Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুর্গন্ধে বালু তীরের বাসিন্দাদের সীমাহীন দুর্ভোগ

নৌ-পথে কমছে যাত্রী, বেকার হচ্ছে শত শত শ্রমিক

| প্রকাশের সময় : ২৭ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা : বৈশাখের শুরু থেকে বৃষ্টি শুরু হলেও রাজধানীর ময়লা- আবর্জনা বালু নদী গড়িয়ে শীতলক্ষ্যায় প্রবেশ করায় উভয় নদী পাড়ের বাসিন্দাদের জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। তবে নদীর প্রশস্ততার আকার ছোট থাকায় বালু নদীর পানি ব্যাপকভাবে দূষণের কবলে পড়ে। ফলে পচা দুর্গন্ধযুক্ত পানির কারণে এ নদী পাড়ের মানুষ যেমন অতিষ্ঠ তেমনি এ নদী পথে খুব প্রয়োজন না পড়লে কেউ নৌকার যাত্রীও হচ্ছেন না। ফলে দিনদিন বেকার হয়ে পড়ছেন এ নদীকেন্দ্রীক মাঝি, নৌকা ও ট্রলার মালিকরা। তবে বালুবাহী কার্গো ও ছোট নৌকার দখলে রয়েছে এ ছোট্ট নদীটি। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, রূপগঞ্জের ব্যস্ততম ইছাপুরা বাজার এলাকায় বিআইডবিøউটিএ এখানকার নৌযাত্রীদের সুবিধায় একটি ঘাটলা ও টার্মিনাল করে রেখেছে। অতি ব্যস্ততম এ বাজার থেকে প্রতি সোমবার ও শুক্রবার ঢাকার কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়িসহ বিভিন্ন অঞ্চলের আড়ৎদার ও ব্যবসায়ীরা পাইকারী কাঁচাবাজার ও মাছ নিয়ে যেত নৌপথে। এ পথে রূপগঞ্জের জনসাধারণ ও ঢাকার রামপুরা, খিলক্ষেত, গুলশান, বাড্ডাসহ বিভিন্ন এলাকার লোকজন ট্রলার নৌকায় যাতায়াত করতো নিয়মিত। ফলে নদীকেন্দ্রীক শতশত যাত্রীবাহী নৌযান তৈরি করা হয়েছে। এসব নৌযান তৈরি করে পরিবহনের মাধ্যমে বালু নদীর উভয় পাড়ের হাজারো পরিবার তাদের জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। সম্প্রতি এ নদী পথে যাত্রী সংখ্যা ক্রমেই কমে আসাতে বিপাকে পড়েছেন এসব নৌযান শ্রমিক ও মালিকপক্ষ। কেউ কেউ ব্যাংক ও স্থানীয় এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করতে পারছে না। তবে এ নৌ-পথে এখন কেবল মালামাল বহনের প্রয়োজনে কিংবা খচর কমাতেই ব্যবহার করছে। এ পথে নিয়মিত যাত্রী একটি বেসরকারি ব্যাংক কর্মচারী মোক্তার হোসেন বলেন, নদী পাড়ে পচা পানির দুর্গন্ধ সইতে না পেরে এখন তিনি রামপুরায় অফিস করেন দীর্ঘ পথ ঘুরে কুড়িল রোডের যানজটের ধকল বেয়ে। অপর একজন যাত্রী বেরাইদ কলেজে কর্মরত শিক্ষক উত্তম দাস বলেন, বালু নদী দিয়ে ট্রলারযোগে ইছাপুরা থেকে বেরাইদ কলেছে দীর্ঘ ২০ বছর যাবৎ যাতায়াত করতেন। গত ৪ বছর যাবৎ এ পথে যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছেন। কারণ হিসেবে তিনি জানান, বালু নদী দিয়ে ঢাকার পূর্বাঞ্চলীয় ময়লা-আবর্জনা রামপুরার খাল হয়ে গড়িয়ে পড়ে। তাতে শুষ্ক মৌসুমে এ নদীর পাড় দিয়ে নৌ পথে তো দূরের কথা দুর্গন্ধের প্রভাবে ৫ মিনিট দাঁড়ানো যায় না। তাছাড়া নদী পাড়ের লোকজন নদীর পানি ব্যবহার করতে না পেরে তাদের পয়ঃবর্জ্য ও আবর্জনাগুলোও নির্ধিধায় ফেলে পানি দূষণ করছে। এ নদী পথে নিয়মিত ট্রলার নৌকা চালান পাতিরা এলাকার ছালাম মিয়া। তিনি বলেন, গত তিনবছর যাবৎ শুষ্ক মৌসুমে এ নদী পথে কোন যাত্রী পাওয়া যায় না। ফলে এ সময় তিনি দৈনিক মজুরী হারে অস্থায়ী কাজ করে সংসার চালান। যাত্রীরা নৌকায় বেশিক্ষণ থাকতে চান না। ফলে আমাদের এ সময়টাতে অন্যকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। তবে বর্ষাকাল এলে এ অবস্থা আর থাকে না। গোয়ালপাড়া এলাকার বাসিন্দা মাছুম বিল্লাহ বলেন, বালু নদীতে অবাধে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় নর্দমায় পরিণত হয়েছে। ফলে নদী পাড়ের হাট বাজার ব্যবসায়ীরাও নানা রোগ-বালাইয়ের শিকার হচ্ছেন। তিনি জানান, গত ৫ বছর পূর্বেও নদী পারের লোকজন নদীতে নেমে গোসল করতে পারতেন। এখন গোসল নয় বরং নদী পারে দাঁড়াতেই অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিষেধ করেন। তিনি আরো জানান, পচা পানির দুর্গন্ধের প্রভাবে এ নদীতে চলাচলরত ট্রলারগুলো অন্যত্র বিক্রি করে দিচ্ছেন। তবে কেউ কেউ বর্ষার আশায় তা ধরে রেখেছেন বলে জানান তিনি। সূত্র জানায়, শুষ্ক মৌসুম এলেই বালু নদীটি হয়ে পড়ে নর্দমার খাল। তাতে নদীপারের লোকজনের পাশাপাশি দুর্ভোগ পোহায় নদীকেন্দ্রীক শ্রমিক, যাত্রী ও নদীপারের হাটবাজারের লোকজন। বিজ্ঞজনেরা নদী শাসন বিভাগের সুষ্ঠু তদারকির অভাবকে ও নানা অনিয়মকেই দায়ী করছেন। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়া বলেন, নদীর পানি দূষণের জন্য নদীপাড়ের লোকজন ও কলকারখানা মালিকরাই বেশিরভাগ দায়ী। তাদেরকে বারবার নানা কর্মসূচি ও নোটিশের মাধ্যমে সচেতন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বালু নদীর পানি দূষণের জন্য রাজধানীর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাকে তিনি দায়ী করেন। তিনি মনে করেন, রাজধানী ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর সুন্দর পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সরকার বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছেন। সময় সাপেক্ষে এ সমস্যা আর থাকবে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুর্গন্ধ

১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১
১৭ আগস্ট, ২০১৬

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ