Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

মুশফিক কাঁদলেন, কাঁদালেন

বরিশালের বুলসের কান্ডজ্ঞানহীনতায় বিব্রত বিসিবি

| প্রকাশের সময় : ১৬ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্পোর্টস রিপোর্টার : জাতীয় টেস্ট দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের ( বিপিএল) দল বরিশাল বুলসের কর্ণধার এমএ আউয়াল চৌধুরী বুলু। তার অখিযোগ, মুশফিকের মধ্যে নাকি শৃঙ্খলাজনিত সমস্যা আছে! শুধু তাই নয়, তার অধিনায়কত্ব নিয়েও প্রশ্ন তুলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) এই পরিচালক। শুক্রবার এক টেলিভিশন চ্যানেলে দেয়া সাক্ষাৎকারে বুলু এসব অভিযোগ করেন। আর এতে বিস্মিত হন বরিশাল বুলসের ‘আইকন’ খেলোয়াড় মুশফিকুর রহিম। নিজ দলের কর্ণধারের এমন অভিযোগে গতকাল মিরপুরস্থ শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে গিয়ে চোখের পানি ফেলেন টেস্ট অধিনায়ক। কাল ফিটনেস ক্যাম্পের শুরুতে দীর্ঘ দিনের সতীর্থ ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা, তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেন মুশফিক। এরপরই বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন ও বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিকের সঙ্গে কথা বলেন তারা। দু’পক্ষের আলোচনা শেষে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন মুশফিকুর রহিম। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি তিনি। দু’চোখে টলমল করে অশ্রæ। ‘১৭ বছর ধরে ক্রিকেট খেলছি। জাতীয় দলের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিরটক খেলছি তাও একযুগ। এখন পর্যন্ত আমার সম্পর্কে কেউ এভাবে বলেননি।’ বলেন, দেশের সবচেয়ে সফল উইকেটরক্ষক। কথা বলার সময় গলা ধরে আসে মুশফিকের। বলেন,‘আমি ভালো খেলি না কিংবা ভালো অধিনায়ক নই এমন কথা যে কেউ বলতে পারেন। কিন্তু আমার শৃঙ্খলাবোধ কিংবা দায়িত্ববোধ নেই, আমি খেলোয়াড়দের উৎসাহ দেই না, দলের হয়ে কথা বলি না, এসব অভিযোগ শোনা আমার জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক। মল্লিক ভাই ও সুজন ভাইকে ঘটনাটি জানিয়েছি। তারা বলেছেন, বিষয়টি দেখবেন। আজ আমার সঙ্গে হয়েছে। কাল অন্যদের সঙ্গে যে হবে না, এর নিশ্চয়তা নেই। একজন খেলোয়াড় এতটুকু সম্মান আশা করতেই পারেন। দেশকে এতো দিন সেবা দিচ্ছি, একটু সম্মান তো আশা করি। একজন খেলোয়াড় হিসেবে একটু শ্রদ্ধা তো আমার প্রাপ্য।’ কথাগুলো বলেই মুশফিক কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে যান রুম থেকে।
টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে মুশফিককে যতটুকু সম্মান দেয়ার কথা তার ছিটেফোটাও দেননি বরিশাল বুলসের মালিক বুলু। তিনি তার বক্তব্য নিজের মতো করেই টিভিতে উপস্থাপন করেছেন। তা কতটুকু যুক্তিযুক্ত হয়েছে নিজেই বলতে পারবেন। তবে এটা বলা যায়, ক্রিকেটাদের প্রতি ¯েœহ বা সম্মান বোধ না থাকলে ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিক হওয়া নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে বরিশাল বুলসের মালিক বুলুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে মুঠোফোনে তাকে পাওয়া যায়নি। রিং হলেও তিনি মোবাইল ধরেননি।
ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টুর্নামেন্ট মানেই বৈচিত্রপূর্ণ সংস্কৃতির মেলবন্ধন। বিশ্বের ক্রিকেট তারকাদের এক ছাদের নিচে নিয়ে আসা। ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টুর্নামেন্ট মানে নানা নেতিবাচক খবরের উৎসও! বিপিএল এর ব্যতিক্রম নয়। বিপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি বরিশাল বুলসের স্বত্বাধিকারী যেমন বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন মুশফিকুর রহিমের অধিনায়কত্ব নিয়ে। প্রশ্ন তুলেছেন তাঁর দায়িত্ব ও শৃঙ্খলাবোধ নিয়েও। ব্যাপারটা বেশ অবাক করার মতোই। ক্রিকেটের প্রতি মুশফিকের নিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ নেই। এমনকি গত ১২ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে তাঁকে ঘিরে কোন বির্তকই হয়নি। কিন্তু একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাতকারে বুলু যা বললেন মুশফিক সম্পর্কে তা রীতিমতো হতাশাজনক। স্বাভাবিকভাবেই বুলুর মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়েছেন মুশফিক। পেয়েছেন কস্ট, হতাশও হয়েছেন তিনি। তাই বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলকে কাল বিষয়টি জানিয়েছেন বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক।
আবদুল আওয়াল বুলু শুধু একটি ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকই নন, তিনি বিসিবির একজন পরিচালকও। একজন দায়িত্বশীল কর্তার এমন মন্তব্যে স্বাভাবিকভাবেই বিব্রত বিসিবি। তবে তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিক। তিনি বলেন, ‘সে পরিচালক হোক আর যাই হোক। কিন্তু জাতীয় দলের খেলোয়াড়কে যথাযথ সম্মান দিতে হবে। একজন পরিচালক হিসেবে তাকে দায়িত্ব নিয়ে কথা বলতে হবে। তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছি আমরা। এটার জন্য যদি ক্ষমা চাইতে হয়, ক্ষমা চাইবেন তিনি। যেটা করা দরকার সেটা করতে হবে। বরিশাল বুলসের হয়ে মুশফিক খারাপ করতে পারে। কিন্তু একটা ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিক বলতে পারে না, মুশফিক খারাপ! সে জাতীয় টেস্ট দলের অধিনয়ক।’ আমরা বুলুকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেব। যথাযথ উত্তর না পেলে ফ্র্যাঞ্চাইজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। সেটা হতে পারে আর্থিক কিংবা অন্য কোনো শাস্তি।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিসিবি


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ