পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন-কনফারেন্স অব পার্টিজ, সংক্ষেপে ‘কপ’ শুরু হয়েছে মিসরের অবকাশ যাপন শহর শার্ম আল শেখে। কপের এটি ২৭তম সম্মেলন। দুই সপ্তাহ স্থায়ী এ সম্মেলনে অংশ নেবে প্রায় ২০০টি দেশের অন্তত ৪৫ হাজার প্রতিনিধি, যাদের মধ্যে সরকারপ্রধান, রাষ্ট্রপ্রধান ছাড়াও কূটনীতিক, বিশেষজ্ঞ ও অ্যাক্টিভিস্টরা হাজির থাকবেন। এই বৃহত্তম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিশ্বের পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে। অতীতে জলবায়ু সংকট নিরসনে গৃহীত সিদ্ধান্ত ও অঙ্গীকারসমূহ কতটুকু প্রতিপালিত হয়েছে, তারও একটা পর্যালোচনা হবে। জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বের একটা গুরুতর সমস্যা। এই সমস্যা ক্রমাগত ভয়াবহ ও ক্ষতিকারক হিসাবে প্রতিভাত হচ্ছে। উষ্ণতা ও কার্বন নিঃস্বরণ মাত্রাধিক হওয়ায় মানুষই কেবল নয়, বৃক্ষাদি, জীববৈচিত্র্য, প্রকৃতি ও পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সব কিছুর অস্তিত্ব ও স্থায়ীত্ব ঝুঁকির মুখে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, খরা, বান-বন্যা, জলোচ্ছ¡াস প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ছে এবং মানবিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। এই বিপর্যয়কর পরিস্থিতির অবসানে করণীয় নির্ধারণের জন্যই আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, ইতিপূর্বের জলবায়ু সম্মেলন থেকে নেয়া সিদ্ধান্ত খুব একটা কার্যকর হয়নি। ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিতে বলা হয়েছিল, বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ সেন্টিগ্রেডের নিচে নামিয়ে আনা হবে। এই লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। অন্যদিকে প্যারিস চুক্তির আওতায় জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিপূরণ হিসাবে প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার দেয়া হবে এবং দেবে উন্নত বিশ্ব। এই অর্থের যোগান-বণ্টনও অঙ্গীকার মোতাবেক হচ্ছে না। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকটের জন্য প্রধানত শিল্পোন্নত দেশগুলো দায়ী। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাসের মাধ্যমে বৈশ্বিক উষ্ণতা কমানোর দায়িত্ব তারা যথাযথভাবে পালন করছে না। ক্ষতিপূরণ তহবিলের অর্থও ঠিকমত দিচ্ছে না। এটা একটা বড় সমস্যা। এ ক্ষেত্রে তাদের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতার বিকল্প নেই।
জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা যেসব দেশের রয়েছে, বাংলাদেশ তার অন্যতম। এখনই এর উষ্ণতা যেমন বাড়ছে, তেমনি সাগরের উচ্চতাও বাড়ছে। বাড়ছে খরা-বন্যাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বিশেষজ্ঞদের আশংকা, এমন একটা সময় আসতে পারে, যখন উপকূলীয় এলাকায় একটা বিরাট অংশ সাগরে তলিয়ে যাবে, সম্পদ-সম্পত্তির বেশুমার ক্ষতি হবে এবং অন্তত কয়েক কোটি মানুষ নিরালম্ব ও উদ্বাস্তু হয়ে পড়বে। কাজেই, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত আশংকিত ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় বাংলাদেশকে অন্যান্য দেশের তুলনায় অধিক গুরুত্ব ও নজর দেয়া আবশ্যক। এ নিয়ে বিভিন্ন মেয়াদী জাতীয়ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন যেমন দরকার, তেমনি দরকার তার যথাযথ বাস্তবায়ন। এই অতিগুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামনে থেকে পালন করার কথা পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের। অথচ, এই মন্ত্রণালয়টি আদৌ আছে কিনা, সেটা বুঝার উপায় নেই। মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব ও অন্যান্য কর্মকর্তার যেভাবে দেশের পরিবেশ উন্নয়নে কাজ করা উচিত, সেভাবে তারা করছেন না বলেই পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। তাদের অভিযোগ, পরিবেশ নিয়ে যেসব কাজ হয়েছে বা হচ্ছে তার মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। অর্থের ব্যবহার নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। নির্ধারিত অর্থের একাংশ চুরি ও লুটপাট হয়ে যায়। যেহেতু পরিবেশের দিক দিয়ে দেশ অত্যন্ত সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে, কাজেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব ও কর্মকর্তাদের হওয়া উচিত চৌকস, ডায়নামিক, সৎ, দক্ষ ও সৃজনশীল। পরিবেশ উন্নয়ন ও ঝুঁকি মোকাবিলায় নেয়া প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন, যার যোগান দেয়া দেশের অর্থনীতির পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা প্রশ্নাতীত। অথচ, আজ পর্যন্ত মন্ত্রণালয় প্যারিস সম্মেলনের অঙ্গীকার ১০০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণ তহবিল থেকে কোনো অর্থ নিশ্চিত করতে পারেনি। জানা গেছে, মিসরের কপ-২৭ সম্মেলনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ একটি জাতীয় অ্যাকশন প্ল্যান প্রণয়ন করেছে। ওই প্ল্যান বাস্তবায়নে আগামী ২৭ বছরে (২০৫০) ২৩০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে। কোথা থেকে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ পাওয়া যাবে, সেটাই প্রশ্ন।
জানা গেছে, সম্মেলনে কয়েকজন মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অংশ নিচ্ছেন। তারা সেখানে ওই ১০০ বিলিয়ন ডলারের অংশ আদায়ের চেষ্টা করবেন। সম্মেলনে ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ নিয়ে একটি নতুন তহবিল গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে। ওই তহবিল থেকেও বাংলাদেশ অর্থ প্রাপ্তির চেষ্টা করবে। আন্তর্জাতিক তহবিল থেকে অর্থ প্রাপ্তির ব্যাপারে সক্রিয় চেষ্টা, যোগাযোগ ও লবিংয়ের প্রয়োজন অপরিসীম। এক্ষেত্রে আমাদের দুর্বলতা আছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতিপূরণ তহবিল থেকে আজ পর্যন্ত কোনো অর্থ না পাওয়া এর প্রমাণ বহন করে। আমরা আশা করবো, এবার সম্মেলনে অংশ নেয়া প্রতিনিধিদল চেষ্টার কোনো ত্রæটি করবে না। পরিবেশ বিষয়ে জাতীয় সচেনতা বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি। জনসচেনতা পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বলা বাহুল্য, আমাদের দেশের মানুষের পরিবেশ সচেনতা খুবই কম। এজন্য উপযুক্ত জনসচেনতা দরকার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।