পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
তফসিলী ব্যাংকগুলোতে হাজার হাজার কোটি টাকা জমা থাকলেও এ অর্থ বিনিয়োগে কাজে লাগাতে পারছেনা শিল্পোদ্যোক্তারা। অন্যদিকে অর্থবছরের শুরু থেকেই রাজস্ব আদায়ে বেশ বড় ধরনের ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। অর্থবছরের প্রথম সাত মাসেই রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি ছিল লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯ হাজার কোটি টাকার বেশী। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ভল্টে এখন ১ লাখ ১৭ হাজার কোটির বেশী অর্থ অলস পড়ে থাকায় ব্যাংকগুলো নতুন আমানত নেয়াই বন্ধ করে দিয়েছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত অন্য একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিদেশি ঋণের ১ লাখ ৭৬ হাজার কোটি টাকার সুদ পরিশোধ করা হচ্ছে জনগণের রাজস্ব থেকে। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর সক্ষমতার অভাবে বিদেশি ঋণের হাজার হাজার কোটি টাকা অব্যবহৃত থেকে অলস টাকায় পরিণত হচ্ছে। এসব অলস টাকারও সুদ বহন করতে হচ্ছে দেশের জনগণকেই। সাংবাৎসরিক জাতীয় বাজেটে বৈদেশিক ঋণের সুদ অন্যতম বড় খাত হিসেবে জাতির ঘাড়ে চেপে আছে। সরকার দেশকে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত ও শক্তিশালী করে তোলার দাবী করলেও অর্থনৈতিক সূচকের এসব বাস্তবতা শক্তিশালী ও সম্ভাবনাময় অর্থনীতির পরিচয় বহন করে না। অন্যদিকে বৈদেশিক রেমিটেন্স এবং গার্মেন্টস রফতানী খাতেও কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হচ্ছেনা। বৈদেশিক কর্মসংস্থানের বড় বাজারগুলোতে বিদ্যমান নানামুখী জটিলতা ও সংকট দূর হচ্ছেনা।
দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিলেও এসব উদ্যোগ যে তেমন কাজে আসছে না তা চলমান বাস্তবতা থেকেই বোঝা যায়। গত মাসের শেষদিকে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, গত অর্থ বছরে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে তারল্য বেড়েছে ২ হাজার ৩০ কোটি টাকা। দেশে এক ধরনের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও আপাত শান্তি বিরাজ করলেও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ না থাকায় অনেকেই দেশে বিনিয়োগের ঝুঁকি নিতে চাইছেননা বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত মনে হলেও ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা এখনো কাটেনি বলে মনে করেন সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম। এ কারণেই নতুন প্রকল্প গ্রহণ বা ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে চাইছেন না। অন্যদিকে প্রয়োজনীয় গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগ দিতে না পারায় আবাসনখাতসহ বিভিন্ন শিল্পে হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ কোন কাজে আসছেনা। শিল্পবিনিয়োগের জন্য প্রথম চাহিদা হচ্ছে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। সেই সাথে প্রয়োজনীয় জমি বরাদ্দ পাওয়া, গ্যাস-বিদ্যুত, বন্দর ও যোগাযোগ অবকাঠামো খাতের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা। এসবের কোন খাতেই ঘাটতি মোকাবেলা ও অনুকূল পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। এডিবি’র একটি পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশে বেসরকারী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে জ্বালানি অবকাঠামো, ভূমি বরাদ্দ ও মালিকানা সংক্রান্ত জটিলতা এবং শিল্পোদ্যোক্তাদের ব্যক্তি উদ্ভাবনী সক্ষমতার অভাবকে প্রধান বাধা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে বিনিয়োগের সুরক্ষা ও সামগ্রিক নিরাপত্তার প্রশ্নটিই যে কোন বিনিয়োগকারীর জন্য সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত হতে বাধ্য। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বাস্তবতা এ ক্ষেত্রে মোটেও অনুকূল নয়।
দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের জন্য নানাবিধ আইনগত সুযোগ-সুবিধার গ্যারান্টি দিচ্ছে সরকার। তবে দেশে একটি প্রশ্নবিদ্ধ জাতীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত অকার্যকর সংসদ এবং গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশ না থাকার প্রভাব পড়ছে বিনিয়োগ ও অর্থবাণিজ্যের ক্ষেত্রে। দেশের ব্যাংকগুলোতে লক্ষকোটি অলস টাকা জমে উঠার পাশাপাশি ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা বৈদেশিক মূদ্রায় শত শত কোটি ডলার বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে। এভাবে দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা নস্যাৎ হচ্ছে। সামগ্রিক অর্থনীতিতে এক ধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে। এ থেকে উত্তরণে যে ধরনের সামাজিক-রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার তা’ও দেখা যাচ্ছেনা। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও লালফিতার দৌরাত্ম্য কমেনি। ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ ও আমদানী-রফতানী সংক্রান্ত করণীয়সমূহ সবকিছু যথাসম্ভব দ্রæততর সময়ে সম্পন্ন করতে ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালুর দাবী জানালেও দীর্ঘদিনেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। অন্যদিকে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের উত্থান এবং জঙ্গিবাদ দমনের নামে পরিচালিত সরকারী বাহিনীর নানাবিধ উদ্যোগ ও অভিযান জনমনে আস্থা সৃষ্টি করতে যেমন ব্যর্থ হচ্ছে, তেমনি বিদেশি উন্নয়ন সহযোগী এবং বিনিয়োগকারীরাও এসব কর্মকাÐে আস্থা রাখতে পারছেনা। দেশে গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাÐ বেড়ে যাওয়ার ঘটনাও বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক কর্মকাÐে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। দেশে একটি রাজনৈতিক সমঝোতা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি জননিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে বিনিয়োগে চলমান স্থবিরতা দূর হতে পারে। তবে অর্থনৈতিক সূচকের প্রবৃদ্ধিই রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের বিষয় হতে পারেনা। জননিরাপত্তা, সুশাসন এবং সকল মানুষের নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করা হলে বিনিয়োগের জন্য বিদেশিদের কাছে ধরনা দেয়ার প্রয়োজন পড়েনা। বিনিয়োগের পরিবেশ নিশ্চিত হলে ব্যাংকে তারল্য জমা হওয়ার যেমন কোন সুযোগ নেই, তেমনি হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতিরও আশঙ্কা থাকেনা। ব্যাংকে অলস টাকার পাহাড় দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ ও আস্থাহীনতাকেই নির্দেশ করছে। আস্থাপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সরকারকে প্রথমেই জনগণের প্রত্যাশিত রাজনৈতিক সমঝোতা ও সামাজিক-অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।