Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বৌদ্ধ ধর্মকে সমর্থন দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ধর্মমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ

মায়ানমারে বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী উগ্র কার্যক্রম জোরদার হচ্ছে

| প্রকাশের সময় : ২১ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : মায়ানমারে বৌদ্ধ উগ্র জাতীয়তাবাদী তৎপরতা ছড়িয়ে দেয়ার কার্যক্রম বেশ জোরদার হচ্ছে। এসব উগ্রবাদীরা দেশটির ধর্মমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে খবরে বলা হয়েছে। সংবাদ মাধ্যম জানায়, উগ্র জাতীয়তাবাদীরা দাবি করেছে, সরকার বৌদ্ধ ধর্মকে সমর্থন দিতে ব্যর্থ হওয়ায় তারা ধর্মমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্রোধ প্রকাশ করার জন্য গত শুক্রবার দেশের রাজধানী নাইপেদো যাত্রা শুরু করেছে। বিক্ষোভের সংগঠকরা বলছেন, মান্দালয়, রেঙ্গুন ও ইরাবতী জেলা থেকে সন্ন্যাসী ও জাতীয়তাবাদীসহ ৩০ হাজার লোক ধর্ম ও সংস্কৃতিমন্ত্রী উ আঙ কো’র বিরুদ্ধে ওত্তারা থিরি টাউনশিপের শ নাথা মাঠে আয়োজিত সমাবেশে যোগ দেবে। নাইপেদো’র প্রশাসন অফিস জানিয়েছে, সংগঠকরা ১৫ হাজার পর্যন্তলোকের অনুমতি চেয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ মাত্র ৩০০ জনের অনুমতি দিয়েছে। মান্দালয়ের ন্যাশনালিস্ট বুড্ডিস্ট মনকস অরগানাইজেশনের অন্যতম নেতা উ আইন ডাও বার থা বলেন, দেশে বৌদ্ধ হলো প্রধান ধর্ম। এ কারণে ধর্ম মন্ত্রণালয়কে অবশ্যই সাসান [বৌদ্ধ মিশন] সুরক্ষিত, সমর্থন ও উৎসাহিত করতে হবে। সংবিধানে এটা সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি বলেন, কিন্তু উ আঙ কো তা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি বারবার বৌদ্ধ ধর্মকে যন্ত্রণা দিয়েছেন। এ কারণেই ওই মন্ত্রীকে অপছন্দ করার বিষয়টি আমরা প্রকাশ করতে যাচ্ছি। এই সন্ন্যাসী ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) সরকারের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে দেয়া গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী আঙ সান সু চির বক্তৃতারও উদ্ধৃতি দেন। তিনি বলেছিলেন, নেতৃত্বের ব্যাপারে জনগণ অসন্তুষ্ট হলে দল পদত্যাগ করতে প্রস্তুত থাকবে। উ আইন ডাও বার থা বলেন, মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আমাদের আপত্তি দেখার পর আমরা বিশ্বাস করি সরকার তার প্রতিশ্রæতি রক্ষা করবে। ওত্তারা এলাকার কর্মকর্তা উ আইয়ে থাঙ বলেন, বিক্ষোভ সমাবেশে উপস্থিতির সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়ে গেলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ আয়োজকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে। অনুমোদিত সংখ্যা ছাড়িয়ে গেলে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ আইনের বলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। গত সপ্তাহে সাত জাতীয়তাদী ও বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর এই বিক্ষোভের আয়োজন করা হয় হয়। রেঙ্গুনের মিনগালার তাঙ নিয়ান্তটাউনশিপে বৌদ্ধ ও মুসলিমদের মধ্যে সা¤প্রতিক সঙ্ঘাতে জড়িত থাকার দায়ে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় উস্কানি দেয়ার অভিযোগ আনা হয়। বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের নেতৃত্বাধীন মুসলিমবিরোধী গ্রæপগুলো মায়ানমারের সবচেয়ে জনবহুল এবং জাতিগতভাবে বৈচিত্র্যমÐিত নগরীতে সা¤প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে দেয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে। গত কয়েক মাস ধরে উগ্রপন্থী দাঙ্গাবাজেরা ইয়াঙ্গুনের বিভিন্ন টাউনশিপে গিয়ে ইসলামের অনুসারীদের ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করছে, রোহিঙ্গা মুসলিমদের (সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ দেশটিতে তাদেরকে অবৈধ অভিবাসী মুসলিম গণ্য করা হয়ে থাকে) খোঁজ করছে। কট্টরপন্থী সন্ন্যাসী এবং তাদের অনুসারীরা গত ২৮ এপ্রিল বিক্ষোভ প্রদর্শনের পাশাপাশি ধর্মীয় অনুষ্ঠান বন্ধ করার লক্ষ্যে দুটি মাদরাসা বন্ধ করে দেয়। তারা মনে করছে, মুসলিমরা মাদরাসা দুটিকে মসজিদ হিসেবে ব্যবহার করে। গত বুধবার সকালে প্রায় ৩০ জন বৌদ্ধ ইয়াঙ্গুনের একটি মুসলিমবহুল এলাকায় রোহিঙ্গাদের খোঁজ করে। এ নিয়ে একপর্যায়ে জাতীয়বাদী, স্থানীয় এবং কর্তৃপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য পুলিশকে গুলিবর্ষণ করতে হয়। ইয়াঙ্গুনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্যাট্রিয়টিক মনকস ইউনিয়নের (পিএমইউ, উভয় ঘটনার জন্য এই গ্রæপটিই দায়ী) সিনিয়র নেতা অনীহ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে মায়ানমারের বর্ণ ও ধর্ম রক্ষার সংকল্প ব্যক্ত করেন। পরে রয়টার্সের খবরে বলা হয়, পিএমইউ’র দুই চরমপন্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া কয়েকজনের বিরুদ্ধে পুলিশ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। ৫০ লাখের বেশি জনসংখ্যার (মুসলিমরা এখানে বেশ ভালো সংখ্যায় রয়েছে) এই নগরীতে স¤প্রতি সংঘটিত ঘটনাবলী এবং জাতীয়বাদীদের অবাধে প্রবেশ জাতিগত-ধর্মীয় উত্তেজনাপ্রবণ দেশটিতে গভীর উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাষ্ট্রীয়-নেতৃত্বাধীন কয়েক দশকের জাতীয়তাবাদের লক্ষ্য ছিল বৌদ্ধবাদী বামার জাতিগত গ্রæপকে প্রাধান্য দেয়া। দেশটির মোট জনসংখ্যার ৬৮ ভাগ তারাই। ওই পৃষ্ঠপোষকতায় মায়ানমারের বেসামরিক জনসাধারণের ওপর বিপুল প্রভাব থাকা সন্ন্যাসবৃত্তির ব্যাপকভাবে জোরদার হয়। ২০১১ সালের পর থেকে ৯৬৯ মুভমেন্টের (বৌদ্ধ পুরোহিত অশ্বিন বিরাথুর নেতৃত্বাধীন গ্রæপ। তাকে বিদেশী মিডিয়ায় বৌদ্ধ বিন লাদেন হিসেবে অভিহিত করা হয়) মতো সংগঠনগুলো বিপুল অনুসারী লাভ করে। সেন্সরশিপ শিথিলমূলক সংস্কারের ফলে অনলাইন প্লাটফর্মের সুযোগ নিয়ে তারা জ্বালাময়ী বক্তৃতা করে জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সফল হয়। তাদের বিদ্বেষমূলক প্রচারের প্রধান লক্ষ্য মুসলিমরা (তারা মোট জনসংখ্যার মাত্র ৪ ভাগ), বিশেষ করে রোহিঙ্গারা। জাতিসঙ্ঘ এই রোহিঙ্গাদের বিবেচনা করে বিশ্বের অন্যতম নির্যাতিত সংখ্যালঘু। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে ২০১২ সালে ভয়াবহ সা¤প্রদায়িক মুসলিম-বৌদ্ধ সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়। এরপর অক্টোবরে কথিত রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী হামলায় কয়েকজন সীমান্তরক্ষী নিহত হওয়ার পর সামরিক বাহিনী সহিংস দমন অভিযান শুরু করে। ইয়াঙ্গুনের সা¤প্রতিক ঘটনাগুলোর সাথে নগরীর পিএমইউ’র সিনিয়র নেতাদের আদালতে হাজিরা দেওয়ার সাথে সম্পর্কিত। ওই দুদিনই তারা উস্কানি দেওয়ার অভিযোগের সম্মুখীন হয়েছেন বলে স্থানীয় ম্যাগাজিন ফ্রন্টিয়ার মায়ানমার জানিয়েছে। ম্যাগাজিনটি আরো জানিয়েছে, বুধবারের হামলা জন্য লোকজনকে সঙ্ঘবদ্ধ করা এবং গুজব ছড়াানোর জন্য চরমপন্থী সামাজিক মিডিয়া একাউন্টগুলো ব্যবহার করা হয়েছে। অবিশ্বাস, জাতীয়তাবাদী ভাবাবেগ এবং ইয়াঙ্গুনের আবদ্ধ নগর পরিবেশে অনলাইনে ভিত্তিহীন গুজব ছড়িয়ে দিয়ে সা¤প্রদায়িক সহিংসতায় ইন্ধন দেওয়ার ফলে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে কর্তৃপক্ষের জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা যদিও আঙ সান সু কি সরকার যে জাতিগত উত্তেজনা (নোবেলজয়ী এই নেত্রীকে এজন্য ব্যাপক সমালোচনার শিকার হতে হচ্ছ) প্রশমনের চেষ্টার প্রমাণ, কিন্তু ক্রমবর্ধমান বিস্ফোরক পরিবেশও তার সীমাবদ্ধতা তুলে ধরছে। ২০১৫ সালের নির্বাচনে বিপুল জয়ী হওয়া তার ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি পার্টি জাতীয়তাবাদীদের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যানের ঝুঁকিতেও পড়তে পারে। বুধবারের ঘটনার পর মায়ানমারে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেরেক মিচেল ভয়েজ অব বার্মিজ সার্ভিসকে বলেন, ব্যাপকভাবে বৌদ্ধপ্রধান দেশটিতে সন্ন্যাসীদের সাথে কাজ করাটা খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। ইয়াঙ্গুনের আঞ্চলিক পুলিশ নিরাপত্তা কমান্ডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মিয়া উইন নগর এলাকায় রাজপথে গণবিচার করার জাতীয়তাবাদী হুমকির ব্যাপারে রয়টার্সকে বলেন, পুলিশ অত্যন্তসতর্ক রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা মুসলিম এলাকাগুলো টহল দিচ্ছি। প্রার্থনার স্থানগুলোর আশপাশে নিরাপত্তামূলকব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ইয়াঙ্গুনে পক্ষকালের মধ্যে একটি প্রধান চরমপন্থী গ্রæপের জাতীয় সমাবেশ হতে যাচ্ছে। এতে ১০ হাজার সন্ন্যাসী অংশ নেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অনেকে বেশ নার্ভাসভাবে বিষয়টি লক্ষ করছে। সাউথ এশিয়ান মনিটর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মায়ানমার

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ