়েনটেড নিউজ পোর্টাল, সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতোমধ্যে জনসেবার কিছু শিরোনামে সিরিজ ছাপা হচ্ছে। নাম লিখে শেষ করা যাবে না, এমন শত আলেম নেতৃত্বে আছেন যারা রাজশাহী, রংপুর, যশোর, খুলনা ও বরিশাল থেকে এসেছেন। ঢাকা, সিলেট, মোমেনশাহী ও নোয়াখালী থেকে ঈদ শেষেই ছুটে গিয়েছিলেন সীমান্তে। শত শত বোরকা দিয়েছেন রোহিঙ্গা মা-বোনদের। দিয়েছেন জামা-কাপড়, ত্রিপল, তাঁবু, কলস, থালা, চামচ, বাসন, ছাতা ইত্যাদি। যারা কক্সবাজার থেকে মিয়ানমার পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে রয়েছেন এমন ২০-৩০ হাজার মানুষ ছাড়া আরো ৩-৪ লাখ রোহিঙ্গা যে গভীর অংশে রয়েছেন তাদের হাতেও কিছু পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করছেন আলেমরা। জায়গায় জায়গায় নামাজের ব্যবস্থা করা, অসুস্থ অথর্বদের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া, নারী- শিশুদের লাইনে দাঁড়ানো থেকে রক্ষা ইত্যাদি সবই অন্তর দিয়ে করছেন মাদরাসা শিক্ষার্থীরা। অদল-বদল করে তারা একদল যাচ্ছেন একদল আসছেন। দূরবর্তী জেলা থেকে তারা যাচ্ছেন হয়তো ভাড়ার গাড়িতে নয়তো কম পয়সার কোনো পরিবহনে। খুঁজে দেখছেন আটশ’ টাকার বাস। যদিও ঢাকা থেকে গড়ে তিন হাজার থেকে আট হাজার পর্যন্ত এক দিকে যাওয়ার খরচ পড়ে। বাংলাদেশের এই আলেম ওলামা, ইমাম, শিক্ষার্থী ও ধর্মপ্রাণ মানুষের ভরসায়ই চিন্তাশীল লোকেরা বলেন, ইনশাআল্লাহ যত বাধাই আসুক সব উপেক্ষা করে বাংলাদেশ একদিন পরিণত হবে আধুনিক ইসলামী রাষ্ট্র ও সমাজের রোল মডেলে। স্বাধীন বাংলাদেশ আজ মানবিক ও দরদী রাষ্ট্রের পরিচয় নিয়ে পৃথিবীর বুকে নজির স্থাপন করল। এই আমাদের বাংলাদেশ আর এসব ধর্মপ্রাণ, সামাজিক নেতৃবৃন্দই, এসব আলেম ওলামা, পীর মাশায়েখ ও উদীয়মান ধার্মিক তরুণরাই এদেশের রতœ। অথচ এসব মানুষ সমাজের, অর্থনীতির, ক্ষমতার বা রাজনীতির উন্নত অবস্থানে নেই। বলতে গেলে তারা নিজেরাই কোনো রকম জীবন ধারণ করেন। মানুষ তাদের ভালোবাসে ও বিশ্বাস করে বলেই তারা দেশ ও জাতির, মানুষ ও মানবতার এমন দুর্দিনে বলতে গেলে শুধু হৃদয় নিয়েই মাঠে ছড়িয়ে পড়েছেন। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় তারা যেমন সফল, উদার মানবিক পথযাত্রায়ও দেশকে পথ দেখাতে তারাই অগ্রণী ভ‚মিকায় থাকবেন। যদিও এ সঙ্কট মোকাবেলা এমন বিচ্ছিন্ন চেষ্টায় সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক ও বৃহৎ সহায়তা ছাড়া এভাবে বেশি দিন চলবে না। কিন্তু বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক, আল্লাহভক্ত, দীনদার মানুষ যে ত্যাগ ও নিষ্ঠা দেখিয়েছে তার নজির দুনিয়ায় কমই পাওয়া যাবে। গত ক’দিন ধরেই কেবল বিভিন্ন ত্রাণদলকে টেকনাফ ও উখিয়ার স্থানীয় বুজুর্গদের ঠিকানা দিতে হচ্ছে। দেখা গেল এক মাদরাসার মোহতামিম তার শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের এক কাফেলা নিয়ে এলাকাবাসীর দেয়া সাহায্য পৌঁছে দিতে যাচ্ছেন। এক ইমাম সাহেব যাচ্ছেন তার তরুণ মুসল্লিদল নিয়ে। কক্সবাজারে তাদের প্রয়োজন যোগাযোগের লোক। বলে দিচ্ছি, প্রশাসনকে জানান। বিজিবি ক্যাম্পের সাহায্য নিন। আর্মি বা পুলিশ পেলে সহায়তা নিন। এরপর স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ তো আছেনই। আছেন বিভিন্ন ইসলামী দলের স্থানীয় নেতাকর্মী। মসজিদ, মাদরাসা ও খানকাহর লোকজন। সর্বোপরি দীনি লাইনের সব ধরনের কাজকর্মের মধ্যে যোগাযোগ, সৌহার্দ্য ও ভাব বিনিময়ের জন্য নিরলস কাজ করে যাওয়া উদার কন্ট্রাক্ট গ্রæপ, যা দেশব্যাপী নিঃস্বার্থভাবে অতীত ওলি
আউলিয়াদের পন্থায় দীনি কাজের রূপরেখা অনুসন্ধান করে থাকে।
বাংলাদেশের দক্ষিণে নাফ নদীর তীর এখন জ্বলন্ত কষ্টের নাম। পার্শ্ববর্তী মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলমানদের অমানবিক অত্যাচার করে দেশ ত্যাগে বাধ্য করছে। হাজার হাজার মানুষ গুলি করে, কুপিয়ে, আগুনে জ্বালিয়ে হত্যা করছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধ সন্ত্রাসীরা। নারী, শিশু, বৃদ্ধ কেউই রেহাই পায়নি তাদের অত্যাচার থেকে। শত শত গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে ওরা। অসংখ্য তরুণকে গুম করে আটকে রাখা হয়েছে। তরুণীদের পাশবিক অত্যাচারের পর হত্যা করা হয়েছে। কোনো প্রমাণ না রাখার জন্য অগ্নিসংযোগ তাদের পছন্দের কৌশল। উপগ্রহ থেকে তোলা ছবি আর সামাজিক মাধ্যম এসব অত্যাচার দুনিয়ার মানুষকে অবগত করেছে। বৌদ্ধ সামরিক জান্তা আর মগের মুল্লুকের লৌহ যবনিকা ফুঁড়ে এসব পাশবিকতা প্রকাশ পেয়েছে বলেই দুনিয়ার মানুষ এসব জানতে পেরেছে। এর চেয়েও বড় বাস্তব ছিল লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা মুসলমানের প্রাণের ভয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ। আগে-পরে মিলিয়ে কমপক্ষে ১২ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে হিজরত করতে বাধ্য হয়েছে। গত ক’দিনে এসেছে ৪ লাখের বেশি।
মজলুম রোহিঙ্গাদের ওপর গত কয়েক সপ্তাহ যে অমানবিকতা চলছে পৃথিবীর আর কোনো সম্প্রদায়ের ওপর এই মুহূর্তে এমন আচরণ আর দেখা যাবে না। প্রতিদিন নৌকাডুবিতে মানুষ মরছে। নাফের উপক‚লে, শাহপরীর দ্বীপে ভেসে উঠছে নারী, শিশু ও বৃদ্ধের লাশ। দলে দলে মানুষ আসছে পাহাড়, নদী, বন পেরিয়ে। অনেক রোহিঙ্গা যুবককে দেখা গেছে, পনের বিশ দিনের পথ পায়ে হেঁটে তারা পাড়ি দিয়েছে পিঠে বুড়ো মা অথবা বাবাকে নিয়ে। কেউ এসেছে বাবা-মা দু’জনকেই নিয়ে কাঁধে করে, ভাঁড়ে চড়িয়ে। এমন শতাধিক নজির দেখে মানুষ সত্যিই অনুধাবন করতে পেরেছে আরাকানবাসীর উন্নত মনুষ্যত্বের। সন্তানের মনে জনক জননীর মর্যাদা অনন্য উচ্চতার। হাজারো নারী তার সম্মান হারিয়ে নীরবে যুদ্ধ করে যাচ্ছেন জীবনের সাথে। বেঁচে থাকার এই কাফেলায় তারাও জীবিত আত্মীয়দের সাথী। ভাঙ্গা পরিবারই বেশি। নারী থাকলে পুরুষ নেই, পুরুষ থাকলে নারী নেই। সন্তান থাকলে বাবা-মা নেই, বাবা-মা থাকলে সন্তান নেই। পিতৃ-মাতৃহীন শিশুরও অভাব নেই শরণার্থী শিবিরে। মানবতার এত অবমাননা স্মরণকালে আর দেখা যায় না। শুরুতে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী শরণার্থীদের যথারীতি ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে কিন্তু অত্যাচারের মাত্রা আর নির্বিচারে বর্মী সেনাবাহিনী কর্র্র্তৃক নিরীহ রোহিঙ্গাদের হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও বিচিত্র অমানবিক অত্যাচার বাংলাদেশের সরকার ও জনগণকে বাধ্য করে মানবতার ডাকে সাড়া দিতে। বিপন্ন এ মানুষগুলোকে একটু জায়গা দিতে, তাদের বেঘোরে প্রাণ যাওয়া থেকে বাঁচাতে বাংলাদেশ তার দুয়ার খুলে দেয়। সীমিত জায়গায় প্রায় পাঁচ লাখ বনি আদম যেন একটু হলেও দাঁড়াতে পারে। একটু পানি, দু’মুঠো খাবার, সামান্য ওষুধ, একটু সান্ত¦না, মাথা গোঁজার একটু ঠাঁই দিয়ে ভাগ্যাহত এসব মানুষকে বেঁচে থাকার কিছুটা আশা দিতে পেরেছে বাংলাদেশ। একটু স্মরণ করলে আমাদের মনে পড়বে, গত বছর যখন রোহিঙ্গাদের এভাবে তাড়ানো হয় তখন বাংলাদেশ পারতপক্ষে তাদের আশ্রয় দেয়নি। দিনভর ঘুরে বেড়ানো নৌকা বিজিবি ফিরিয়ে দিয়েছে। একজন অসহায় রোহিঙ্গা যুবকের কান্না ও নৌকা ভিড়তে দেয়ার অনুরোধ তখনই বিশ্ব মিডিয়ায় একটি সিম্বল হয়ে যায়। তখন অল্প কিছু রোহিঙ্গা যারা পালিয়ে এসে কক্সবাজার ও বান্দরবানে আশ্রয় নিয়েছিলেন তাদের ত্রাণ দিতে গিয়েও দেশবাসী বাধাগ্রস্ত হতেন। আমরা তখন প্রশাসনের বাধা পেয়েছি। ইসলামী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ও ধর্মপ্রাণ সমাজ তখন অনেক বাধা উপেক্ষা করে বিপন্ন রোহিঙ্গাদের সহায়তা করেছে। আমরা ভিন্ন প্রোগ্রামে যখন কক্সবাজার গিয়েছি তখন ইসলামী কর্মতৎপরতার সাথে যুক্ত নানা পরিচয়ের অসংখ্য নেতৃবৃন্দ আমাদের কাছে পরিস্থিতি খুলে বলেছেন। কেউ অ্যালবাম দেখিয়েছেন, যা আহত, নিহত, নির্যাতিত ও সম্ভ্রমহারা মানুষের ছবিতে ভরা। টেকনাফ, উখিয়া, কক্সবাজার সদরসহ আক্রান্ত উপজেলাগুলোয় ত্রাণ কার্যক্রম চলেছে। রাজধানী থেকে শীতবস্ত্র, চাহিদামতো ওষুধ, খাবার ও টাকা যারা পৌঁছে দিতে চেয়েছেন তাদের কেবল ইসলামী কানেক্ট গ্রæপের নেতাদের সাথে যুক্ত করে দিলেই আল্লাহর রহমতে নিখুঁতভাবে কাজ হয়েছে। প্রশাসনের বাইরের দিকটি কঠোর দেখা গেলেও ভেতরগত নরম দিকটি তখন আলেমসমাজ অনুভব করেছিলেন। বিশেষ করে, সেনাবাহিনীর আঞ্চলিক দায়িত্বশীলেরা ছিলেন খুবই মুহাজিরবান্ধব।
গত ২৫ আগস্টের পর নতুন করে যখন লাখো মজলুম রোহিঙ্গা আবার বাংলাদেশে আশ্রয় নেন তখন সরকার তাদের খোলা মনে আশ্রয় দেয়। দেশবাসী জেগে ওঠে। এ সময়টি ঘটনাক্রমে আমার কাটছে রোগশয্যায়। চিকিৎসা বিভ্রাটে ডেঙ্গু খুঁজে বের করতেও সময় বয়ে যায়। এরপর শুরু হয় বিলম্বিত আরোগ্যের প্রয়াস। এত অমানবিক জুলুম আর বিশ্বব্যাপী তোলপাড় আমাকে পিষে যায় বটে কিন্তু আমি কোন ভ‚মিকা রাখতে না পেরে অক্ষমের হতাশা নিয়ে সময় পার করি। বন্যার করাল গ্রাসে যখন দেশের বড় অংশ নিমজ্জিত তখন প্রশাসনের অদ্ভুত নীরবতা। দায়িত্বশীলদের অবিশ্বাস্য গা ছাড়া ভাব। বিপুল সংখ্যক ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া যেন কোন বোঝাপড়া সেরে রেখেছে, বন্যা, ফসলহানি, নদীভাঙ্গন, দুর্ঘটনা, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, প্রতিটি উন্নয়ন কর্মে ভয়াবহ বরকতহীনতা নিয়ে চর্চা না করার নীতি অবলম্বনের। এসব অসংলগ্নতার মাঝেই পার হয় ঈদুল আজহা। মিডিয়ায় যা দেখা গেল, ঈদ বলতে তাদের অনেকেই ধর্ম, ইতিহাস, ঐতিহ্য, আনন্দ, উৎসব, ত্যাগ ও কোরবানি কিছুই খুঁজে পেল না। তাদের চোখে পড়েনি, কোটি কোটি মানুষের আত্মীয় মিলন ও ঘরে ফেরার আনন্দ। তাদের চোখ, মন, মেধা ও মনোযোগ আটকে ছিল শুধুই গোবরে। কোরবানির বর্জ্য, রক্ত ও পশুর চলাচল ছাড়া তাদের যেন আর কিছুতেই নজর যায়নি। অবশ্য সংশ্লিষ্টদের চেষ্টা ও সদিচ্ছায় কোরবানির এ কার্যক্রম খুব দ্রæত ও সহজে সুসম্পন্ন হওয়ায় এসব চিহ্নিত মিডিয়ার চেচামেচি অতি তাড়াতাড়ি থেমে যেতে বাধ্য হয়। কোন কোন বেহায়া ঈদের দিন কোরবানির মুহূর্তেই দেশব্যাপী ক্যামেরা ও বুম হাতে ঘুরতে শুরু করে। এই রক্ত পড়ল বলে, এই গোবর দেখা গেল বলে, এখনো কেন বর্জ্য পরিষ্কার হয়নি ইত্যাদি বিরক্তিকর রিপোর্ট তৈরির বৃথা চেষ্টা করতে থাকে। এ কাজটি আরো পরের ছিল বলে তাদের এ অকাল আক্রমণ শুরুতেই ব্যর্থ হয়। এবারকার রোহিঙ্গা ঘটনায় চিত্র সম্পূর্ণ আলাদা। সব মিডিয়া মানবিক হয়ে গেছে হঠাৎ। এ রোহিঙ্গাদের ভাগ্য আর সরকারের ইতিবাচক ভাবনার ছাপ।
ঘরে বসেও যখন শুনেছি মাদরাসাতুল মাদীনার ছাত্র শিক্ষকরা ত্রাণ সাহায্য নিয়ে ছুটে যাচ্ছে উত্তরবঙ্গে। বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের তরফ থেকে উত্তর জনপদে সাহায্য গিয়েছে। স্থানীয় আলেম ওলামারা বন্যার্ত মানুষকে ঈদেও ভুলেননি, পরেও না। এরপর শুরু হয় রোহিঙ্গাদের ত্রাণ। ঘরে বসেও চোখে দেখতে পাই অতি চেনা সেসব সীমান্ত এলাকা যেখানে নবীন প্রবীণ হাজারো নেতাকর্মী, বন্ধু, সুহৃদের সীমা নেই। মোবাইলে কথা চলতেই থাকে। জানতে পারি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। দর্শনার্থীদের কল্যাণে। বড় রাজনৈতিক দলগুলোর ত্রাণ যত না সংবাদ হয় তারচেয়ে বড় হয়ে ধরা পড়ে তাদের নিয়মিত ঝগড়াঝাটি ও বাদানুবাদের খবর। বিএনপি বলে, আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সরকারের ত্রাণ দলীয় ব্যানারে বিলি করছেন। বিএনপির স্থাপিত পাঁচটি নলক‚প গায়ের জোরে তিনি উদ্বোধন করেছেন। আওয়ামীলীগ বলে, বিএনপির ত্রাণের ট্রাকে কি জানি কী ছিল। তাই আমরা তা থানায় আটকে রেখেছি। বুদ্ধিজীবী, মানবতাবাদী ও নারীবাদী শ্রেণি যেন হঠাৎ বোবা হয়ে যায়। না একটি বিবৃতি, না মানববন্ধন, না সেমিনার। সুশীলসমাজ একেবারে হাওয়া। দু একজন চিহ্নিত গলাবাজ মাঝে মাঝে কথা বলে বটে তবে রোহিঙ্গাদের জন্য নয়। তাদের কান্না আর হাহাকার অন্য কোন দেশের স্বার্থে অথবা সরাসরি জুলুমের পক্ষে। অবশ্য এসব এজেন্টের চেহারায় কোন আলো থাকে না। কেনা গোলামের মতো এরা শেখানো বুলি আওড়ে যায়।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অবস্থান এবার খুব স্পষ্ট। জোর গলায় তিনি মজলুমের পক্ষ নিয়েছেন। সংক্ষেপে বলে দিয়েছেন, যতদিন প্রয়োজন হয় নিজেদের ভাত তাদের সাথে ভাগ করে খাব। যে দেশে ১৬ কোটি মানুষ খাবার পায় সেখানে আরো ৮/১০ লাখ মানুষও খেতে পারবে। ক‚টনৈতিকভাবে ব্যাপক সাড়া ফেলে দেন। জাতিসংঘসহ অনেক ফোরামে বিষয়টি জোরালোভাবে উত্থাপিত হয়। সবচেয়ে বড় যে কথা সেটি হলো, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন প্রতিবেশী কোনো দেশের ক্ষতি করতে পারে এমন কোনো শক্তি বাংলাদেশে প্রশ্রয় পাবে না। এ নীতি বাংলাদেশকে এগিয়ে দেবে। সবাইকে এ বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে যেন কোন অপশক্তি সন্ত্রাস ও যুদ্ধ চাপিয়ে দিতে না পারে। বাংলাদেশ মানবিক ও ক‚টনৈতিকভাবে এই নাজুক পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে। এ পর্যন্ত জাতিসংঘ, তুরস্ক, সউদী আরব, মালয়েশিয়া ইত্যাদি থেকে ত্রাণ সহায়তা আসতে শুরু করেছে। ব্যবস্থাপনার জন্য সেনাবাহিনীর সাহায্য চাওয়া হয়েছে। আশা করা যায়, পরিস্থিতি সম্ভাব্য পরিণতির দিকে ভালোভাবেই এগোবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।