পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে মানব জীবনে জলবায়ুর প্রভাব শীর্ষক এক প্রতিবেদন গত শুক্রবার এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামীতে আবহাওয়া, কৃষি, স্বাস্থ্য, জীববৈচিত্র, নিরাপত্তা, বাণিজ্য, নগরায়ণ ও অভিবাসনে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে জলবায়ু পরিবর্তন। বাংলাদেশ সম্পর্কে যে কথা বলা হয়েছে তা ভয়াবহ। বাংলাদেশের প্রায় ১৩ শতাংশ ভূখন্ড সমুদ্রে বিলীন হয়ে যেতে পারে। আগামীতে বন্যার প্রভাব ২০ শতাংশ বাড়তে পারে। দ্রæত পদক্ষেপ না নিলে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা ও উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের ধান উৎপাদন ১৭ ভাগ এবং গম উৎপাদন ৬১ ভাগ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশে যে জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তন হচ্ছে তার আলামত প্রকাশিত হওয়া শুরু করেছে। অসময়ে বন্যা, অতিবৃষ্টি, বজ্রপাতের হার বৃদ্ধি পাওয়া, উপকূলে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, সমুদ্রের ভাঙন জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তনেরই প্রকাশ। এসব প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া বা মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সরকারসহ সকলের মধ্যেই এক ধরনের শৈথিল্য রয়েছে।
বাংলাদেশ চির ঝঞ্ঝা-বিক্ষুদ্ধ দেশ হিসেব পরিচিত। দেশের মানুষ বড় বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়েছে। আইলা, সিডর, নার্গিস নামক ইত্যকার সাইক্লোনে উপকূলভাগ লÐভÐ হয়েছে। লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু ও সম্পদহানি হয়েছে। এর উপর আবহাওয়ার বিরূপ পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবহাওয়ার এই পরিবর্তন শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই হচ্ছে না, বৈশ্বিকভাবেই হচ্ছে। এর জন্য উন্নত বিশ্বের শিল্পায়ন এবং অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণকে দায়ী করা হচ্ছে। বিশ্বে জলবায়ুর এ পরিবর্তন ঠেকাতে জোট গঠিত হয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র এ জোট থেকে বের হয়ে গেছে। জলবায়ুর পরিবর্তন ঠেকাতে একটি বৈশ্বিক ফান্ড আগেই গঠন করা হয়েছে। এ ফান্ড থেকে ঝুঁকিপূর্ণ দেশসহ বিভিন্ন দেশকে সহায়তা দেয়া হয়। বাংলাদেশও এ সহযোগিতা পাচ্ছে। তবে এ অর্থ কোথায় কীভাবে ব্যয় করা হচ্ছে, তার স্পষ্ট কোনো চিত্র নেই। ফান্ডের অর্থ যথাযথভাবে ব্যবহার না করার অভিযোগও রয়েছে। উপকূলে নামকাওয়াস্তে কিছু বনায়ন করে অর্থের ব্যবহার দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তন ঠেকাতে যে ধরনের উদ্যোগ নেয়া দরকার, তা নেয়া হচ্ছে না। এর নেতিবাচক প্রভাব আমাদের প্রধান খাত কৃষিতে ইতোমধ্যে পড়া শুরু করেছে। খড়া, অতি বৃষ্টিপাত এবং বন্যা ভয়াবহ রূপ লাভ করছে। ধান ও গমে প্রতি বছরই বøাস্ট রোগ বিস্তার লাভ করছে। এতে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বছরে এক শতাংশ হারে কৃষি জমি কমছে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, কৃষি জমিতে বাড়ি-ঘর ও অবকাঠামো নির্মাণের ফলে আশঙ্কাজনক হারে জমি হ্রাস পাচ্ছে। কিছুদিন আগে পাহাড়ি ঢলে পুরো হাওর অঞ্চলের ফসল পানিতে তলিয়ে যায়। পাহাড় ধসে শতাধিক মানুষের প্রাণহানি হয়। আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে দেশে বজ্রপাতের হার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গত কয়েক দশকের মধ্যে এ বছর সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত এবং মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আবহাওয়ার বিরূপ পরিবর্তন এবং নির্বিচারে পরিবেশ ধ্বংসের কারণে এ ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং দেশের নদ-নদীতে নাব্য কমে যাওয়ায় একদিকে নোনা পানি যেমন উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষিজমিতে প্রবেশ করছে, তেমনি সাগরে অবস্থিত ছোট ছোট দ্বীপগুলোতে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। আবহাওয়ার এই বৈরী আচরণ মোকাবেলায় কার্যকর কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে দেশে টাইফুন ও সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতের হার আরও বাড়বে বলে এডিবির প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এডিবির প্রতিবেদন ছাড়াও স্বাভাবিক দৃষ্টিতে বাংলাদেশের আবহাওয়ার নেতিবাচক পরিবর্তনটি দেখা যায়। বাংলাদেশের যে ষড়ঋতুর বৈশিষ্ট্য তা ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। বেশ কয়েকটি ঋতু অনুভব করা যায় না। এর উপর রয়েছে ন্যায্য পানি প্রাপ্তি নিয়ে ভারতের বিরূপ আচরণ। প্রতিবেশি দেশটির কারণে শুষ্ক মৌসুমে উত্তরাঞ্চল মরুরূপ নিচ্ছে। অন্যদিকে বর্ষায় উজানে দেয়া সব বাঁধ খুলে দেয়ায় বন্যায় ভেসে যাচ্ছে গোটা দেশ। এবার যে বন্যা দেখা দিয়েছে তা এই বাঁধ খুলে দেয়ার কারণেই হচ্ছে। পানি নিয়ে প্রতিবেশির এই অমানবিক আচরণ এবং দেশের অভ্যন্তরে নির্বিচারে পরিবেশ ধ্বংসের কারণে আবহাওয়ার নেতিবাচক পরিবর্তন দ্রæতায়িত হচ্ছে। এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার একমাত্র উপায় সচেতন হওয়া। সামুদ্রিক ঝড় ও জলোচ্ছাস থেকে রক্ষা পেতে উপকূল জুড়ে সবুজ বেষ্টনি গড়ে তোলা অপরিহার্য। সমুদ্রে জেগে উঠা দ্বীগুলোর ভাঙন ঠেকাতে বাঁধ নির্মাণ ও ব্যাপক হারে বনায়ন করতে হবে। কৃষি ও কৃষি জমি রক্ষার্থে পরিকল্পিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অনাবাদি ভূমি ব্যবহার উপযোগী করতে হবে। জলবায়ুর যে তহবিল রয়েছে তার যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষার কর্মসূচি নিতে হবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে পাহাড় কাটা ও বসতি স্থাপন ঠেকাতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করে তা বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশ করতে হবে। জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রভাব ও ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় দীর্ঘ মেয়াদী ব্যাপক পরিকল্পনা ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তার বাস্তবায়নের বিকল্প নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।