Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জলবায়ু সঙ্কট মোকাবিলায় জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী দৃঢ় ভূমিকা রাখতে পারেন

| প্রকাশের সময় : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সারাবিশ্বেই ফসিল জ্বালানি নিরাপত্তায় এক ধরণের অনিশ্চয়তা ও অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছে। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির ফলে সর্বত্র মূল্যস্ফীতির প্রবণতা দরিদ্র মানুষের জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। আমাদের মত দেশে মানুষকে বিদ্যুতের রেশনিং তথা লোডশেডিংয়ের কারণে সর্বস্তরে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশ্বের শিল্পায়ণ. নগরায়ণ ও পরিবহন ব্যবস্থা অতিমাত্রায় ফসিল জ্বালানি নির্ভরতা এবং ফসিল জ্বালানির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের কারণেই গত একশ বছরে ভ’-মন্ডলে অস্বাভাবিক ওয়ার্মিং বা উষ্ণায়ণ প্রক্রিয়া দেখা দেয়ার সাথে সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের নানামুখী প্রভাব দেখা দিয়েছে। প্রকৃতির অস্বাভাবিক ও অনিশ্চিত আচরন, ভারসাম্য ও খাদ্যচক্রে বড় ধরণের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে ক্লাইমেট চেঞ্জ’র প্রভাব মোকাবেলা বিশ্ব সম্প্রদায়ের এক নম্বর সম্মিলিত ইস্যু হলেও এ নিয়ে কাজের কাজ তেমন কিছুই হয়নি। শিল্পোন্নত দেশগুলোর অতিমাত্রায় ফসিল জ্বালানি ব্যবহারের কারণে প্রকৃতির অস্বাভাবিক আচরণ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রধান শিকার হচ্ছে বাংলাদেশসহ বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশগুলো। গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের প্রভাবে হিমালয়ের আইসক্যাপগুলো গলে গিয়ে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা প্রায় ২ মিটার বেড়ে গেলে বাংলাদেশের তিনকোটির বেশি মানুষ জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিনত হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। একইভাবে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা ক্রমশ দেবে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। এহেন বাস্তবতা সত্ত্বেও শিল্পোন্নত দেশগুলো জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় তাদের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নের বদলে শুধু অস্ত্র প্রতিযোগিতা ও নতুন নতুন যুদ্ধের সংকট সৃষ্টি করে চলেছে।

জাতিসংঘ বরাবরই যুদ্ধ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার ইস্যুগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে আসছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনের শুরুতে জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেসের বক্তব্যে আবারো সে প্রতিফলন দেখা গেলো। তার বক্তব্যে ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্য দিয়ে দ্বিধাবিভক্ত বিশ্বের মহাসংকটের চিত্রপট বর্ণিত হয়েছে। সংঘাত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মহাসংকটের দিকে ধাবমান বিশ্বকে বাঁচাতে তিনি প্রথমত জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ও মুনাফাবাজি নিয়ন্ত্রণের উপর তাগিদ আরোপ করেন। পেট্টোলিয়াম কোম্পানিগুলোর যথেচ্ছ মূল্যবৃদ্ধি মোকাবেলার পাশাপাশি জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ও দরিদ্র মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার পেছনে তাদের প্রতিশ্রুত অর্থবরাদ্দ নিশ্চিত করার উপর জোর দেন গুতেরেস। জাতিসংঘ মহাসচিবের বক্তব্যে গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের প্রভাবে বিশ্ব পুড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। পশ্চিমা বিশ্বের দেশে দেশে বনে-জঙ্গলে ওয়াইল্ড ফায়ার বা দাবানল, খরা, বন্যার কারণে যে ধ্বংসলীলা ও ফসলহানির কারণে খাদ্য নিরাপত্তার সংকট দেখা দিয়েছে সে সব নিয়ে দায়িত্ব পালনে উন্নত বিশ্বের নেতাদের অনীহা অনেকটাই স্পষ্ট। জলবায়ু পরিবর্তন বা যুদ্ধজনিত সামাজিক-অর্থনৈতিক সংকটগুলো কোনো একক দেশের পক্ষে মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। এ বছর বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে এবং পাকিস্তানের কয়েকটি প্রদেশে নজিরবিহিন বন্যায় হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এমনিতেই অর্থনৈতিক সংকটে থাকা দেশগুলোর পক্ষে একক প্রচেষ্টায় এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। বিশ্বসম্প্রদায়কে সম্মিলিত উদ্যোগ ও জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্য দিয়ে ভুক্তভোগী মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ও জাতিসংঘ মহাসচিবের বক্তব্য অভিন্ন হওয়াই স্বাভাবিক। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৭তম আিধবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যেই নিউইয়র্কে পৌছেছেন। আগামীকাল শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশণে শেখ হাসিনার ভাষণ দেয়ার কথা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে অনাবৃষ্টি, সামুদ্রিক জলোচ্ছাস, নিম্নচাপ, নদী ও সমুদ্রোপকুলীয় অঞ্চলে ভাঙ্গনের ফলে যে সামাজিক সংকট দেখা দিয়েছে তা’ মূলত জলবায়ু পরিবর্তন থেকে সৃষ্ট । সেই সাথে আন্তর্জাতিক নদী আইন লঙ্ঘন করে ভারতের বাঁধ নির্মান ও পানিপ্রত্যাহারের কারণে গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ বাংলাদেশের নদনদীতে নাব্য সংকট ও খাদ্য নিরাপত্তার ইস্যু প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে আসা বাঞ্ছনীয়। ইউক্রেন যুদ্ধের পেক্ষাপট এই মুহূর্তে জাতিসংঘের এক নম্বর আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠলেও রোহিঙ্গা সংকট এবং মিয়ানমারের উস্কানিমূলক তৎপরতা বিশ্বসম্প্রদায়ের গোচরে নিয়ে আসা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে এ বিষয়ে নিজস্ব মতামত ও আহ্বান যুক্ত হবে বলে আমরা আশা করি। শিল্পোন্নত বিশ্বের যুদ্ধব্যয় কমিয়ে মানবতার কল্যাণে ব্যয় বাড়ানোর পাশাপাশি ক্লাইমেটে চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভে প্রতিশ্রুত ও প্রত্যাশিত বাজেট বরাদ্দ থেকে বাংলাদেশের প্রাপ্য অংশ ছাড়ের ক্ষেত্রে ধীরগতি ও অনীহার বিষয়গুলো স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। জলবায়ু সংকট যেহেতু বিশ্বের সব দেশের সাধারণ সংকট, সুতরাং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ নিয়ে বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং ক্ষতিগ্রস্তদের নিয়ে একটি এলায়েন্স গড়ে তোলার চেষ্টা করতে পারেন। এ সংকটের জন্য প্রধানত যারা দায়ী, সেই উন্নত দেশগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি এবং তাদের অনুসৃত পথ থেকে সরে আসার ব্যাপারে ভূমিকা রাখতে পারেন। আমরা আশা করি, তিনি এ প্রয়াস চালাতে মোটেই কসুর করবেন না।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন