বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রাম নগরীর অন্যতম পর্যটন এলাকা ফয়’স লেককে ঘিরে মাদক আর যৌনতার জমজমাট ব্যবসা চলছে। এতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ইউএসটিসির শিক্ষার্থীসহ বেশকিছু বিদেশী নাগরিক। ‘রুম পার্টির’ নামে মদের আসরে চলছে অশ্লীলতা। মদের পার্টিতে এক ভারতীয় শিক্ষার্থীর খুনের ঘটনায় নগরজুড়ে তোলপাড় চলছে। ফের আলোচনায় এসেছে ফয়’স লেক এলাকাকে ঘিরে অনৈতিক কর্মকাÐ।
চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাÐের দুইদিন পরও রহ্যসের জট খুলেনি। গতকাল (রোববার) পর্যন্ত এ ঘটনায় কোন মামলাও হয়নি। তবে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে মদের পার্টিকে কেন্দ্র করে এ খুনের ঘটনা ঘটেছে। এর পেছনে রয়েছে নারীঘটিত কারণও। খুনের রহস্য উদঘাটনে মদের আসরে থাকা ইউএসটিসির আরও ৫ শিক্ষার্থীকে খুঁজছে পুলিশ।
শুক্রবার নগরীর আব্দুল হামিদ সড়কের ছয়তলা ভবনের পঞ্চম তলার একটি ফ্ল্যাটে খুন হন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম-ইউএসটিসির শিক্ষার্থী ভারতীয় নাগরিক মোঃ আতিফ শেখ। একই কক্ষের সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলানো অপর শিক্ষার্থী উইলসন সিংকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। ওই কক্ষে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয় আতিফ শেখকে। পুলিশের ধারণা, খুনী উইলসন খুনের পর আত্মহত্যা করার জন্য সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলে পড়ে। তাকে নগরীর মেহেদীবাগের একটি বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউতে রাখা হয়েছে।
ঘটনার তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত নগরীর আকবর শাহ থানার ওসি (তদন্ত) জাকির হোসেন ভূইয়া ইনকিলাবকে জানান, উইলসনের অবস্থা এখনো সঙ্কটাপন্ন। তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। নির্মম খুনের শিকার আতিফ শেখের ময়নাতদন্ত হলেও এখনো প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। তবে ছুরিকাঘাতে তাকে হত্যা করা হয়েছে এটা প্রায় নিশ্চিত। নিহতের স্বজনরা ভারত থেকে আসছেন জানিয়ে তিনি বলেন, তারা আসার পর এ ব্যাপারে থানায় মামলা হবে। তবে ঘটনার পর থেকে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানান জাকির হোসেন। তিনি বলেন, শুক্রবার রাতে ওই কক্ষে পার্টিতে কারা কারা ছিল তাদের তালিকা ইতোমধ্যে পুলিশের হাতে এসেছে। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে।
পুলিশের একটি সূত্র জানান, এক ভারতীয় শিক্ষার্থী খুন হওয়ার আগে ওই বাসায় মদের পার্টিতে আরও পাঁচ শিক্ষার্থী যোগ দিয়েছিলেন। পার্টিতে যোগ দেওয়া ইউএসটিসির ওই পাঁচ শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনজন ভারতীয় ও দু’জন বাংলাদেশি। এদের মধ্যে একজন ছাত্রী নিহত ভারতীয় ছাত্র মোহাম্মদ আতিফ শেখের ‘গার্লফ্রেন্ড’ বলে জানা গেছে। পুলিশের ধারণা, হত্যাকাÐের নেপথ্যে ওই গার্লফ্রেন্ডকে ঘিরে অনৈতিক কোন ঘটনা রয়েছে। আব্দুল হামিদ সড়কের ছয়তলা ভবনের পঞ্চম তলার একটি ফ্ল্যাটের এক কক্ষে আতিফ ও আহত ভারতীয় ছাত্র উইলসন থাকতেন। ওই ফ্ল্যাটেই পাশের কক্ষে স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন আরেক ভারতীয় ছাত্র নিরাজ গুরু। নিরাজের স্ত্রীও ভারতীয় এবং তারা সবাই একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এদের চারজনেরই বাড়ি ভারতের মণিপুরে।
ওই বাসায় শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ‘পার্টি’ হত। শুক্রবার রাতেও সে রকম একটি পার্টি আয়োজন করা হয়। বাসার বাসিন্দাদের মধ্যে নিরাজের স্ত্রী পার্টিতে যোগ দেননি। বাইরে থেকে আসা পাঁচজন এবং নিরাজ, আতিফ ও উইলসন পার্টিতে অংশ নেন। এরা সবাই সহপাঠী। পার্টিতে অংশ নেওয়া সবাই মদ পান করেছিলেন। তাদের কয়েকজনকে ইতোমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। পার্টিতে আসা অন্য বন্ধুরা রাত সাড়ে ১১টার দিকে ওই বাসা থেকে চলে যায় বলে জানান আকবর শাহ থানার এসআই জসিমউদ্দিন। এরপর ওই কক্ষ থেকে শব্দ পেয়ে সেখানে যান বলে জানিয়েছিলেন শুক্রবার মধ্যরাতে আতিফ ও উইলসনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা নিরাজ।
তিনি পুলিশকে বলেছিলেন, ভিতর থেকে বন্ধ ওই কক্ষ বিকল্প চাবি দিয়ে খুলে ভেতরে ঢুকে উইলসনকে ঝুলন্ত অবস্থায় এবং রক্তাক্ত আতিফকে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেছিলেন। দু’জনকে হাসপাতালে আনার পর আতিফ আগেই মারা গেছেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, এ হত্যাকাÐের রহস্য উদঘাটনের জন্য উইলসনের বক্তব্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার অবস্থা স্বাভাবিক হলে আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করব। তবে পার্টিতে যারা ছিল তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে খুনের বিষয়ে একটি স্পষ্ট ধারণা পাওয়া গেছে। তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে এ মুহূর্তে আর কিছু বলা ঠিক হবে না বলে জানান তিনি। পুলিশের পাশাপাশি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), ডিবি, সিআইডিসহ বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত করছে।
এদিকে বিদেশী ছাত্র খুনের পর ফয়’স লেক ও আশপাশের এলাকা ঘিরে গড়ে উঠা অনৈতিক ব্যবসাকে ঘিরে স্থানীয়দের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। পর্যটনকেন্দ্র ফয়’স লেককে ঘিরে গড়ে উঠা হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস, কটেজ ও মিনি চাইনিজে জমজমাট যৌন ব্যবসা চলছে। বিভিন্ন সময়ে র্যাব-পুলিশ ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ওই এলাকা থেকে অপ্রীতিকর অবস্থায় জোড়ায় জোড়ায় যুবক-যুবতীকে আটক করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের নেতৃত্বদানকারী একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জানান, ফয়’স লেক এলাকাকে ঘিরে গড়ে ওঠা কটেজ ও মিনি চাইনিজগুলো মিনি পতিতালয় হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। উঠতি যুবক-যুবতীরা দিনদুপুরে সেখানে অসামাজিক কর্মকাÐে লিপ্ত হচ্ছে। কতিপয় কটেজ ও মিনি চাইনিজ মালিকরা এ অনৈতিকতার সুযোগ করে দিয়ে জমজমাট বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বেড়াতে আসা তরুণ-তরুণী এমনকি কিশোর-কিশোরীরাও ওইসব হোটেল, কটেজ ও মিনি চাইনিজে অভিসারে লিপ্ত হচ্ছে। মাঝে মধ্যে অভিযানের পর এসব কর্মকাÐ সাময়িক বন্ধ থাকলেও ফের পুরোদমে চলতে থাকে।
স্থানীয়রা জানায়, ইউএসটিসির বিদেশী শিক্ষার্থী ও কতিপয় বিদেশীর কারণে এ অনৈতিকতা আশপাশের আবাসিক এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়েছে। তারা বাসা ভাড়া নিয়ে মদ, নারীর আসর বসাচ্ছে। সেখানে যোগ দিচ্ছে তাদের বন্ধু বাংলাদেশী তরুণ-তরুণীরাও। বিদেশীদের অনেকে ওই এলাকায় প্রকাশ্যে মদপান এবং অশ্লীলতা করছে। ইউএসটিসিতে বর্তমানে ৭৭৬ জন বিদেশী শিক্ষার্থী রয়েছে। এদের বেশিরভাগই আশপাশের এলাকায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকেন। অভিজাত এলাকা হওয়ায় খুলশী ও ফয়’স লেক এলাকায় বিপুল সংখ্যক বিদেশীর বসবাস। এসব বিদেশীদের অনেকেই অত্যন্ত খোলামেলা চলাফেরা করছে।
ইউএসটিসি সূত্র জানায়, বিদেশী শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশিরভাগই পড়ালেখায় মনোযোগী এবং চট্টগ্রাম মহানগরীর পরিবেশ ও সংস্কৃতির সাথে নিজেদের খাপ খাইয়ে চলছে। কিছু উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থী রয়েছে যারা এলাকায় চরম উচ্ছৃঙ্খলা এবং অনৈতিক কর্মকাÐে জড়িয়ে পড়ছে। সম্প্রতি অনৈতিক কাজে বাধা হওয়ায় বিদেশী শিক্ষার্থীদের একটি গ্রæপ স্থানীয় কয়েকজন যুবককে মারধর করে। এ নিয়ে থানা-পুলিশ হয়। কয়েকদিন আগে চেইন শপ খুলশী মাটের এক কর্মীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন শ্রীলঙ্কান এক শিক্ষার্থী। তার মামলার প্রেক্ষিতে পুলিশ ওই যুবককে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর ওই যুবক শিকার করে শ্রীলঙ্কান ওই শিক্ষার্থীর সাথে তার শারীরিক সম্পর্ক ছিল। তার সাথে মনের অমিল হওয়ায় ওই ছাত্রী থানায় মামলা ঠুকে দেয়।
নগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, ইউএসটিসির শিক্ষার্থী ছাড়াও ওই এলাকায় বিপুল সংখ্যক বিদেশী বসবাস করেন। তবে তাদের কিছু অংশের অনৈতিক কর্মকাÐ এবং সেইসাথে ফয়’স লেককে ঘিরে মাদক ও অনৈতিক ব্যবসা পুলিশকে ভাবিয়ে তুলেছে। বিদেশীদের নিরাপত্তা দেয়ার পাশাপাশি তাদের সংযত আচরণ করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পুলিশ কাজ শুরু করেছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।