পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
মূলত আজ থেকেই শুরু হচ্ছে ঈদুল ফিতরের ছুটি। ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভীড় এখন প্রতিটি বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, লঞ্চঘাট ও মহাসড়কে। আর সর্বত্রই অবর্ননীয় বিড়ম্বনা ও দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। ট্রেনের আগাম টিকে বিক্রি হলেও প্রথম দিনেই কিছু ট্রেন সময় ঠিক রাখতে পারেনি, শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। বিশেষত ঢাকা থেকে সারাদেশে ঘরমুখো লাখ লাখ মানুষকে বেশী বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। শহরের ভেতরে অস্বাভাবিক দীর্ঘ যানজট, রাস্তায় পানিবদ্ধতা, খানাখন্দ এবং গণপরিবহন, টেক্সিক্যাব ও সিএনজি চালকদের স্বেচ্ছাচারিতায় জিম্মি ঘরমুখো মানুষ। মহাসড়কে নানা ধরনের ঝুঁকি ও সংকটের মুখোমুখি হওয়ার আগে ঢাকা শহর থেকে বেরোতেই ঘন্টার পর ঘন্টা পার হয়ে যাচ্ছে। ঢাকা থেকে সপরিবার ঈদের ছুটি কাটাতে গ্রামে রওয়ানা হয়ে মহাসড়কে ও ফেরিঘাটের যানজটে পড়ে ঈদের দিন পর্যন্ত রাস্তায় আটকে থাকার তীক্ত অভিজ্ঞাতাও অনেকের আছে। ঈদে ঘরমুখো মানুষের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও সংস্থাগুলোর কর্তারা বরাবরই নানা ধরনের আশ্বাস ও প্রতিশ্রæতি দিয়ে থাকেন। এবারো তার ব্যতিক্রম নেই। তবে এবার ঈদের আগে রাস্তা সংষ্কার ও খানাখন্দ মেরামতে আগের মত তেমন তোড়জোড় দেখা যায়নি। ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশপথ থেকে শুরু করে রাজপথ-গলিপথের হতশ্রী অবস্থা জাতীয় মহাসড়ক পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।
গতকাল প্রকাশিত এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, এই ঈদের ছুটিতে ঢাকা, নারায়নগঞ্জ ও গাজীপুর থেকে ঘরমুখো মানুষের সংখ্যা হবে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ। এদের শতকরা ৫৫ভাগই সড়কপথে নিজ জেলায় যাতায়াত করবে। অবশিষ্ট ৪৫ ভাগ যাত্রীর ২৫ ভাগ নৌপথ, ২০ ভাগ রেলপথকে অবলম্বন করবে। ঈদের ছুটিতে একসঙ্গে কোটি মানুষের নগর ছাড়ার বাস্তবতা আমাদের জন্য সাধারণ অভিজ্ঞতা । একসাথে এত মানুষের যাতায়াত নির্বিঘœ রাখার জনতুষ্টিমূলক প্রতিশ্রæতি যেমন শোনা যায়, একইভাবে সাধারণ মানুষও সরকারের অবকাঠামো উন্নয়ন ও যাতায়াত ব্যবস্থার শৃঙ্খলা ও স্বাচ্ছন্দ সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে পারে। প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে দেশের অধিকাংশ মহাসড়কই ভাঙা ও কুঁকিপূর্ণ। শতকরা প্রায় সাড়ে ২০ ভাগ জাতীয় মহাড়কের অবস্থা এখন অত্যন্ত খারাপ। আঞ্চলিক মহাসড়কগুলোর শতকরা প্রায় ৩১ ভাগ অত্যন্ত খারাপ। এর মানে হচ্ছে সড়ক-মহাসড়কের বেশীরভাগ অংশই নির্বিঘœ ও স্বাচ্ছন্দে চলাচলের উপযুক্ত নয়। এ কারণে বুধবার দেশের প্রায় সব মহাসড়কে ঘরমুখো যাত্রিদের দীর্ঘ যানজটে আটকে থাকতে দেখা গেছে। মহাসড়কের ভাঙ্গাচুরা ও কুঁকিপূর্ণ অবস্থা উত্তরণে শটকাট ব্যবস্থা কর্তৃপক্ষের হাতে আপাতত নেই। তবে অদক্ষ চালকদের বেপরোয়া গাড়ী চালনা, ট্রাফিক আইন অমান্য করে রাস্তায় যানজট সৃষ্টি করা, পুলিশ ও স্থানীয় চাঁদাবাজির দুর্ভোগ কমিয়ে আনা অসম্ভব নয়।
কর্মজীবনের ব্যস্ততা ছেড়ে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার ছুটিতে কোটি মানুষের ঘরে ফেরার এই প্রতিযোগিতা আমাদের নাগরিক জীবনের অন্যতম সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। ঈদের ধর্মীয় ও সামাজিক গুরুত্বের দিক ছাড়াও দুই ঈদকে ঘিরে দেশের অর্থনীতিতে বৈদেশিক রেমিটেন্স প্রবাহ কয়েকগুন বেড়ে যেতে দেখা যায়। হাজার হাজার কোটি টাকার ঈদ কেনাকাটা জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবেও বিবেচ্য। পশ্চিমা বিশ্বে ক্রীসমাস, চীনা নিউ ইয়ার এবং ভারতের কোন কোন রাজ্যে দূর্গাপূজা ও হোলি উৎসবকে ঘিরেও একসাথে লাখ লাখ মানুষের বাড়তি যাতায়াতের চাপ লক্ষ্য করা যায়। অতিরিক্ত যানবাহনের কারণে সেখানেও যানজট দেখা গেলেও মহাসড়কের এমন ভগ্নদশা ও ঝুঁকিপূর্ণ চলাচল কোথাও এতটা প্রকট নয়। বছরের পর বছর ধরে সড়ক মহ্সড়ক, রেলপথ ও নৌপথ চলছে জোড়াতালি দিয়ে। ঢাকার বাসা থেকে বেরিয়ে বাস, ট্রেন বা লঞ্চঘাটে বা মহাসড়কে পৌছতে ১০-১৫ মিনিটের রাস্তা কয়েক ঘন্টা লেগে যাচ্ছে, তিন-চারঘন্টার মহাসড়ক পার হতে ১০-১২ ঘন্টা এবং যত্রতত্র অপ্রত্যাশিত বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। কোটি মানুষের এই দুর্ভোগ নিরসনে কোন কার্যকর স্থায়ী উদ্যোগ দেখা যাচ্ছেনা। এবার বর্ষা শুরুর আগেই অতিবৃষ্টি, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও পানিবদ্ধতার কারণে ঈদ যাত্রায় বাড়তি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ঘরমুখো মানুষকে। রাস্তার ফুটপাথ, স্যুয়ারেজ লাইন, গণপরিবহন, রেলপথ, নৌপথ ইত্যাদি কোথাও জবাবদিহিতার ব্যবস্থা নেই। একদিকে চলাচলের অনুপযোগি রাস্তা, ফিটনেসবিহিন গাড়ি-লঞ্চ ও অদক্ষ চালকদের দৌরাত্ম্য সর্বত্র অন্যদিকে ঈদে ঘরমুখো মানুষকে জিম্মি করে আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। এসব দেখার যেন কেউ নেই। ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘœ রাখতে দেশবাসি সর্বোচ্চ কার্যকর উদ্যোগ দেখতে চায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।