Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

কোরআনের খুদে হাফেজদের ওপর এ কোন বর্বরতা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৫ এপ্রিল, ২০১৮, ৩:৩৯ পিএম

একদল শিশু সুবিশাল কোরআন শরিফ মুখস্থ করেছে। তাদের এ কীর্তিতে খুশি শিক্ষকরা। খুশি গর্বিত বাবা-মায়েরাও।

রীতি অনুযায়ী, এ খুদে হাফেজদের মুখস্থ করার জন্য সংবর্ধনা প্রদান করা হবে। হাফেজ হওয়ার স্বীকৃতিস্বরূপ মাথায় পাগড়ি পড়ানো হবে।

কিন্তু ১১-১২ বছরের বাচ্চারা কোনো সংবর্ধনা পায়নি। মাথায় পাগড়ি পরানো হয়নি। বরং সংবর্ধনাস্থলেই তাদের ওপর বিমান থেকে বোমাবর্ষণ করা হয়েছে।

আফগানিস্তানের কুন্দুজপ্রদেশের একটি মাদ্রাসায় এমন বর্বরোচিত ঘটনার জন্ম দিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী।

এতে প্রায় ১৫০ খুদে হাফেজ নিহত হয়েছে। তাদের শিক্ষক ও অভিভাবকরাও রয়েছেন লাশের সারিতে। ফলে ধারণা করা হচ্ছে- নিহতের সংখ্যা অন্তত ২০০।

গত সোমবার এই বিমান হামলার ঘটনা ঘটে। তবে গত চার দিনেও এ ঘটনার রেশ ছড়িয়ে আছে সাইবার জগতে।

দেশে দেশে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষ খুদে হাফেজদের জন্য শোক প্রকাশ করেছেন। তাদের মন খারাপ ও বেদনার কথা ব্যক্ত করছেন সামাজিকমাধ্যমে।

ঘটনার বিষয়ে আফগান সিনেটর আব্দুল্লাহ কারলক বলেন, আকুন্দাজা গজর মাদ্রাসায় কোরআনে হাফেজদের সনদ প্রদান অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী হামলা চালিয়েছে। তখন সেখানে কয়েকশ লোক উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বলেন, আমি যা শুনেছি, তাতে দুই শতাধিক লোক সেখানে নিহত হয়েছেন। নিহতরা সেখানকার শিক্ষক, ছাত্র ও বেসামরিক লোক ছিল।

ওই সিনেটর আরও বলেন, সামরিক সংঘাত থেকে নিরপরাধ লোকজনকে রক্ষায় সব দলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

কুন্দুজের প্রাদেশিক কাউন্সিলর সাফিউল্লাহ আমিরি বলেন, বিমান হামলায় বহু বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন। আলেম ও শিক্ষার্থীরা সেখানে ছিলেন। নিরপরাধ লোকজনকে কেন হত্যা করা হয়েছে, আমরা তার প্রতিবাদ জানিয়েছি।

আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জেনারেল মোহাম্মদ রাদমানিশ বলেন, তারা তালেবানের একটি ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালিয়েছেন। দাস্তি আর্চি জেলার ওই স্থানটিকে তালেবান প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করতেন। তাজিকিস্তান ও উজবেকিস্তান থেকে আসা বিদেশি যোদ্ধারা সেখানে নিহত হয়েছেন।

কুন্দুজ শহর ও তাজিকিস্তান সীমান্তের কাছাকাছি দাস্তি আর্চি জেলা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, কোরআনে হাফেজদের ওই সনদ প্রদান অনুষ্ঠানে বেসামরিক লোকজন, শিক্ষার্থী, তাদের পরিবার ও আলেমরা উপস্থিত ছিলেন। সেনাবাহিনী তাদের ওপর ওই ধ্বংসাত্মক হামলা চালিয়েছে।

মোহাম্মদ আব্দুল হক নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, সেখানে যেসব শিশু শিক্ষার্থী ছিল, তাদের বয়স ১১-১২ বছরের মধ্যে হবে। কোরআন হেফজ করায় তাদের সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছিল।

বোমা হামলার পর হাসপাতালের বাইরে সন্তানহারা মায়েদের আর্তনাদ করতে দেখা গেছে। তাদের আশপাশে যারা দাঁড়িয়েছিলেন, তাদের সবাই কাঁদছিলেন।

এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, হামলায় শতাধিক লোক নিহত হয়েছেন।

হাজি গুলাম নামে একজন বলেন, আমি আমার খামারে কাজ করছিলাম। আমি যুদ্ধবিমান দিয়ে মাদ্রাসায় হামলার শব্দ শুনতে পেয়েছি। তালেবান ওই অঞ্চলে সক্রিয় থাকলেও ওই সনদপ্রদান অনুষ্ঠানে কোরআনে হাফেজ শিশুসহ কিশোররা উপস্থিত ছিল।

তিনি বলেন, মাদ্রাসার কাছে গিয়ে দেখি বহু কোরআনে হাফেজের লাশ পড়ে আছে। আহতদের দেখতে পেয়েছি। এটি ছিল বিপর্যয়। সব জায়গায় ছিল রক্ত। বহুলোক হামলায় নিহত হয়েছেন।

সামাজিক যোগাযাগমাধ্যমে ভেসে বেড়ানো অধিকাংশ মরদেহের ছবি ছিল শিশুদের। ওই ছবির ক্যাপশনে লেখা ছিল- আমি সন্ত্রাসী নই।

তালেবান এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ওই বিমান হামলায় ১৫০ শিক্ষার্থী, আলেম ও বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন। তখন সেখানে তাদের কোনো যোদ্ধা উপস্থিত ছিল না।

জেহাদ আখতার নামে একজন টুইটারে লিখেছেন- শিশুরা কোরআনে হাফেজ হওয়ার পর তাদের সংবর্ধনা ও উপহার নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার বদলে আফগান সামরিক বাহিনী তাদের বোমা উপহার দিয়েছে।

আফগানিস্তানে জাতিসংঘের সহযোগিতা মিশন (ইউএনএএম) জানিয়েছে, ওই ঘটনার তদন্ত করতে তাদের অনুসন্ধানী দল সেখানে গেছে।

আফগান সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ওই হামলায় জড়িত ছিল না।

কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে যুদ্ধবিমান ও বোমাভর্তি ছোট বিমান চালাতে আফগান সেনাবাহিনীকে যুক্তরাষ্ট্র প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে।

ন্যাটো জোটের উপদেষ্টাদের সহায়তায় আফগান বিমানবাহিনী গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন জায়গায় বিমান হামলা চালিয়ে আসছে। এতে ব্যাপক বেসামরিক লোকজন হতাহত হয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট বলছে, আফগান বিমানবাহিনী এখন উঠতির দিকে রয়েছে।

গত ২২ মার্চ তারা ফরাহপ্রদেশে এ-২৯ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে তালেবান লক্ষ্যবস্তুতে লেজাররশ্মি নিয়ন্ত্রিত বোমা ফেলেছে।

পাকিস্তানে নিয়োজিত আফগান রাষ্ট্রদূত ওমার জাকিলওয়াল এ হামলার নিন্দা জানিয়ে টুইটারে বলেছেন, দাস্তি আর্চিতে বিমান হামলায় ৭০ বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন। যাদের অধিকাংশই শিশু। আহত হয়েছেন আরও কয়েকশ লোক।

সাবেক আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইও এ হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। সন্ত্রাসবাদ দমনের নামে আমাদের বাড়িঘর, হাসপাতাল ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা সব ধরনের নীতিনৈতিকতার বিরোধী।

২০১৫ সালের অক্টোবরে একই জেলায় ডক্টরস উইদাউট বার্ডাসের হাসপাতালে হামলা চালিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের এসি-১৩০ যুদ্ধবিমান। এতে চিকিৎসক, রোগীসহ অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী তখন বলেছিল, ওই ভবনটি যে একটি হাসপাতাল হবে, তা আমরা বুঝতে পারিনি। পেন্টাগন ওই হামলাকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচনা করেনি।

তালেবানের কাছ থেকে কুন্দুজপ্রদেশকে উদ্ধারে সাহায্য করতে মার্কিন সেনাবাহিনী ওই হামলা চালিয়েছিল।

চলতি মাসের শুরুতে আফগান নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনীর একটি ইউনিট নানগারহার প্রদেশের চাপারহার জেলায় হামলা চালালে দুই কিশোরসহ সাত কৃষক নিহত হন।

আফগান বাহিনী এ হতাহতদের তালেবান যোদ্ধা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, ৩১ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীর সহায়তায় আফগান বিশেষ বাহিনী মেওয়ান্দ জেলায় তালেবান যোদ্ধাদের ওপর হামলা চালায়। এতে অন্তত ২০ বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন। সূত্র: আলজাজিরা ও ওয়াশিংটন পোস্ট।

 



 

Show all comments
  • ইসমাইল ইমন ৫ এপ্রিল, ২০১৮, ৪:২৭ পিএম says : 0
    আল্লাহ শহীদ কোরআনের হাফেজদের জান্নাতবাসী করুন..হামলাকারীদের বিচার করুন
    Total Reply(0) Reply
  • ৫ এপ্রিল, ২০১৮, ৯:০২ পিএম says : 0
    আল্লাহ তুমি —হাফেযে কুরআনদেরকে জান্নাতুলফিরদাউস দান কর।
    Total Reply(0) Reply
  • FARHAD ৭ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:৩৪ পিএম says : 0
    জালেম সরকার ও মিত্র মার্কিনবাহিনীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা হওয়া দরকার
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ মাসুম বিল্লাহ ৭ এপ্রিল, ২০১৮, ১০:১২ পিএম says : 0
    এখানে আপনি আপনার মন্তব্য করতে পারেন আল্লাহ্ হাফেজদের জান্নাত দানকরেন
    Total Reply(0) Reply
  • Nadir ৮ এপ্রিল, ২০১৮, ১:৪৩ পিএম says : 0
    YA ALLAH GIVE PUNISHMENT THEM AS SOON AS POSSIBLE.
    Total Reply(0) Reply
  • Nadir ৮ এপ্রিল, ২০১৮, ১:৫৮ পিএম says : 0
    THEY ALL WENT TO IN SHA ALLAH PARADISE. THERE IS NO DOUBT.
    Total Reply(0) Reply
  • মাহাদি ৯ এপ্রিল, ২০১৮, ১:৪৩ এএম says : 0
    যতক্ষন আমরা পোরুপুরি ইসলাম না মানব, আমাদের উপর অত্যচার আরো হতে বাদ্য,কেননা অদের সত্রু আমি আপনি নয়!ইসলাম অদের মাথা বেথা। আল্লাহ সহায়।
    Total Reply(0) Reply
  • মাহাদি ৯ এপ্রিল, ২০১৮, ১:৪৩ এএম says : 0
    যতক্ষন আমরা পোরুপুরি ইসলাম না মানব, আমাদের উপর অত্যচার আরো হতে বাদ্য,কেননা অদের সত্রু আমি আপনি নয়!ইসলাম অদের মাথা বেথা। আল্লাহ সহায়।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বর্বরতা

৮ এপ্রিল, ২০১৯
১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬
১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ