Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কয়লাকে হটিয়ে দ্রুত বাজার দখল করবে সৌরবিদ্যুৎ

| প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : প্রযুক্তির আধুনিকায়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পরিবেশদূষণ। শক্তির উৎস হিসেবে কয়লার ব্যবহার পরিবেশদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ। গোটা বিশ্ব যখন মরিয়া হয়ে কয়লার বিকল্প খুঁজছে, তখন আশার আলো বয়ে এনেছে বøুমবার্গ নিউ এনার্জি ফিন্যান্সের (বিএনইএফ) পূর্বাভাস। এক প্রতিবেদনে বিএনইএফ জানায়, বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাসের চেয়েও দ্রæতগতিতে কমবে সৌরবিদ্যুতের দাম। দামের এ আকস্মিক পতনের কারণে অচিরেই বিশ্বের প্রায় সর্বত্রই কয়লা ও প্রাকৃতিক গ্যাসকে হটিয়ে বাজার দখল করবে সৌরবিদ্যুৎ। একসময় সৌরবিদ্যুৎ এতটাই ব্যয়বহুল ছিল যে, কেবল মহাকাশযানে এ শক্তি ব্যবহার করা হতো। তবে ক্রমেই এর দাম কমতে থাকায় কয়েক বছরের মধ্যে প্রায় সবক্ষেত্রেই সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার নিশ্চিত করা যাবে। ২০৪০ সাল নাগাদ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বাজার কীভাবে বিকশিত হবে, তার পূর্বাভাস দিয়েছে বিএনইএফ। বিএনইএফের গবেষকরা জানান, এরই মধ্যে জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রের নতুন কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর খরচের সঙ্গে সমান তালে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছে সৌরবিদ্যুৎ। ২০২১ সালের মধ্যে সৌরবিদ্যুৎ ভারত ও চীনের ক্রমবর্ধমান বাজারে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবে বলে জানায় বিএনইএফ। কল্পনাতীত দ্রæততায় সৌরবিদ্যুৎ বিকাশের ইঙ্গিত দিচ্ছে বিএনইএফের পূর্বাভাস। সৌরবিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান বিকাশের কারণে ২০২৬ সালের পর জীবাশ্ম জ্বালানির ফলে সৃষ্ট বায়ুদূষণের মাত্রা কমতে শুরু করবে। তবে বিএনইএফের এ পূর্বাভাস আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার কেন্দ্রীয় পূর্বাভাসের সঙ্গে সংঘাতপূর্ণ। কারণ বাতাসে জীবাশ্ম জ্বালানি সৃষ্ট কার্বন নিঃসরণের মাত্রা কয়েক দশক ধরে ক্রমাগত বাড়ছে বলে জানায় আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা। বিএনইএফের লন্ডন শাখার গবেষক ও প্রতিবেদনের প্রধান লেখক সেব হেনবেস্ট জানান, নতুন জ্বালানি প্রযুক্তির দাম এমনভাবে কমছে যে, ভবিষ্যতে সৌরবিদ্যুতের একচ্ছত্র আধিপত্য নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই, বরং কবে নাগাদ তা বাস্তবায়ন হবে তা-ই এখন দেখার বিষয়। ২০৪০ সাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বাজার কী কী পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাবে, প্রতিবেদনে তার একটি সামগ্রিক পূর্বাভাস দিয়েছে বিএনইএফ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাজার চীন ও ভারত। বিদ্যুৎ উত্পাদনে প্রায় ৪ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ আকৃষ্ট করেছে দেশ দুটি, যা বিদ্যুৎ শিল্পের মোট বিনিয়োগের প্রায় ৩৯ শতাংশ। বর্তমানের মূলধারার নবায়নযোগ্য প্রযুক্তির মধ্যে সবচেয়ে ব্যয়বহুল হলো বায়ুচালিত বিদ্যুৎ। তবে ২০৪০ সাল নাগাদ উপকূলবর্তী বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর খরচ ৭১ শতাংশ হ্রাস পাওয়ায় তা বিদ্যুৎ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এছাড়া ২০৪০ সাল নাগাদ লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারিতে অন্তত ২৩ হাজার ৯০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হবে। অধিক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন হওয়ায় বাসগৃহ ও বিদ্যুৎ গ্রিডের সরবরাহ দক্ষতা বাড়াবে এসব ব্যাটারি। সেই সঙ্গে এসব ব্যাটারি বৈদ্যুতিক গাড়িতে ব্যবহার করা হবে। অন্যদিকে প্রাকৃতিক গ্যাসে উৎ্পাদন বাড়বে ১৬ শতাংশ। বিএনইএফ জানায়, জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রভাব বেশ চমকপ্রদ। ২০০৯ সালের তুলনায় ফটোভোলটাইক প্যানেলের খরচ বর্তমানে ৭৫ শতাংশ কমেছে। ২০৪০ সাল নাগাদ এ খরচ আরো ৬৬ শতাংশ কমবে বলে জানান গবেষকরা। ফলে চীন ও ভারতের মতো কয়লানির্ভরশীল দেশগুলোতেও ২০২০ সালের পর সস্তায় সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। তবে গোটা বিশ্ব সবুজ জ্বালানিতে আগ্রহী হয়ে ওঠায় এর দ্বারা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হবে কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প। বিএনইএফের মতে, ৩৬৯ গিগাওয়াট প্রকল্প ২০৪০ সাল নাগাদ ভেস্তে যাবে। এছাড়া পুরনো কয়লাবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি সস্তা ও দূষণমুক্ত জ্বালানি ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশেও ২০৪০ সাল নাগাদ কয়লাবিদ্যুৎ সক্ষমতা বর্তমানের চেয়ে অর্ধেকে নেমে আসবে। অন্যদিকে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং পরিবেশবান্ধব আইন প্রয়োগ করায় ইউরোপে কয়লা সক্ষমতা ৮৭ শতাংশ কমবে। উল্লেখ্য, ২০৪০ সাল নাগাদ বিশ্বের মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের অর্ধেক সৌর ও বায়ুশক্তি ব্যবহার করে উৎপন্ন করা হবে। ফলে চলতি শতাব্দীর শেষে তাপমাত্রার বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখা সম্ভব হবে। বøুমবার্গ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কয়লা

১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
১৩ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ