পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রতারণার মাস্টার মো. সাহেদ রিমান্ডে, গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে তার নানা কুকীর্তি তথ্য প্রকাশ করছে। কীভাবে এতদিন প্রতারণা চালিয়ে আসছিল। গ্রেফতারের পরও দ্রুত কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া, মামলার আসামি হয়েও ঘুরে বেড়ানো এবং সমাজ-রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তোলার মাধ্যমে নিজেকে জাহির করার তথ্য দিয়েছে সাহেদ। সাহেদের সাথে ঘনিষ্ট যোগাযোগ ও বিভিন্ন সময় তাকে অনৈতিক সহযোগিতা করেছে এমন ১৯ জনের নাম প্রকাশ করেছে সে। তাদের মধ্যে রাজনৈতিক নেতা, আমলা, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যক্তি রয়েছেন। অন্যদিকে সাহেদ করিমের বিরুদ্ধে গতকাল পর্যন্ত প্রায় ১৫ কোটি টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেয়ার খবর এসেছে র্যাবের হটলাইন নাম্বারে। তদন্তকারীদের ধারণা, সাহেদ বিদেশে টাকা পাচার করেছেন। এর মধ্যে যুক্তরাজ্য থেকে ই-মেইলে টাকা পাচারের তথ্য পাঠিয়েছে একটি প্রতিষ্ঠান। যুক্তরাষ্ট্রে সাহেদ টাকা পাঠিয়েছেন এমন খবরও পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
ডিবির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে সাহেদ যে সব তথ্য দিচ্ছেন তাতে মনে হচ্ছে তিনি আপাদমস্তক প্রতারক। তবে তার প্রতারণার কৌশল অন্যান্য প্রতারকচক্রের চেয়ে আলাদা। সে সমাজের এলিট শ্রেণির সংস্পর্শে গিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসতেন। শুরু থেকে গ্রেফতারের আগঅব্দি কারা কারা সাহেদের প্রতারণার শিকার হয়েছেন তা জানার চেষ্টা করছে ডিবি কর্মকর্তারা।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, জিজ্ঞাসাবাদে সাহেদ, মাসুদ পারভেজ ও তারেক শিবলী একে অপরের দোষ চাপিয়ে দিচ্ছেন। তাদের মুখোমুুখি করে কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ৩ জনই ভয়ংকর প্রতারক মিরপুর ও উত্তরায় রিজেন্ট হাসপাতালে রোগীদের ভর্তি করে ২ হাজার টাকার জায়গায় ১০ হাজার টাকায় আদায় করছিল। তাদের সারাদেশে অন্তত একশ’র মতো দালাল ছিল। দালালরা রোগী ভাগিয়ে এনে এসব অপকর্ম চালিয়ে আসছিল। কোনো রোগী বা স্বজন হাসপাতালের বিল দিতে না পারলে বাড়ির জায়গা-সম্পতি সাহেদের নামে লিখে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সাহেদের পাসপোর্টও জব্দ করে তা স্থগিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এভাবে একের এক রাষ্ট্রীয় ও নাগরিক সুবিধা থেকে তাকে বঞ্চিত করার মতো কঠোরতর ব্যবস্থা নেয়া হবে। সামনের দিনগুলোতে আরও কিছু শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এরই মধ্যে তার দুটো সুবিধা স্থগিত করা হয়েছে।
ব্যবসায়ী মোখলেসুর রহমানের মেয়ে সূবভী রহমান গতকাল বলেন, রিজেন্ট হসপিটালটি ছিল একটি কসাইখানা। সেবার নামে তারা মানুষের অর্থ লোপাট করছে। তারা রোগীদের মানুষ হিসেবে দেখে না। টাকা ছাড়া কিছু বুঝে না ওরা। যে কয়টা দিন হাপাতালে ছিলাম মনে হয়েছে দোজগখানায় ছিলাম। করোনা রোগীদের ফ্রি চিকিৎসা দেয়ার কথা থাকলেও তারা প্রতিটি রোগী ও তাদের স্বজনদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। কোথায় গেছে আমাদের চিকিৎসাসেবা। কোনো নজরদারী ছিল না। রিজেন্টের মালিক ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে এসব কাজ করেছে। হাসপাতালের ভেতরে পরিবেশই ছিল না। নামেই ছিল আইসিও। পরীক্ষাগুলো ছিল পুরোপুরি নকল। শুধু ধান্ধায় ছিল অর্থ কামানো। রোগী ও স্বজনরা টাকা দিতে দিতে কাহিল।
ডিবির জয়েন্ট কমিশনার আবদুল বাতেন জানান, সাহেদ কখনো ক্লিন ইমেজের লোক ছিল না। জিজ্ঞাসাবাদে সে শুধু একই কথা বলে আমার ইমেজ আছে। আসলে ওর কিছুই নেই। প্রকৃতপক্ষে সাহেদ একজন ধুরন্ধর, অর্থলিপ্সু ও পাষন্ড। অর্থ হাতিয়ে নেয়ার প্রশ্নে তাদের কাছে মানুষের জীবন-মৃত্যুর কোনো মূল্য নেই। সাহেদ তার সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট ও চিকিৎসা দেয়ার নামে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সাহেদের প্রতারণার বিষয়টি জানার পর কোনো রোগী যদি প্রতিবাদ করতেন, তাদের তিনি বিভিন্নভাবে হুমকি দিতেন। এর ফলে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পেতেন না। গত মার্চ মাস থেকে এখন পর্যন্ত সাহেদ করোনার ভুয়া রিপোর্ট ও চিকিৎসার প্রতারণার মাধ্যমে তিন থেকে চার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি।
সূত্রগুলো বলছে, যারা নানাভাবে সাহেদকে সাহায্য সহযোগিতা করে এসেছে। সাহেদও তাদের এ বিনিময় পরিশোধ করে গেছে। দিয়েছে অর্থকড়ি, গাড়ি, বিদেশে প্রমোদ ভ্রমণের সুবিধা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শাহেদকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ, তার মোবাইল ফোনের কললিস্ট, ঘটনাস্থলে যাতায়াতসহ বিভিন্ন তথ্য যাচাই-বাছাই করে ১৯ জনকে চিহ্নিত করেছে। গত ৬ জুলাই ঢাকার উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায় র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। করোনা প্রতারণাসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে ওই হাসপাতালটি সিলিগালা করে দেয়া হয়। হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ তখন থেকেই পলাতক ছিল। এসময়ে সাহেদ নানাভাবে চেষ্টা করেছে নিজেকে রক্ষার। যোগাযোগ করেছে প্রভাবশালীদের সঙ্গে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।