Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪, ০৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

বর্ষায় ছাতা কারিগরদের বাড়ছে ব্যস্ততা

| প্রকাশের সময় : ২২ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আবুল কালাম আজাদ, বালাগঞ্জ (সিলেট) থেকে: চলমান এই বৃষ্টির দিনে বাইরে বের হলে একমাত্র ভরসা ছাতা। ছাতা ছাড়া কর্মস্থলে বের হওয়ার কোন সুযোগ নেই। তাই এ বৃষ্টির দিনে অনেক বেড়েছে ছাতার চাহিদা। ক্রেতারা ভিড় করছেন ছাতার দোকানে। ব্যস্ত সময় কাটছে ছাতার কারিগড়দেরও। লাগাতার এই বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে ঘরে রাখা পুরনো ছাতা নিয়ে গাড়িগড়ের দোকানে ধর্না দিচ্ছেন। ব্যবসায়িরা সুযোগ বুঝে বাড়িয়ে দিয়েছেন ছাতার মূল্য। গাড়িগড়রাও বাড়িয়ে দিয়েছেন মজুরি।
রোদ-বৃষ্টিতে চলতে ছাতার গুরুত্ব অপরিসীম। দুর্যোগ আবহাওয়ায় ছাতার বিকল্প নেই। গত কয়েক দিন ধরে অব্যাহত বৃষ্টি এ গুরুত্ব আরো বেশি বাড়িয়ে দিয়েছে। সবার হাতে হাতে এখন ছাতা। মানুষের ভিড় যেখানে সেখানেই ছাতা। দেখলে মনে হয় যেন ছাতা মার্কা মিছিল। সব বয়সি মানুষের হাতে নানা ধরণের ছাতা শোভা পাচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দেশীয় ছাতার চাহিদা বেশি। চাকরিজীবীদের চায়না ছোট ছাতা পছন্দ থাকলেও প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টি সে চাহিদাকে পিছনে ফেলে দেশীয় বড় ছাতা হাতে দেখা গেছে। সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজার ও তাজপুর বাজারে ছাতার দোকানগুলোতে দেখা যায় ছাতা বিক্রি বেড়ে গেছে। তবে ছাতা সারা বছর বিক্রি হয় বলে জানান বিক্রেতারা। কেননা বৃষ্টির পর সারা বছর রোদ থাকে। বর্তমান সময়ে এই বৃষ্টি এই রোদ। এতে সব সময় ছাতার কম বেশি চাহিদা আছে বলে জানান বিক্রেতারা।
বাজারে রয়েছে নানা ধরণের ছাতা। গ্রামের প্রবীন মানুষের কাছে ছাতা মানেই কাঠের বাঁট। ৩০-৩২ ইঞ্চি লম্বা বাঁটে কালো সুতি কাপড়ের ছাউনি। ২২, ২৪ এবং ২৬ ইঞ্চি ঘের। এই ঘেরের ভেতরে কত শত স্মৃতি রয়েছে তাদের। দেশীয় ছাতা স্মৃতি হয়ে গিয়েছিল অনেকটা। তবে এবারের বর্ষা, ভারি বর্ষণ পাল্টে দিয়েছে অনেক কিছু। এমনটা জানালেন ছাতা ক্রেতা শিক্ষক আনোয়ার হোসেন আনা। তবে মেয়েদের ছাহিদা ছোট আকারের থ্রি ফোল্ডের ছাতার।
চীন থেকে আমদানি করা হালকা রঙিন ছাতা ভিজে একাকার। কাজের কাজটি হচ্ছে না। যার কারণে দেশীয় ছাতায় আবার ফিরে যাচ্ছেন অনেকেই। দেশিয় টেকসই তাই বিক্রিও ভাল হচ্ছে। চায়না দেখতে ছাতা ছোট-খাটো, রঙিন। সহজে আকর্ষণ করে। ব্যবহার শেষে কয়েক ভাঁজ করে রেখে দেয়া যায়। ‘চায়না মাল’ দামে কম।
আগে বৃষ্টি তেমন একটা বড় হতো না। চায়না ছাতায় মোটামুটি চালিয়ে দেয়া যেত। এবার বাংলাদেশের প্রকৃতি বৈরি। বৃষ্টি থেকে গা বাঁচাতে চায়না ছাতায় হয়না। দেশের মজবুত কাঠামো আর ভারি সুতি কাপড়ের ছাতার নিচে আশ্রয় নিচ্ছে বাংলাদেশি। এখনও সিলেট, চট্টগ্রাম, রংপুর, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রস্তুত করা হয় দেশীয় ছাতা। চায়না ছাতা বাজারে আসার পর দেশীয় অনেক নামীদামী ছাতার কোম্পানী বন্ধ হয়ে যায়। স্বাধীনতার পর পর দারুণ নাম করেছিল আলাউদ্দিন ছাতা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এটি আর বাজারে নেই। একই পরিণতি হয়েছে শফিউদ্দিন ছাতার। তবে সিলেটে ইদ্রিছ ছাতা, সিরাজ ছাতা ও শরীফ ছাতা ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। সিলেটের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কারখানা রয়েছে। এবার বৃষ্টি বেশি হচ্ছে। হালকা ছাতা দিয়ে আর হচ্ছে না। তাই আমাদের দেশীয় ছাতার চাহিদা বেশ ভাল বলে জানান বিক্রেতারা। তবে কাঠের ছাতা আর নেই। গোয়ালাবাজরের দোকানের এক কর্মচারি বলেন, দেশীয় ছাতার পাশাপাশি চায়না ছাতা বিক্রি হচ্ছে। আমাদের দেশীয় ছাতার প্রতি যে টান, সেটা কখনও নষ্ট হবে না।
বাজারঘুরে দেখা গেছে, কোম্পানিভেদে নানা ডিজাইনের ছাতা পাওয়া যাচ্ছে, ২২০ থেকে ৫০০ টাকায়। লেইস লাগানো ছাতা পাওয়া যাচ্ছে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকায় ভেতর। এক রঙের ছেলেদের ছাতা ২০০-২৮০ টাকার মধ্যে। কোম্পানি ভেদে ৩২ ইঞ্চি গার্ডেন ছাতা কিনতে ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকায়, ৩৪ ইঞ্চি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, ৩৬ ইঞ্চি ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা, ৪২ ইঞ্চি ১১৫০ থেকে ১২৫০ টাকা, ৪৮ ইঞ্চি গার্ডেন ছাতা কিনতে পারবেন ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকার মধ্যে।
ওসমানীনগর উপজেলার ব্যবসায়িক প্রাণকেন্দ্র গোয়ালাবাজারের ব্যবসায়ি আতিকুর রহমান বলেন, দেশীয় ছাতা অত্যন্ত মজবুত। অমাদের প্রকৃতি পরিবেশের সঙ্গে মানানসই। গত কয়েকদিন ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। এতে বিদেশী ছাতা কিন্তু কাজে আসেনি। যার ফলে দেশীয় ছাতার গুরুত্ব বেড়েছে। বিক্রিও ভালো হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বর্ষা

৩ আগস্ট, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ