পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে ভারত নিজেকে দাবী করলেও এখন দেখা যাচ্ছে দেশটি ক্রমেই সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে। বিশেষ করে সংখ্যালঘু মুসলমানদের উপর কথায় কথায় নিপীড়ন, নির্যাতন ও হত্যার মতো ঘটনা এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, দেশটি উগ্র সাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। সম্প্রতি সাম্প্রদায়িক উগ্রতা বিষয়ক বিদেশী একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনেও ভারতকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা গরু জবাই, গরুর গোশত খাওয়া এবং বিক্রি করা নিয়ে মুসলমানদের উপর চড়াও হচ্ছে। গত বছর ফ্রিজে গরুর গোশত রাখার অভিযোগে এক মুসলমানকে তারা পিটিয়ে হত্যা করে। গত বৃহস্পতিবার বিজেপি শাসিত ঝাড়খÐে গাড়িতে করে গরুর গোশত নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে এক মুসলমানকে পিটিয়ে হত্যা করে। এছাড়া ঈদের বাজার নিয়ে বাসায় ফেরার পথে হরিয়ানায় এক মুসলমান কিশোরকে গণপিটুনি ও ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। তাকে ট্রেন থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হয়। এ নিয়ে দেশটির একাধিক শহরে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। সংখ্যালঘু মুসলমানদের উপর একের পর এক নৃশংস ও নির্মম আক্রমণ এবং হত্যাকাÐ সংঘটিত হলেও এর প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। ঝাড়খÐে হত্যাকাÐের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নামকাওয়াস্তে এক বিবৃতিতে বলেছেন, গরু রক্ষার নামে সহিংসতা ঠিক নয়। দেশকে অহিংসার পথে চলতে হবে। গো-ভক্তির নামে মানুষ হত্যা গ্রহণযোগ্য নয়।
নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজেপির ক্ষমতায় আসার ক্ষেত্রে দেশটির সংখ্যালঘু মুসলমানরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মুসলমানরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বিজেপিকে সমর্থন দেয়। অথচ দলটি ক্ষমতায় আসার পর এই মুসলমানরাই তাদের উগ্রবাদী মনোভাব এবং নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ইন্ডিয়াস্পেড নামক এক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গরুর গোশতকে কেন্দ্র করে যত হামলা হয়েছে, তার ৯৭ শতাংশই হয়েছে নরেন্দ্র মোদী ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর। এ সময়ে ৬৩টি হামলার মধ্যে ৩২টি হয়েছে তার নেতৃত্বাধীন বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে। বিজেপির ক্ষমতায় আসার পেছনে যে মুসলমানরা বিপুল সমর্থন দিয়েছে, দেখা যাচ্ছে, সেই বিজেপির শাসনামলেই তারা সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ। এই সময়ে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন অরএসএস এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, ভারতে একমাত্র হিন্দু ছাড়া আর কোনো ধর্মাবলম্বী থাকতে পারবে না বলে অবলীলায় দম্ভোক্তি করছে। তারা জোর করে মুসলমানসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের হিন্দুতে পরিণত করার প্রক্রিয়া চালিয়ে অনেককে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করতে বাধ্য করেছে। এখন তারা গো-রক্ষার নামে অব্যাহতভাবে মুসলমানদের হত্যা ও নির্যাতন করে চলেছে। এ ধরনের উগ্রতা নিয়ে মোদী সরকার তেমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। উল্টো আইন করেছে, জবাইয়ের উদ্দেশে বিক্রির জন্য কোনো পশু বাজারে তোলা ও কেনাবেচা করা যাবে না। পশু মারা গেলে তা মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। মরা গরুর চামড়া ছিলানো, হাড়গোড়সহ কোনো অংশই সংগ্রহ ও বিক্রি করা যাবে না। এ আইন থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, মোদী সরকার সংখ্যালঘু অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের অধিকারের ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সহানুভূতিশীল নয়। অবশ্য মোদীর কাছ থেকে এ আশা করা ভুল। কারণ ২০০২ সালে তিনি যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী, তখন ভয়াবহ দাঙ্গা সংগঠিত হয়। মুসলমানদের উপর যে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়, তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এ দাঙ্গায় প্রায় দুই হাজার মুসলমানকে হত্যা করা হয়। এতে মোদীর ইন্ধন ছিল বলে অভিযোগ উঠে। যদিও ক্ষমতায় আসার পর এ অভিযোগ থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এখন দেখা যাচ্ছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি দেশটির অসহিষ্ণু, উগ্রবাদী ও সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বানানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। তার দলের লোকজন এতটাই উগ্র হয়ে উঠেছে যে, সংখ্যালঘু মুসলমানরা কোনোভাবেই নিরাপদ বোধ করছে না। মুসলমানরা তাদের স্বাভাবিক ধর্মীয় কর্মকাÐ পরিচালনা করতে কুণ্ঠিত হয়ে পড়ছে। তারা প্রতিনিয়ত উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের নির্মমতার শিকার হচ্ছে। ভারতের শুভবুদ্ধি সম্পন্নরা এর প্রতিবাদ করলেও কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। মোদ্দা কথা, ভারত সরকারের মনোভাবই যদি থাকে মুসলমানদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা, তবে সেখানে কারোই কিছু করার থাকে না। বলা বাহুল্য, মোদী সরকার মুসলমানদের হত্যা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে লোক দেখানো লিপ সার্ভিস দিলেও ঘটনা বন্ধে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। বরং এ মনোভাবই স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে, দেশটিকে পুরোপুরি একটি হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করতে তারা যেন বদ্ধ পরিকর।
ভারতে সংখ্যা লঘু মুসলমানদের উপর যেভাবে সাম্প্রদায়িক হামলা, হত্যা ও নির্যাতন করা হচ্ছে, তা কোনো সভ্য দুনিয়ায় দেখা যায় না। মানবাধিকার নিয়ে যেসব আন্তর্জাতিক সংস্থা কাজ করছে, তাদের মুখেও কোনো রা নেই। কোনো ধরনের বাদ-প্রতিবাদ নেই। আমরা মনে করি, শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ হিসেবে এর প্রতিবাদ করা প্রত্যেকের কর্তব্য। প্রত্যেক মানুষেরই তার নিজস্ব কৃষ্টি-সংস্কৃতি ও ধর্মীয় আচার-আচরণ পালন করার অধিকার রয়েছে। এ অধিকার হস্তক্ষেপমুক্ত ও নির্বাধ হওয়া বাঞ্চনীয়। এখানে কারো একগুয়েমি বা উগ্রতা প্রদর্শনের সুযোগ নেই। ভারতে মুসলমানদের উপর যে অত্যাচার ও হত্যাকাÐ সংঘটিত হচ্ছে, তা কোনো বিবেচনায় মানবীয় আচরণের মধ্যে পড়ে না। ভারত নিজেকে বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে দাবী করছে, অথচ সংখ্যালঘু নাগরিকদের সাথে সমান আচরণ করছে না। এটা ভন্ডামি ছাড়া কিছু নয়। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, আমাদের দেশের তথাকথিত প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলে যারা সোরগোল করে, তাদের মধ্যে এ নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। এর বিপরীতে আমাদের দেশে কোনো সংখ্যালঘুর ক্ষেত্রে পান থেকে চুন খসলেই তারা সরব হয়ে উঠে। দেশ সাম্প্রদায়িক হয়ে গেল বলে কলরব শুরু করে। ভারতে যে সংখ্যালঘু মুসলমানরা একের পর এক নৃশংসতার শিকার হচ্ছে, এ নিয়ে তাদের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। এ ব্যাপারে তাদের মানবিকতাবোধ যেন নিষ্ক্রিয়। আমরা মনে করি, ভারতে মুসলমানদের উপর যে বর্বর হামলা হচ্ছে, তার অবসান এবং এর বিরুদ্ধে মানবতাবোধসম্পন্ন মানুষের সোচ্চার হওয়া উচিত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।