পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঢাকার অদূরে রাজউকের পূর্বাচল আবাসিক প্রকল্প যেন হয়ে গেছে কয়লা খনি। এখানে সেখানে কয়লার স্তূপ করে রেখে পরিবেশ দূষণ করা হচ্ছে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় খনির কয়লা উত্তোলন করে পাহাড় সাজিয়ে রাখা হয়েছে। পরিবেশ দূষণ আইনের তোয়াক্কা না করে উন্মুক্তস্থানে কয়লার পাহাড় সাজিয়ে রেখেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান রাজউক। অথচ ঘুষ ও দুর্নীতি বন্ধ এবং রাজধানীর পরিবেশ রক্ষায় রাজউক চেয়ারম্যানকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সেতু বিভাগের সচিব।
রাজউকে এখন চলছে সেবা সপ্তাহ। অথচ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটিতে ঘুষ-দুর্নীতি ওপেন সিক্রেট। রাজউকের সেবা খাতের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘুষ ও দুর্নীতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই গোপন লেনদেনের বিষয়টি মেনে নিয়েই কাজ করাচ্ছেন রাজধানীর সাধারণ মানুষ। কিন্তু বর্তমানে করোনা মহামারির মধ্যে বেড়েছে সেবাগ্রহিতাদের দুর্ভোগ এবং ঘুষ লেনদেনের হার। আবার ফাইল আটকে হাজার হাজার টাকা নিচ্ছে গ্রাহকের কাজ থেকে। একজন তত্ত্বাবায়ক (এস্টেট ও ভূমি) কর্মকর্তা তার ক্ষমতা রাজউকের চেয়ারম্যানের চেয়ে অনেক বেশি। তার নাম সৈয়দ রফিকুল ইসলাম। পূর্বচাল প্রকল্পের পরিচালক মাসিক ভাড়া নিয়ে সরকারি জমি এবং উন্মুক্তস্থানে সাহারা ইন্টারপ্রাইজ, মেসার্স সরকার ট্রেডার্সসহ বেশ কয়েকটি একটি প্রতিষ্ঠানকে কোটি টাকার বিনিময়ে কয়লা রাখতে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।
গতকাল বুধবার কার্যালয়গুলো ঘুরে দেখা গেছে, সেবাগ্রহীতাদের থেকে কর্মকর্তাদের কাছে দালালদের আনাগোনা বেশি। আর পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করছে জোনাল অথরাইজডকেন্দ্রিক শক্তিশালী সিন্ডিকেট। ফলে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ দিয়েও কমছে না এ অনিয়ম।
সরকারের সাবেক সেতু বিভাগের সচিব মো. বেলায়েত হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, রাজধানীর পূর্বাচল নতুন শহরের ৪ নম্বর প্লটের শত শত গ্রাহকের বরাদ্দপ্রাপ্ত ফাঁকা জমিতে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে উন্মুক্তস্থানে হাজার হাজার টন কয়লা রাখা হয়েছে। যা এলাকাসহ রাজধানী ঢাকা পরিবেশ ও বায়ুদূষণ করছে। এগুলো সড়ানোর জন্য গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব এবং রাজউক চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করেছি। তারা জানিয়েছেন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এছাড়া প্রকল্পের পরিচালক ও প্রধান প্রকৌশলী উজ্জল মল্লিককে কয়েকবার বলেছি। তার পরও সরানো হয়নি। বাধ্য হয়ে এলাকা বাসি ও রাজধানী বাসিকে রক্ষার জন্য অভিযোগ করেছি।
টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, রাজউক থেকে বিনা ঘুষে সাধারণ মানুষ সেবা পেয়েছেন। রাজউক ও দুর্নীতি সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। রাজউক আর দুর্নীতি একাকার হয়ে গেছে। ঘুষ ছাড়া কোনো সাধারণ নাগরিকের রাজউকের সেবা পাওয়া বিরল ঘটনা। তবে রাজউকের সব কর্মকর্তা দুর্নীতিগ্রস্ত নয়। কিছু কর্মকর্তা ভালো রয়েছেন এবং দায়িত্ব পালন করছেন। কিছু খারাপ কর্মকর্তার কারণে ভালো অফিসার রাজউকে যেতে যান না। তিনি বলেন, রাজউকে দুর্নীতি ও অপব্যবস্থা রয়েছে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে। রাজউক একটি মুনাফা অর্জনকারী ও লাভজনক প্রতিষ্ঠান। সেখানে জনবান্ধব হতে পারেনি।
এদিকে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এবং বর্তমান নতুন সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, কিছু অনিয়মের অভিযোগ আছে। তারপর ভালো করার জন্য কাজ করছি। তবে আবেদন ঝুলে থাকা, নকশা পরিবর্তন, কর্তব্যে অবহেলা, সেবাপ্রত্যাশীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ বিষয়েগুলো আমি শুনেছি। এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, সেতু বিভাগের সচিব যে অভিযোগ দিয়েছে। তা সত্য। পূর্বচাল যে কয়লার পাহাড় গড়ে উঠেছে। সেটা অনেক ব্যবসায়িরা রেখেছেন। পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। সেগুলো বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনগণ একটু সচেতন হলে কর্মকর্তারাও অন্যায় করতে পারবে না। তাই সকল সেবাগ্রহীতাকে তিনি সচেতন হওয়ার অনুরোধ জানান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজউকের একাধিক কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, ‘ঘুষ প্যাকেজে’ সব কর্মকর্তার ভাগ থাকে। এমনকি যে পিওন ফাইল টেনে এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে নিয়ে যায় তিনিও সেখান থেকে কিছু টাকা পান। কাউকে বঞ্চিত করা হয় না। কিন্তু ঘুষ না পেলে ফাইল নড়ে না। প্যাকেটের টাকা না দিলেই নানা আইনের মারপ্যাঁচ আসে। ফাইল টেবিলে চাপা পড়ে থাকে বছরের পর বছর।
জানা গেছে, সেতু বিভাগের অভিযোগে বলা হয়েছে, রাজধানীর পূর্বাচল নতুন শহরের ৪ নম্বর প্লটের রাজউকের আঞ্চলিক অফিসের সামনে শত শত গ্রাহকের বরাদ্দপ্রাপ্ত ফাঁকা জমির উন্মুক্তস্থানে হাজার হাজার টন কয়লা রাখা হয়েছে। যা এলাকাসহ রাজধানী ঢাকা পরিবেশ ও বায়ুদূষণ করছে। এ প্রকল্পের পরিচালক উজ্জল মল্লিক নিজেই ২ কোটি টাকার বিনিময়ে সাহারা ইন্টারপ্রাইজসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কয়লা রাখতে দিয়েছেন। এ কারণে এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মানুষজনের করোনাসহ নানা ধরনের রোগব্যাধি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমন অবস্থান এলাকা থেকে কয়লা স্তূপ সড়ানোর জন্য অনুরোধ করছি।
ভোগান্তি কমেনি ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র এবং ফ্ল্যাটের নামজারি, নকশা অনুমোদন সংক্রান্ত সংস্থাটির অনলাইন সেবা কার্যক্রমে। অভিযোগ রয়েছে, করোনা মহামারির মধ্যেও সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে অধিক হারে ঘুষ। এরপর দীর্ঘমাস ধরে আটকে আছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) আট অঞ্চলে প্রায় ১৮ হাজার ফাইল। দুর্নীতি কমাতে ও দ্রুত সেবা নিশ্চিত করতে ২০১৯ সালের ৪ মে থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় অনলাইনে নিবন্ধন ও আবেদন কার্যক্রম। এরপর থেকে ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র ও ভবনের নকশা অনুমোদন প্রক্রিয়ার আবেদন আর হাতে হাতে নেওয়া হচ্ছে না। ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করে যে কেউ ঘরে বসেই এ সংক্রান্ত সেবার আবেদন করতে পারছেন। কিন্তু বাস্তবে এ পদ্ধতিতে অভিনব কায়দায় হচ্ছে ঘুষ লেনদেন। আবেদনকারী অনলাইনে ঢুকেই দেখতে পাচ্ছেন কোনো কর্মকর্তার কাছে তার আবেদনটি আটকে আছে। এ ক্ষেত্রে দ্রুত কাজ করিয়ে নিতে সেবাগ্রহীতা নিজে বা দালাল মাধ্যমে ওই কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে কাজ করিয়ে নেন। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফাইল আটকে থাকে অথরাইজড অফিসারের কাছে। মূলত দুর্নীতির মধ্য অবস্থানেই রয়েছেন অথরাইজড অফিসার। মাঠপর্যায় থেকে প্রথম ফাইলটি যায় এলাকার পরিদর্শকের কাছে। ওই পরিদর্শকের হাত হয়ে যায় প্রধান পরিদর্শক এবং সহকারী অথরাইজড অফিসারের হাতে। এরপরে ফাইল চূড়ান্ত হতে জমা হয় অথরাইজড অফিসারের হাতে। আর এখানেই হয় চূড়ান্ত জিম্মি দশা। এছাড়া অথরাইজড অফিসার হয়ে ফাইল যায় জোনাল পরিচালকের হাতে। বিশেষ কিছু ফাইল পরিচালক হয়ে মেম্বার ও চেয়ারম্যান পর্যন্ত গেলেও বেশিরভাগ ফাইলের কাজ পরিচালক পর্যন্ত সমাপ্ত হয়। অভিযোগ রয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে অথরাইজড অফিসার নিজ অফিসের স্টাফদের নিকট আত্মীয় ফাইলও ফ্রি করে দেন না। ফাইল প্রতি হিসাব করে ঘুষের টাকা নেন। সব থেকে বেশি দুর্নীতি হয় ভবনের নকশা অনুমোদন পেতে ও রাজউকের নিজস্ব প্রকল্পের প্লট হস্তান্তর প্রক্রিয়ায়।
সেবার মান বাড়াতে ২০১৩ সালে রাজউককে ৪টি অঞ্চল থেকে ৮টি অঞ্চলে উন্নতি করা হয়। কিন্তু আট জোনে অথরাইজড অফিসারের দায়িত্ব পালন করছেন মাত্র ৫ জন। এ জোনগুলো মাঠপর্যায়ে পরিচালনের জন্য আগে প্রেষণে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাই অথরাইজড অফিসারের দায়িত্ব পালন করতেন। তবে ২০১৭ সালের সংস্থার তিনজন সহকারী অথরাইজড অফিসারকে পূর্ণ অথরাইজড অফিসার (চলতি দায়িত্ব) করে কাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। অথরাইজড অফিসারদের বিরুদ্ধে রয়েছে শত শত অভিযোগ। এছাড়া রাজউকের দুর্নীতি দমনে কাজ করছে দুদকের বিশেষ টিম। কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে দুদক। কিন্তু এতেও কমেনি রাজউকের অনিয়ম-দুর্নীতি বরং পূর্বের থেকে কয়েকগুণ ঘুষ বেড়েছে। রাজউকের দুর্নীতি নিয়ে দুই বছর আগে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি)। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, নামজারি প্লট প্রতি নির্ধারিত ফির চেয়ে ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকা, হেবা ফ্ল্যাট প্রতি ৫০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা, বিক্রয় অনুমোদন ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা ঘুষ আদান-প্রদান করা হয়। বিল উত্তোলনে ফি না থাকলেও কার্যাদেশ মূল্যের দুই শতাংশ ঘুষ দিতে হয়। এ ছাড়া নিয়োগে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারসহ ব্যাপক ঘুষ আদায় করা হয়। টিআইবি প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যক্তি পর্যায়ে রাস্তা প্রশস্ত দেখাতে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা, ছাড়পত্র অনুমোদনে ১৫ থেকে ৮০ হাজার টাকা ও রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার পর্যায়ে ১ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত রাজউক কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতে হয়। এ ছাড়া প্লট বরাদ্দ, প্লট হস্তান্তর, ফ্ল্যাটের চাবি হস্তান্তরসহ একাধিক সেবায় ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না। নথি রক্ষকের কাছ থেকে মালিক নিজে বা দালাল কর্তৃক প্লটের ফাইল দেখানোর ক্ষেত্রে কোনো ফি না থাকলেও পাঁচ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা, প্রকল্পের আবাসিক ফ্ল্যাটের চাবি হস্তান্তরে ফি না থাকলেও দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয় সেবাগ্রহীতাকে। লিজ দলিলে ৩১ হাজার থেকে ৬০ হাজার পর্যন্ত নির্ধারিত ফি থাকলেও ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়। আবার যারা বিদেশে থাকেন তাদের বেশি হয়রানি শিকার হতে হচ্ছে। টাকা না দিলে এক ফাইল বারবার ফেরত পাঠানো হয় পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন দূতাবাসে। এদিকে সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, টিআইবির ওই জরিপ থেকে বর্তমানে ঘুষের হার অনেক বেশি নেওয়া হচ্ছে।
রাজধানীর বনানী এলাকার মহিউদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন, কিছুদিন আগে তার নিকট আত্মীয়ের একটি ফ্ল্যাটের নামজারি করার জন্য যান। সেখানে রাজউকের তত্ত্বাবায়ক (এস্টেট ও ভূমি) কর্মকর্তা সৈয়দ রফিকুল ইসলাম কাজ করার জন্য খরচ নিলেও তাকে বার বা ঘুরাচ্ছেন। রাজউকের এই কর্মচারী বেশিরভাগ সময় অফিসে থাকেন না। গতকাল বুধবারও দুইটার পরে অফিসে ছিলেন না। এস্টেট ও ভূমি কর্মকর্তাকে ছুটির আবেদন দিয়ে চলে গেছেন বলে জানা গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।