পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এলসি জটিলতায় যথা সময়ে কয়লা আমদানি সম্ভব না হওয়ায় মুখ থবড়ে পড়েছে বাগেরহাটের রামপালের বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশীপ পাওয়ার কোম্পানির উৎপাদন। কিছুদিন ধরেই আশঙ্কা করা হচ্ছিল কাঁচামাল সঙ্কটে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আশা করছে, দ্রæত সমস্যার সমাধান হবে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পুনরায় চালু করা সম্ভব হবে। তবে কবে নাগাদ এটি আবার চালু হবে তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। গত শনিবার সকাল থেকে বিদ্যুৎ প্লান্টটি বন্ধ হয়ে গেছে। প্লান্টটি বন্ধ থাকায় জাতীয় গ্রীডে দৈনিক ৫শ’ থেকে সাড়ে ৫শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটির প্রথম ইউনিট গত বছর ১৫ আগস্ট পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করে। প্রথম ইউনিটের পরীক্ষামূলক উৎপাদন ৪০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত পৌঁছালে ২৪ অক্টোবর বাংলাদেশে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। সে সময় সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়। ২৫ নভেম্বর থেকে টানা ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পরীক্ষামূলক উৎপাদন করে কেন্দ্রটি। ঢাকার বিদ্যুৎ সঙ্কট কাটাতে গত ১৭ ডিসেম্বর রাত থেকে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ শুরু করা হয়। প্রথম ইউনিট থেকে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়। ১৭ ডিসেম্বর থেকে এখানে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়া শুরু হয়। তখন ২০২৩ সালের জুনে এই কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট থেকে আরও ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার কথা জানিয়েছিল বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ।
প্রতিষ্ঠানটির উপমহাব্যবস্থাপক আনোয়ারুল আজিম ইনকিলাবকে জানান, আমরা প্রতিদিন ৫৬০ থেকে ৫৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করে আসছিলাম। কয়লা না থাকায় গত শনিবার সকাল ৯টার দিকে কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। কয়লা সঙ্কটের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়লা আমদানিতে ডলার প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার না দেওয়ায় কয়লা আমদানি করা যাচ্ছে না। কেন্দ্রটির একটি ইউনিট পুরোপুরিভাবে চালু রাখতে প্রতিদিন পাঁচ হাজার মেট্রিক টন কয়লার প্রয়োজন হয়। তিনি আরও জানান, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ইন্দোনেশিয়ায় কয়লাবোঝাই একটি জাহাজ প্রস্তুত হয়ে আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণপত্র পাওয়া নিশ্চিত হলে জাহাজটি বাংলাদেশের পথে রওনা হবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এর প্রভাব দেশবাসীর উপর পড়বে না। কারণ এখন শীতকাল চলছে, তাই বিদ্যুতের চাহিদা কম রয়েছে।
নাম প্রকাশ করা হবে না এমন শর্তে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ডলার সঙ্কটের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক কয়লা আমদানির ঋণপত্র খোলার অনুমোদন দিতে দেরি করছে। ঋণপত্র খুলতে না পারার বিষয়টি চিঠি দিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে। গত ১০ ও ১১ জানুয়ারি বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি।
এদিকে, চুক্তি অনুযায়ী রামপালের বিদ্যুৎ বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডকে (বিপিডিবি) কিনতে হবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ থাকলেও চুক্তি অনুযায়ী বিপিডিবিকে কেন্দ্রের সক্ষমতা ব্যয় বা ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে। বিপিডিবির কাছে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির বিপুল অংকের পাওনা হয়েছে। কিন্তু বিপিডিবি অর্থ পরিশোধ করছে না। এর মধ্যে বিপিডিবি তাদের কেন্দ্রটি চালিয়ে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিল। যার কারণে জরুরি মজুদ কয়লা দিয়েই এত দিন কেন্দ্রটি চালু রাখা হয়।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে ভারত ও বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০১২ সালের ২৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এবং ভারতের এনটিপিসি লি. এর মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (প্রা.) লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল) নামে কোম্পানি গঠিত হয়। এই কোম্পানির অধীনে ১৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট (রামপাল) নামে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ শুরু হয়। রামপাল উপজেলার রাজনগর ও গৌরম্ভা ইউনিয়নের সাপমারী কৈগর্দ্দাশকাঠি মৌজায় ১ হাজার ৩৪ একর জমি অধিগ্রহণ শেষে ১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ শুরু হয়। প্রায় ১০ বছর বিশাল কর্মযজ্ঞ শেষে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যায় প্রতিষ্ঠানটি।
সুন্দরবনের কাছে এবং কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হওয়ায় শুরু থেকেই পরিবেশবাদীরা প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। পরিবেশের ক্ষতি করতে পারে এমন আশঙ্কায় সরকারকে এমন প্রকল্প থেকে সরে আসার অনুরোধ করেছিল আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।