Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অবশেষে প্রতিশ্রুতি পূরণের চেষ্টা করছেন সু চি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩১ জানুয়ারি, ২০১৯, ৭:৩১ পিএম

মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডিমোক্র্যাসি (এনএলডি) দেশটির সামরিক বাহিনী প্রণীত সংবিধান সংশোধনে কাজ করতে একটি যৌথ পার্লামেন্টারি কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শুরু করেছে। জনসাধারণের মধ্যে হতাশা এবং দলের মূল সমর্থকগোষ্ঠীর মধ্যে আস্থাহীনতা অনুভব করে এনএলডির সিনিয়র নেতৃত্ব পার্লামেন্টে প্রস্তাব দাখিল করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে কয়েক মাস তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করেছেন। এ পদক্ষেপ গ্রহণের সাথে সংবিধানিক আইন বিশেষজ্ঞ ও এনএলডির সদস্য প্রখ্যাত আইনবিদ উ কো নির হত্যাকাণ্ডের দ্বিতীয় বার্ষিকীর সাথে মিলে গেছে।
অনুমান অনুযায়ীই পার্লামেন্টে সামরিক বাহিনীর প্রতিনিধিরা প্রস্তাবটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। তারা জোর দিয়ে বলেন, সংবিধান সংশোধনের যেকোনো সংশোধনীর জন্য অন্তত ২০ জন আইনপ্রণেতার সই লাগে। এসব আপত্তি সত্ত্বেও পার্লামেন্ট কমিটি গঠনের পক্ষে ভোট দেয়। মোট ৩৯৭ জন আইনপ্রণেতা উদ্যোগটির পক্ষে ভোট দেয় এবং বিরুদ্ধে দেয় ১৭ জন। তিনজন বিরত থাকেন এবং ১৮৭ জন ভোট বয়কট করেন। এদের মধ্যে সামরিক বাহিনীর সব সদস্য ও আরো ২১ জন ছিলেন।
প্রস্তাবটি উত্থাপনকারী এনএলডি আইনপ্রণেতা উ আঙ কি নিয়ান্ত বলেন, সংবিধান সংস্কারের যৌথ কমিটির সদস্যপদ সব দলের আইনপ্রণেতাদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তিনি বলেন, সংবিধান সংশোধনের জন্য খসড়া আইন প্রণয়নের প্রস্তাব আমি উত্থাপন করছি না। আমি কেবল সংবিধান সংস্কার প্রশ্নে যৌথ কমিটি গঠনের প্রস্তাব করছি। এই কমিটি নিয়মতান্ত্রিক ও দ্রুততার সাথে খসড়া আইন প্রণয়ন করবে।
তদানিন্তন প্রেসিডেন্ট উ থিন সিনের আমলের সরকারের আমলে আইনপ্রণেতারা আঞ্চলিক আইন পরিষদের মাধ্যমে সংবিধানের সামান্য সংশোধন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এনএলডি ২০১৫ সালে তাদের গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি হিসেবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও শান্তি অর্জনের পাশাপাশি ২০০৮ সালের সংবিধান সংশোধনের কথা বলেছিল। তবে এখন পর্যন্ত এনএলডি এসব প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারেনি। অনেকেই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, সামরিক বাহিনী যতক্ষণ পর্যন্ত বর্তমান পর্যায়ের নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষমতা ধরে রাখবে, ততক্ষণ পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন সম্ভব হবে না।
সংবিধান অনুযায়ী, ইউনিয়ন ও আঞ্চলিক- উভয় পর্যায়ে ২৫ ভাগ পার্লামেন্টারি আসন সামরিক বাহিনীর জন্য সংরক্ষিত। এছাড়া প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র ও সীমান্তবিষয়ক মন্ত্রণালয়গুলো এবং একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট নিয়োগের ক্ষমতাও তাদের রয়েছে।
ক্ষমতায় আসার পর থেকে এনএলডি সরকার বেশ কিছু মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের চলমান সঙ্কট ও এর ফলে সৃষ্ট আন্তর্জাতিক নিন্দা, শান্তি আলোচনায় বড় ধরনের অগ্রগতি হাসিলে ব্যর্থতা, অর্থনৈতিক স্থবিরতা। বিদেশী বিনিয়োগের মন্দা কাটাতে সম্প্রতি স্টেট কাউন্সিলর নেপিডোতে একটি বিনিয়োগ ফোরামে যোগদান করেন। সরকার মনে করছে, শান্তিকে অগ্রাধিকার প্রদানের মাধ্যমে জাতিগতভাবে বিভক্ত জাতির মধ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হাসিল করা সম্ভব।
নগরীগুলোতে এনএলডির প্রতি হতাশা দেখা গেলেও গ্রাম এলাকায় তাদের সমর্থন অটুট রয়েছে। তাছাড়া জনসাধারণের কাছে বিকল্পও আছে খুব কম। বিশেষ করে সাবেক ক্ষমতাসীন ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির মধ্যে জনসমর্থন রয়েছে খুবই কম। নভেম্বরের উপনির্বাচনের ফলাফলে এনএলডি নেতারা হুঁশিয়ার হয়ে যায়। এতে ১৩টি আসনের মধ্যে তারা মাত্র সাতটিতে জয়ী হয়। প্রত্যাশার অনেক কম সাফল্য তারা লাভ করে। তবে এনএলডির সিনিয়র নেতারা বলেন, তারা এখন সংবিধান সংশোধনসহ নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দিকে মনোযোগী হচ্ছে।
সম্প্রতি জেনারেল অ্যাডমিনেস্ট্রেশন ডিপার্টমেন্ট (জিএডি)-এর নিয়ন্ত্রণ সামরিক নিয়ন্ত্রিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কেন্দ্রীয় সরকারি অফিসে স্থানান্তরিত হয়েছে। গুঞ্জন রয়েছে, বর্তমানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে থাকা পুলিশ বাহিনীও কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে চলে যাবে। এসব পরিবর্তন উৎসাহজনক। তবে নেপিডোর খেলা অনেকাংশেই অদৃশ্যভাবে হয়ে থাকে। ফলে অনেক কিছুই এখনো পরিষ্কার নয়।
এনএলডি চায় সংবিধানের ১৬০টির বেশি ধারায় সংশোধনী আনতে। এর মধ্যে জাতীয় রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর স্পর্শকাতর ভূমিকাও পরিবর্তন করতে চায়। এছাড়া বিদেশী স্বামী বা স্ত্রী বা সন্তান থাকা লোকদের প্রেসিডেন্ট হতে যে বাধা রয়েছে, তাতেও পরিবর্তন চায়। এই প্রতিবন্ধকতার কারণেই সু চির পক্ষে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট হওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
সংবিধান সংস্কারের প্রধান লক্ষ্য হলো মিয়ানমারকে বিকেন্দ্রীকরণ করা। তবে তা খুব সাবলীলভাবে হবে না। আর এই উদ্যোগ যে সফল হবে, তাতেও নিশ্চয়তা নেই। তবে এনএলডি মনে করে, উদ্যোগ গ্রহণের এটিই ভালো সময়। একটি বিষয় নিশ্চিত। তা হলো আগামী দিনগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটতে যাচ্ছে। সূত্র: সাউথ এশিয়ান মনিটর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মায়ানমার

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ