পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : দায়িত্বকালীন সময়ের বেশকিছু কর্মকান্ড ও বিদায়কালীন সময়ে ‘লাভটোকেনের’ নামে কোটি টাকা, একাধিক এলইডি টিভি, আইফোন, স্মার্টফোন ও দামি পণ্যসামগ্রী গ্রহণ করায় জেলা, উপজেলা প্রশাসনসহ সর্বত্রই সমালোচনার বাতাস বইছে কুমিল্লার সদ্যবিদায়ী জেলা প্রশাসক (ডিসি) হাসানুজ্জামান কল্লোলকে নিয়ে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর বিদায়ী ডিসি কল্লোলকে নিয়ে দৈনিক ইনকিলাবে সংবাদ প্রকাশের পর প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ কুমিল্লার বিশিষ্টজনরা বিদায়ী ডিসি কল্লোলকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্যও করেন। ধীরে ধীরে লোকমুখে বেরিয়ে আসে সাবেক ডিসি কল্লোলের বেশকিছু সমালোচিত কর্মকা-। ইতিমধ্যে আরও কয়েকটি প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ায় বেশ ফলাও করেই বিদায়ী ডিসি কল্লোলকে ঘিরে সংবাদ প্রকাশ করে।
কুমিল্লা জেলায় প্রায় দুই বছর তিন মাসের কিছু বেশি সময় ডিসির দায়িত্ব পালন করেন হাসানুজ্জামান কল্লোল। তার দায়িত্বকালীন সময়ে উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতব্যক্তিত্ব শচীনদেব বর্মনের কুমিল্লা শহরের চর্থা এলাকার পৈত্রিক বাড়িটি ভুতুড়ে অবস্থা থেকে আলোয় ফিরে আসে। এ অবস্থায় বাড়িটি ফিরে আসার পেছনে মূল ভূমিকা ছিল কুমিল্লা সদরের এমপি হাজী আকম বাহাউদ্দিন বাহারের। অথচ ডিসি কল্লোল তার গুণকীর্তনে মগ্ন থাকা স্থানীয় এক, দুটি পত্রিকার বদৌলতে শচীনদেবের ইতিহাস ঐতিহ্য রক্ষার দাবিদার হয়ে উঠতে চেয়েছিলেন। যদিও পরবর্তীতে সেই ‘দাবিদারের’ তিলকটি তার কপালে লাগেনি। তার দায়িত্বকালীন সময়ে শহরের রাজবাড়ি কম্পাউন্ডে গড়ে উঠে কালেক্টরেট স্কুল নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি কক্ষে পাঠাগার খোলা হয়। ডিসি কল্লোল এ পাঠাগারের নামকরণ করেন তার মায়ের নামে। এনিয়ে প্রশাসন ও জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। জেলার বিশিষ্টজনরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘কুমিল্লায় অনেক বরেণ্য ব্যক্তি ছিলেন, যারা শিক্ষা, সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলনে অবদান রেখেছেন। পাঠাগারটি তাদের কারো নামে তো হতে পারতো। কুমিল্লায় ডিসির মায়ের কি অবদান আছে পাঠাগারটি ওনার নামে করতে হবে। সব সন্তানেরই মা-বাবার প্রতি প্রগাঢ় শ্রদ্ধা ভালোবাসা থাকে। তাই বলে এমনটি করতে হবে ডিসি কল্লোলকে ?’
কেবল তাই নয়, গত বছরের ১ আগস্ট ডিসি কল্লোলের মা রওশন আরা বেগম মারা যাবার পর বিভিন্ন উপজেলা প্রশাসনে শোক ব্যানার টানানোসহ গণহারে দোয়ার মাহফিলও করানো হয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের দিয়ে। ঢাকায় অনুষ্ঠিত কুলখানির তবারুকও গিয়েছিল কুমিল্লা থেকে। আবার জেলা প্রশাসন ফান্ডের অর্থে প্রকাশ করা বই উৎসর্গ করা হয়েছে ডিসি কল্লোলের মায়ের নামে। এসব বিষয়গুলো খোদ প্রশাসনের বেশিরভাগ কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ সমালোচনা জন্ম দিয়েছিল। ডিসি কল্লোলের বদমেজাজ, সরাসরি গালমন্দ, চাকরি করার ভয়ভীতি দেখানোর কারণেই ওই সময় কেউ কিছু মুখ ফুটে বলার সাহস পায়নি। কেননা জেলা উন্নয়ন কমিটির সভা ও আইন শৃংখলা কমিটির সভাগুলোতে ডিসি কল্লোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে কথা বলতেন। এক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সভাকক্ষ থেকে বের করে দেয়ার মতো ঘটনাও দেখিয়েছেন।
এদিকে গত ২৩ আগস্ট গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে উপসচিব পদে বদলির নির্দেশ আসার পর নতুন কর্মস্থলের যোগদানের আগ পর্যন্ত হাসানুজ্জামান কল্লোল ২৭ দিনে দাওয়াতপত্রের মাধ্যমে ত্রিশটির বেশি এবং তার মৌখিক নির্দেশে আয়োজিত প্রায় সত্তরটিসহ শতাধিক বিদায় সংবর্ধনা গ্রহণ করেন। এসব সংবর্ধনায় যোগ দিয়ে তিনি জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারি এবং বেশকিছু প্রতিষ্ঠান থেকে কোটি টাকার বেশি নগদ অর্থ, ১৩টি এলইডি টিভি, আইফোন, স্মার্টফোন, দামী পোষাক এমনকি বেশকিছু স্বর্ণের চেইন ‘লাভটোকেন’ হিসেবে নিয়েছেন বলেও জানা গেছে। উপজেলা প্রশাসন ও জেলা সদরের বেশকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পণ্য উৎপাদন সমিতি, ব্যবসায়িসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ২৭দিন ধরে ডিসি কল্লোলের বিদায় সংবর্ধনার হিড়িক চলেছে। সংবর্ধনার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এক পর্যায়ে কোথাও কোথাও ডিসি কল্লোলের নির্দেশে ব্যানারে ‘বিদায় সংবর্ধনা’র পরিবর্তে মতবিনিময় বাক্য ব্যবহার করা হয়েছে। বিশেষ করে ডিসি কল্লোলের নির্দেশেই উপজেলা প্রশাসন বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন করতে বাধ্য হতেন। উপজেলা প্রশাসনে ডিসি কল্লোলের বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে গিয়ে অর্থের যোগান দিতে হিমশিম খেয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্র্মকর্তারা। যেহেতু সংবর্ধনার জন্য সরকারি বা প্রশাসনিক কোন বাজেট নেই। তাই সংবর্ধনা যাবতীয় খরচ ও উপহার সামগ্রীর জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য, বিশিষ্ট ব্যবসায়িদের কাছ থেকে টাকা চেয়ে নিতে হয়েছে। আর এমনটিই জানালেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। মুরাদনগর উপজেলা প্রশাসন ডিসি কল্লোলের পছন্দমত অনুষ্ঠান গোছাতে না পারায় সেখানকার নির্বাহী কর্মকর্তা ডিসি কল্লোলের ধমক খেয়েছেন। মোহাম্মদ মনসুর উদ্দিন নামের ওই নির্বাহী কর্মকর্তাকে একহাত দেখিয়ে নেবেন বলেও শাসান ডিসি কল্লোল।
বিদায় সংবর্ধনা নিতে গিয়ে নগদ টাকাসহ মূল্যবান পণ্যসামগ্রী গ্রহণের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন কুমিল্লার সদ্য বিদায়ী ডিসি হাসানুজ্জামান কল্লোল। একটি অনলাইন মিডিয়ায় এবিষয়ে হাসানুজ্জামান কল্লোল বলেছেন, ‘তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সত্য নয়। তিনি পদাধিকার বলে এখানকার সত্তরটির বেশি সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের সভাপতি। এসব সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান তাকে ভালোবেসে সংবর্ধনা দিয়েছে। আর বিদায় সংবর্ধনায় মানুষ কেনো তাকে টাকা দেবে। যারা এসব বলছে তারা মিথ্যা বলছে।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।