Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

অলস ৫০০ কোটি টাকা

প্রকাশের সময় : ২১ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইখতিয়ার উদ্দিন সাগর : পোশাক খাতে চলমান সংস্কার ব্যয়ে সহায়তা হিসেবে বিদেশী ঋণের ৫০০ কোটি টাকা অলস পড়ে আছে দুই বছর ধরে। জাইকা ও আইএফসি নামের দুইটি বিদেশী সংস্থা এই ঋণ দিচ্ছে। কিন্তু সংস্থা দু’টির নামমাত্র সুদের হার (০ দশমিক ১) উদ্যোক্তা পর্যায়ে প্রায় ১০ শতাংশে এসে ঠেকছে। এ উচ্চ সুদের হার হওয়ার ব্যাপারে ব্যবসায়ীরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও ব্যাংককে দায়ী করেছে। এ কারণে সংস্কারে অর্থ সংকট সত্ত্বেও এ অর্থে আগ্রহ নেই উদ্যোক্তাদের।
জাপান সরকারের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকার ১০০ কোটি টাকার তহবিল থেকে গত দুই বছরে ঋণ নিয়েছে মাত্র দু’টি কারখানা। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) দেওয়া ৪০০ কোটি টাকা থেকে ঋণ নেয়নি। আর চলমান প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় টিকতে না পেরে গত তিন বছরে ৬১৮ তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়েছে। নতুন করে ৩১৯ কারখানা বন্ধ হওয়ার পথে আছে।
ঋণের হার বেশি হওয়ার বিষয়টি সামনে আসার পর সংস্কার অর্থায়নে সুদের হার ৫ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে সুপারিশ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গঠিত এ সংক্রান্ত কমিটি। সম্প্রতি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কাছে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। সংস্কারে বিদেশীদের সহায়তা তহবিলে বেশি হারের সুদের বিষয়ে বিজিএমইএ সহনীয় হারে নির্ধারণে দীর্ঘদিন থেকে দাবি জানিয়ে আসছিল।
এদিকে সংস্কার অর্থায়ন ঋণে সুদের হার ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার আশ্বাস দেয় অর্থসচিব মাহবুুবুর রহমান। সে সময় সচিবালয়ে বিজিএমইএ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এ আশ্বাস দেন তিনি। বৈঠক শেষে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এ ঋণে অযৌক্তিক সুদের হারের বিষয়টি অর্থ সচিবকে অবহিত করেছেন তারা। প্রায় ১০ শতাংশ হারে সুদের কারণে উদ্যোক্তারা এ ঋণ নিতে আগ্রহী নন।
২০১৩ সালে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর পোশাক খাতে কর্মপরিবেশের নিরাপত্তা-দুর্বলতার বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এর পর সব পোশাক কারখানা ভবনের কাঠামো, অগ্নি ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা মান পরিদর্শন করে ইউরোপের ক্রেতাজোট একর্ড অন ফায়ার এন্ড বিল্ডিং সেফটি, উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের জোট এলায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার সেফটি ও আইএলও সহযোগিতায় সরকারের পক্ষে জাতীয় উদ্যোগ (এনআই)। পরিদর্শনে চিহ্নিত ত্রুটি এখন সংস্কার করা হচ্ছে। প্রতিটি কারখানা সংস্কারে গড়ে ৫ কোটি টাকা নতুন করে বিনিয়োগ প্রয়োজন। ছোট ও মাঝারি আকারের কারখানা মালিকদের পক্ষে কঠিন হওয়ায় অর্থ সংকটে সংস্কার কাজ চালিয়ে যাওয়া দুঃসাধ্য। সংস্কারে ধীরগতির কারণে অসন্তুষ্ট দুই ক্রেতাজোট এরই মধ্যে শতাধিক কারখানার সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়েছে।
উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, বিদেশীদের এ ঋণ সহায়তায় সরকার মুনাফা করতে চায়। এ কারণে শূন্য দশমিক শূন্য এক (০ দশমিক ০১) শতাংশ সুদের ঋণ উদ্যোক্তা পর্যায়ে যেতে ১০ শতাংশে গিয়ে ঠেকছে। অথচ গত কয়েক মাস ধরে স্থানীয় ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে আরও কম সুদে ঋণ পাওয়া যাচ্ছে। ফলে বিদেশীদের ঋণে আর আগ্রহ নেই তাদের। জাইকার ঋণে ১ শতাংশ সুদ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক, ৪ শতাংশ নেয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং ঋণ বিতরণকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নেয় ৫ শতাংশ। এ কারণে শেষ পর্যন্ত ১০ শতাংশ সুদ গুনতে হয় উদ্যোক্তাদের।
অন্যদিকে আইএফসি’র ঋণে অর্থ মন্ত্রণালয় সুদ না নিলেও মাত্র চারটি ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ বিতরণের কারণে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এ চার ব্যাংক নিজস্ব গ্রাহক নয়, এমন উদ্যোক্তাদের সরাসরি ঋণ দেয় না। উদ্যোক্তারা যে ব্যাংকের সঙ্গে সরাসরি লেনদেন করেন, সেসব ব্যাংকের গ্যারান্টি সাপেক্ষেই কেবল ঋণ দেবে। এসব ব্যাংক গ্যারান্টি বাবদ সেবা চার্জ নেবে। ফলে সুদের হার বাড়বে। এসব কারণে জাইকা এবং আইএফসি’র সহনীয় সুদ উদ্যোক্তাদের জন্য শেষ পর্যন্ত আর সহনীয় থাকছে না। এ নিয়ে বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে অব্যাহত দেন-দরবারের পরিপ্রেক্ষিতে সুদহার উদ্যোক্তা পর্যায়ে সহনীয় হারে নির্ধারণে একটি কমিটি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কমিটির এক সদস্য বলেন, কমিটি সুদের হার ৫ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে সুপারিশ করেছে। গত মাসে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত সুদহার কমানো হয়নি।
জানতে চাইলে বিজিএমইএ’র সভাপতি বলেন, পোশাক খাতের সহায়তায় জাইকা ও আইএফসি’র ঋণ উদ্যোক্তাদের হাতে আসা পর্যন্ত প্রায় ১০ শতাংশে দাঁড়ায়। অথচ ব্যাংক থেকে এখন আরও কম সুদে ঋণ মিলছে। এ কারণে সংস্কারে অর্থ সংকট থাকলেও উদ্যোক্তারা এত চড়া সুদে ঋণ নিতে আগ্রহী নন। তিনি বলেন, ব্যাপক সংস্কারের মধ্যে থাকা এ দেশের পোশাক খাতকে যেখানে বিদেশীরা সহায়তা দিচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সুদ নেওয়ার বিষয়টি কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট ও ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদহারের কারণে পোশাকশিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন ও বিশ্ববাজারে পোশাকের দরপতনের কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে শিল্প উদ্যোক্তারা।
                                                                                               



























































































 
                                                                                                                                                           
                                                                                                            
                    

















































 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অলস ৫০০ কোটি টাকা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ