পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সঙ্কট বাড়ছে। গোটা বিশ্বের জন্যই এটা গুরুতর সঙ্কট। এর দ্রæত সমধান কাম্য হলেও জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস ও কার্বন নিঃস্বরণ কমানোর পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে না। এই সঙ্কট সৃষ্টির জন্য যেসব দেশ প্রধানত দায়ী, তারা এ ব্যাপারে যথাযথ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিচ্ছে না। এহেন প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাংক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় ২০২২ অর্থবছরে ৩২ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নের ঘোষণা দিয়েছে। অর্থের এই পরিমাণ এ যাবৎ কালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। বিশ্বব্যাংকের শাখা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইনান্স করপোরেশন (আইএফসি) অর্থায়নের এই ঘোষণা দিয়েছে। দরিদ্র বিমোচন, অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের সরকারের অর্থনীতির ওপর চাপ হ্রাস, ব্যক্তিখাতে কর্মসংস্থান, বিদ্যমান সম্পদ কাজে লাগিয়ে প্রাইভেট এন্টারপ্রাইজকে শক্তিশালীকরণ ও ব্যক্তি পর্যায়ের ব্যবসার সম্প্রসারণ আইএফসি’র অন্যতম লক্ষ্য। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সঙ্কটের মারাত্মক নেতিবাচক দিক হলো প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের নিরালম্ব হয়ে পড়া এবং খাদ্যোৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পরিণামে খাদ্যাভাব বা দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হওয়া। বাংলাদেশ, বলা বাহুল্য, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অধিক সংকটাপন্ন দেশগুলোর অন্যতম। এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের বর্ধিত অর্থায়ন বাংলাদেশের জন্য ভালো খবর। ওদিকে ২০২৩ সালের দুর্ভিক্ষ ও মহামন্দা রোধে বিশ্বব্যাংকের তরফে ১৭০ বিলিয়ন ডলারের যে তহবিল গঠন করা হয়েছে, সেটাও বাংলাদেশের জন্য স্বস্তিকর। করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, জলবায়ু সংকট ইত্যাদি বিশ্বকে রীতিমত ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে আরেকটি মহামন্দা ও দুর্ভিক্ষাবস্থা সৃষ্টির আশংকা করা হচ্ছে। এরূপ আশংকার প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংকের এই তহবিল গঠন অবশ্যই ইতিবাচক। জানা গেছে, বর্ণিত তহবিলের মধ্যে ৩০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেওয়া হবে কেবলমাত্র খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্য।
বিশ্বের অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ পরিস্থিতি, খাদ্য নিরাপত্তা ইত্যাদি অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় এসে পৌঁছেছে। উন্নত ও ধনী দেশগুলোর অবস্থাও ব্যতিক্রম নয়। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি বিশ্বের এক নম্বর অর্থনীতি হলেও সংকটে পড়েছে। সেখানে মূল্যস্ফীতির রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। অনুরূপভাবে যুক্তরাজ্য, জাপান প্রভৃতি দেশও বিপাকে পড়েছে। যুক্তরাজ্যের টলটলায়মান অর্থনীতির জেরে অর্থমন্ত্রীর বিদায়ের পর প্রধানমন্ত্রীরও বিদায়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আমাদের প্রতিবেশী ভারতের অর্থনীতি শোচনীয় অবস্থায় আছে এবং তার খাদ্য পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। পাকিস্তান-শ্রীলংকার অবস্থা তো সবারই জানা। অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রতিপক্ষ চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমেছে। ওদিকে অন্তত ৪০টি দেশ প্রচÐ খাদ্য সঙ্কটে পড়েছে। বিশেষ করে কোস্টারিকা, বসনিয়া, রুয়ান্ডার অবস্থা খুবই খারাপ। আমাদের দেশের অবস্থা কী, সেটা কারো অজানা নেই। এর অর্থনীতি, জ্বালানি ও খাদ্য পরিস্থিতি মোটেই সন্তোষজনক নয়। সরকারের তরফে কিছুদিন আগে পর্যন্ত দেশকে অর্থনৈতিক অগ্রগতির দিক দিয়ে অন্যতম শীর্ষস্থানীয়, উন্নয়নে বিশ্বের রোল মডেল বলে দাবি করা হয়েছে। এখন অবশ্য এ দাবি শোনা যাচ্ছে না। এ থেকেই উপলব্ধি করা যায় আমাদের অবস্থা কেমন। অর্থনীতির কোনো ক্ষেত্রেই ভালো খবর নেই। বিদ্যুৎ পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। লোডশেডিং বেড়েছে। তেল-গ্যাস আমদানি ও বিদ্যুতের মূল্য পরিশোধে অর্থের টান পড়েছে। রিজার্ভ কমেছে। রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় হ্রাসের লক্ষণ স্পষ্ট। সাধারণ মানুষের অবস্থা কহতব্য নয়। মূল্যস্ফীতি আকাশ ছুঁয়েছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। বেকারের মিছিল লম্বা হতে শুরু করেছে। গ্রাম থেকে শহরে জনস্থানান্তর বেড়েছে এবং বাড়ছে। ওদিকে প্রধানমন্ত্রী কিছুদিন ধরে লাগাতার বিশ্বের খাদ্য পরিস্থিতির উল্লেখ করে খাদ্যোৎপাদন বাড়ানোর তাকিদ দিয়ে যাচ্ছেন। ধানের উৎপাদন কম হওয়া, ধান-চাল সংগ্রহ লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া এবং চাল-আটার দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়া যে অশনি সংকেত দেয়, তাতে খাদ্যেৎপাদন বাড়ানোর বিকল্প নেই।
আগেই উল্লেখ করেছি, আমাদের দেশ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অতি সঙ্কটপূর্ণ দেশগুলোর অন্যতম। বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়েছে, এমন একটা সময় আসতে পারে, যখন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার বড় অংশ সাগরের নিচে চলে যাবে, কয়েক কোটি মানুষ জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে। যতদিন এটি না ঘটছে, ততদিন ঝড়-জলোচ্ছ¡াস, বন্যা, খরা, নদীভাঙন ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত ও মানুষ বিপন্ন হতে থাকবে। সঙ্গতকারণেই বিশ্বব্যাংকের জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় গঠিত তহবিল থেকে বাংলাদেশ সহায়তা পাওয়ার অধিকার রাখে। অনুরূপভাবে দুর্ভিক্ষ রোধে গঠিত তহবিলের অংশ লাভেরও অধিকার রাখে। এই দুই তহবিল থেকে অর্থ পাওয়ার ব্যাপারে এখনই তৎপর হতে হবে। অতীতে এ ধরনের তহবিল থেকে বাংলাদেশ বিদ্যমান সিস্টেমেই কিছু কিছু সহায়তা পেয়েছে। এটা বাড়ানোর চেষ্টা করা যেতে পারে। এখানে প্রসঙ্গত উল্লেখ করা দরকার, অতীতে বৈদেশিক সহায়তা লুটপাট হয়েছে, চুরি ও অপচয় হয়েছে। ভবিষ্যতে যেন না হয়, সেটা আগেই নিশ্চিত করতে হবে। উভয় তহবিল থেকে খাদ্যোৎপাদন বাড়ানোর জন্য সহায়তা পাওয়া যাবে। তা যেন কেবল খাদ্যোৎপাদন বাড়ানোর কাজেই ব্যবহৃত হয়, সেটাও দেখতে হবে। জলবায়ু সংকট হোক, আর খাদ্য সঙ্কট হোক, এককভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। এজন্য অর্থমন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী, পরিবেশমন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সচিবগণসহ অন্যান্যদের এক সঙ্গে বসে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এইসঙ্গে বাস্তবায়নও সম্ভবপর করে তুলতে হবে। বাইরের অর্থায়নের সঙ্গে জাতীয়ভাবে অর্থায়নেরও একটি ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ, এ দু’ক্ষেত্রে যে কোনো ব্যর্থতার দায় সরকারের এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।