Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কেসিসি’র ৪৪০ কোটি ৭৯ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা

| প্রকাশের সময় : ১১ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আবু হেনা মুক্তি : খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের জন্য ৪৪০ কোটি ৭৯ লাখ ৮৮ হাজার টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে। কেসিসি মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নগর ভবনের শহীদ আলতাফ মিলনায়তনে এ বাজেট ঘোষণা করেন। প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫৫ কোটি ১৩ হাজার টাকা এবং সরকারি অনুদান ও বৈদেশিক সাহায্য নির্ভর উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮৫ কোটি ৭৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এর আগে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৬৭ কোটি ৮৪ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। সংশোধিত আকারে দাঁড়িয়েছে ২৪৬ কোটি ৫২ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। যার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের হার ৫৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
বাজেট ঘোষণাকালে সিটি মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি বাজেটের মূল বৈশিষ্টগুলো তুলে ধরে বলেন, নির্বাচনী প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী এ বাজেটে নতুন কোন কর আরোপ করা হয়নি। নগরীর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিজ বসত বাড়ীর হোল্ডিং ট্যাক্স পূর্বের ন্যায় এবারও সম্পূর্ণ মওকুফ করা হয়েছে। তিনি প্রস্তাবিত বাজেটকে একটি উন্নয়নমুখী বাজেট উল্লেখ করে বলেন, এ বাজেটে নাগরিক সেবা স¤প্রসারণ ও সেবার মান উন্নত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ বাজেটে নগরীর পানিবদ্ধতা দূরীকরণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি কর্পোরেশনের উন্নয়ন কর্মকান্ডকে এগিয়ে নেয়ার জন্য নিয়মিত কর পরিশোধসহ উন্নয়ন কাজে নগরবাসীর সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেন। কেসিসি মেয়র জানান, কেসিসির নিজস্ব সংস্থাপন ব্যয় মিটিয়ে রাজস্ব তহবিল হতে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক খাতে মোট ৫৮ কোটি ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। উক্ত বরাদ্দ হতে পূর্ত খাতে ২৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, ভেটেরিনারি খাতে ২৫ লাখ টাকা, জনস্বাস্থ্য খাতে ৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, কঞ্জারভেন্সী খাতে ১৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা এবং মহানগরীতে বিশেষ প্রয়োজনে জরুরী পানির চাহিদা মেটানোর জন্য এ খাতে এক কোটি বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন দাতা সংস্থার ১০টি অনুমোদিত প্রকল্প চলমান রয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এসব প্রকল্পে ১৮৮ কোটি ছয় লাখ ৭৫ হাজার টাকার উন্নয়ন সহায়তা পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।
বাজেট অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন কেসিসির অর্থ ও সংস্থাপন বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও কাউন্সিলর শেখ মোঃ গাউসুল আজম। এ সময় কেসিসির প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলর, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, সরকারি কর্মকর্তা, কেসিসির উর্ধ্বতন কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। কেসিসি’র সূত্র থেকে জানা যায়, নগরবাসীর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নগর স্বাস্থ্যভবন উন্নয়ন, টুটপাড়া ম্যাটারনিটি হাসপাতাল, খালিশপুরের লাল হাসপাতাল নির্মাণ, অসহায় মহিলাদের জন্য মাতৃসদন, ইপিআই, জাতীয় টিকা দিবস, জাতীয় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন, এআরভি ভ্যাক্সিন, য²া নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম, অটিজম, কৈশর বান্ধব স্বাস্থ্য সেবা, এইচ.আই.ভি এইডস প্রতিরোধ কার্যক্রম, আরবান প্রাইমারী হেলথ্ কেয়ার সার্ভিস ডেলিভারী প্রকল্পের কার্যক্রম, নগরবাসীর নিরাপদ খাবার নিশ্চিত করতে পথ খাবার বিক্রেতাদের ভ্যান গাড়ি ও খাবার বিক্রেতা ও মালিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
নারী শিক্ষার জন্য খুলনা কলেজিয়েট গার্লস্ স্কুল, সিটি গার্লস্ স্কুল, ইংরেজি মাধ্যম ইসলামাবাদ কলেজিয়েট স্কুল, খালিশপুরে নয়াবাটি হাজী শরিয়ত উল্লাহ বিদ্যাপীঠের ন্যায় দৌলতপুরে একটি নতুন কলেজিয়েট স্কুল এবং খালিশপুরে একটি কলেজিয়েট গার্লস্ স্কুল নির্মাণ করা হচ্ছে। ধর্মীয় শিক্ষায় নগরের বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা মক্তব ও টোলে শিক্ষকদের অনুদানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া জাতীয় দিবসে খুলনা সিটি কর্পোরেশন বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে।
নগরবাসীর চিত্ত বিনোদনে নগরীর শহীদ হাদিস পার্ক ও জাতিসংঘ শিশু পার্ক আধুনিকায়ন সহ ওয়াই ফাই জোন স্থাপন করা হয়েছে, ওয়াক ওয়ে নির্মাণ, গল্লামারি ময়ূর নদীর পাড়ে তৈরি করা হয়েছে লিনিয়ার পার্ক, দৃষ্টি নন্দন রিভার ফ্রন্ট রোড, স্টিমার ঘাট হতে জোড়াগেট এবং রূপসা ব্রীজ থেকে আলুতলা দশ গেট বাঁধ পর্যন্ত শহর রক্ষা বাঁধ এবং রূপসা ফেরীঘাটের উভয় তীরে পাড় বাধাই সহ আধুনিক বাস টার্মিনাল খুলনা শহরকে সৌন্দর্য্যময় করেছে।
পরিবেশ সুরক্ষায় খুলনা সিটি কর্পোরেশন ব্যাপক বনায়ন কর্মসূচী গ্রহন করেছে। খুলনাকে ক্লিন এবং গ্রীন সিটিতে পরিণত করার জন্য কেসিসি’র বিভিন্ন স্থাপনাসহ নগরীর রাস্তা-ঘাটে বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে। নগরীর মিডআইল্যান্ড, সড়ক দ্বীপ, বিভিন্ন পরিত্যক্ত স্থানসমূহ সৌন্দর্য্য বর্ধনের লক্ষ্যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় কাজ চলছে। পরিবেশ রক্ষায় গ্রীণ হাউজ প্রভাব রোধে খুলনার সোনাডাঙ্গায় ২০ কিলোওয়াট সৌর বিদ্যুত উৎপাদন ও প্রশিক্ষণ প্রদানের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনে ঝড় বৃষ্টি বৃদ্ধি পাওয়া, জোয়ারের সময় নদীর পানি শহরে প্রবেশ, ময়ূর নদী ও লবনচরা গোড়া খাল অবৈধ দখল, অবৈধ স্থাপনাসহ মনুষ্য সৃষ্ট কিছু সমস্যা নগরের পানিদ্ধতার মূল কারণ। পানিবদ্ধতা নিরসনে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ, ড্রেন নির্মাণ, পেড়ি মাটি উত্তোলন, পানি অপসারনে সুইচ গেইট নির্মান, বৃষ্টির পানি দ্রæত অপসারনের জন্য পাম্পিং স্টেশন নির্মাণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও পেড়ি মাটি উত্তোলনে ও ভরাটকৃত ড্রেন ও খাল খননের জন্য মিনি এস্কেভেটর ক্রয় ও শহর রক্ষা বাধের একটি অংশ নির্মান করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কেসিসি

২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ