Inqilab Logo

রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

যুবলীগ নেতা হত্যাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত পাহাড়

| প্রকাশের সময় : ৩ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সৈয়দ মাহাবুব আহমেদ,রাঙামাটি  থেকে : মোটর সাইকেল চালক হত্যার ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারো এক বাঙ্গালী মোটর সাইকেল চালক নয়নের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় উত্তপ্ত হয়েছে উঠেছে পাহাড়ের পরিস্থিতি। রাঙামাটির লংগদু উপজেলাধীন বাইট্টা পাড়া এলাকার বাসিন্দা ও ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়নকে ভাড়ায় নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাঙামাটি শহরসহ লংগদু উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে করেছে যুবলীগ, বাঙ্গালী ছাত্রপরিষদসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা। অপরদিকে, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে লংগদু উপজেলায় পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং বাড়ি ঘরে হামলা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গতকাল শুক্রবার বেলা এগারটার পর হতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলা সদরে জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। স্থানীয়রা জানান, লংগদুতে আতঙ্কে বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন অনেক লোকজন। স্থানীয় যুবলীগ নেতা মো. নুরুল ইসলাম নয়নের মৃত্যুর ঘটনার জেরে লংগদুতে হঠাৎ সা¤প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে, নয়নের হত্যাকারী আঞ্চলিক দলীয় সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবিতে বেলা এগারোটার সময় শহরের আলিফ মার্কেট চত্ত¡র থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ মিছিলটি শহরে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে আলিফ মার্কেট চত্ত¡রে সমাবেশে মিলিত হয়। জেলা যুবলীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: শামসুল আলম, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নুর মোহাম্মদ কাজল, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল জব্বার সুজন প্রমুখ।  
এদিকে একই দাবিতে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের নেতাকর্মীরা। বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের নেতাকর্মীরা। সংগঠনের জেলা সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম ও ছাত্রনেতা তুহিনের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিলটি পৌর চত্বর থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে বনরূপাস্থ পেট্টোল পাম্প চত্বরে সমাবেশে মিলিত হয়। সমাবেশ থেকে আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে নয়নের হত্যাকারি সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের আল্টিমেটাম দেন নেতৃবৃন্দ।
শুক্রবার মোটর সাইকেল চালক নুরুল ইসলাম নয়নের লাশ খাগড়াছড়িতে উদ্ধার পরবর্তী শুক্রবার নিজ এলাকা লংগদুতে নিয়ে আসলে সেখানে তাকে এক নজর দেখতে আসা কয়েক হাজার জনতা নিহতের লাশ নিয়ে উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। সমাবেশে নিহত নয়নের খুনিদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান বক্তারা। এসময় প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দিয়েছেন লংগদু জোনের কমান্ডার লে. কর্নেল আব্দুল আলীম চৌধুরী, রাঙামাটি জেলা পরিষদের সদস্য ও লংগদু আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জানে আলম, লংগদু উপজেলা চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান নাসির উদ্দীন, লংগদু থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোমিনুল ইসলাম, সমঅধিকার নেতা অ্যাডভোকেট আবছার আলী, যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের রাঙামাটি জেলা সভাপতি আলমগীর হোসেনসহ প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করার জন্যে পাহাড়ে আঞ্চলিক দলগুলো ধারাবাহিকভাবে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। কয়েকমাস আগে মোটর সাইকেল চালক শান্তকে হত্যার পর কিছুদিনের মধ্যেই আমার হত্যা করা হয় নিরীহ মোটর সাইকেল চালক ছাদিকুল ইসলামকে। এই ঘটনার পরবর্তী পাহাড়ের বাতাসে ছাদিকুলের লাশের গন্ধ শুকানোর আগেই লংগদু’র সদালাপী সর্বজন পরিচিত মোটর সাইকেল চালক নুরুল ইসলাম নয়নকে সেই একই কায়দায় ভাড়ায় নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে লাশ ফেলে রেখে মোটর সাইকেলটি নিয়ে যায় পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা। সমাবেশে প্রশাসনের ব্যক্তিবর্গ উত্তেজিত জনতাকে শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়ে উক্ত ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার প্রতিশ্রæতি প্রদান করেন। সর্বশেষ পাওয়া খবর পর্যন্ত বেলা তিনটা নাগাদ লংগদু উপজেলার সার্বিক পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্কের পাশাপাশি উত্তেজন বিরাজ করছে।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে দশটার সময় দুইজন পাহাড়ি যুবককে ভাড়ায় লংগদু থেকে নিজের মোটরসাইকেল নিয়ে খাগড়াছড়ির দীঘিনালার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় চালক নুরুল ইসলাম নয়ন। এরই মধ্যে নয়নকে হত্যা করে তার লাশ ফেলে রেখে মোটর সাইকেলটি নিয়ে পালিয়ে যায় যাত্রীবেশি উক্ত দুই পাহাড়ি যুবক। দুপুরের দিকে নয়নের লাশ উদ্ধার করে নিরাপত্তা বাহিনী। এরপর নিহতের লাশ শুক্রবার রাঙামাটির লংগদুতে নিয়ে আসলে হাজারো জনতা তাকে একনজর দেখতে ভিড় উপস্থিত হয়ে পরে লাশ কাধে নিয়ে তারা বিক্ষোভ মিছিল করে। এনিয়ে গত কয়েক মাসের ব্যবধানে পাহাড়ে তিনজন মোটর সাইকেল চালককে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হত্যা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ