বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুন্ড থেকে : সীতাকুন্ডে সাগর পাড়ে আবারো প্রাকৃতিক গ্যাসের সন্ধান মিলল। এবার উপজেলার বাড়বকুন্ড ইউনিয়নের দক্ষিণ মাহমুদাবাদ উপক‚লীয় এলাকায় একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা টিউবয়েল স্থাপনকালে পানির বদলে গ্যাস নির্গত হতে দেখেন। বর্তমানে টিউবয়েলটি পাম্প করলেই দাউ দাউ আগুন জ্বলছে। যা সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। এদিকে শুধু বাড়বকুন্ড সাগর উপক‚লেই নয়, এ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ও সমভূমিতে দীর্ঘকাল ধরে এভাবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রাকৃতিক গ্যাস নির্গত হয়ে জ্বলে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মূল্যবান এ খনিজটি আহরণে কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না।
জানা যায়, সীতাকুন্ডের বিভিন্ন স্থানে যুগ যুগ ধরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্গত হচ্ছে প্রাকৃতিক গ্যাস। বিশেষত বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের ছোটদারোগারহাট লবনাক্ষ পাহাড়, বাড়বকুন্ড বাড়বানল, কুমিরা (উষ্ণ প্রস্রবন) এলাকার পাহাড়ে সুদীর্ঘকাল ধরে প্রাকৃতিক গ্যাস জ্বলে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া বাড়বকুন্ডের সাগর উপক‚লীয় বিভিন্ন গ্রামসহ নানা স্থানে সমভূমিতেও প্রায়ই প্রাকৃতিক গ্যাস নির্গত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। সর্বশেষ গ্যাসের সন্ধান মিলেছে এ ইউনিয়নের দক্ষিণ মাহমুদাবাদ সাগর ঊপক‚লে। এখানে ইউনিটেক্স এলপি গ্যাস নামক একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান টিউবয়েল করার সময় পানির সাথে গ্যাস উঠতে দেখেন। এদিকে স্থানীয়রা জানান, এখানে সাগর উপক‚লীয় এলাকায় বারবার গ্যাসের সন্ধান মিলছে। ২০১৩ সালে মাহমুদাবাদ গ্রামের জনৈক আবুল কাসেমের বাড়ির টিউবয়েল থেকেও পানির বদলে গ্যাস বের হতে শুরু করে। এতে আবুল কাসেম প্রথমে ভয় পেলেও পরে পাইপের মাধ্যমে এই গ্যাস ব্যবহার করে রান্না ও জ্বালানির কাজ শুরু করেন তিনি। আবুল কাসেম জানান, তার টিউবয়েল থেকে প্রচুর গ্যাস নির্গত হলেও সরকারি-বেসরকারি কোনো কর্তৃপক্ষ তার কাছে আসেনি। কিংবা তাকে কোনো নির্দেশনাও দেয়নি। তবে এলাকার কয়েকজনের পরামর্শে তিনি পাইপের মধ্যে দিয়ে এই গ্যাস আহরণ করে রান্নাসহ বিভিন্ন কাজে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
অন্যদিকে সমতলে মাঝে মধ্যে গ্যাস নির্গত হলেও এখানে বিভিন্ন পাহাড়ে স্থায়ীভাবেই যুগ যুগ ধরে নিয়মিত গ্যাস জ্বলে পুড়ে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে।
উপজেলার ছোটদারোগারহাট লবনাক্ষ পাহাড়ে লবনাক্ষ মন্দিরের ভেতরে জমে থাকা পানির ভেতর থেকে বুদ বুদ দিয়ে গ্যাস নির্গত হয় সারাবছর। দিয়াশলাই থেকে আগুন দেয়া হলে পানির মধ্যেই আগুন জ্বলতে দেখা যায়। এ মন্দিরের পাশেই পাহাড়ী ছরা। ছরার ভেতরেও বুদ বুদ দিয়ে গ্যাস নির্গত হয়। আগুনের ছোঁয়া পাওয়ার সাথে সাথে দাউ করে জ্বলে উঠে গ্যাস। এ ছরার কয়েক’শ গজ কিছুটা উত্তরে পাহাড়ী পথে এগিয়ে গেলেই রয়েছে গুরুধ্বনি নামক স্থান। যেখানে কয়েক’শ বছর ধরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দাউ দাউ করে গ্যাস জ্বলছে। প্রতিদিন একটানা আগুন জ্বলতে থাকায় গ্যাস নির্গত হবার স্থানটি বেশ উত্তপ্ত হয়ে থাকে। ছোটদারোগারহাটের ধর্মপুর গ্রামের মো. জালাল আহমেদ জানান, বাপ-দাদার কাছে তিনি শুনেছেন কয়েক’শ বছর আগে থেকে এখানে গ্যাস বের হচ্ছে। পাহাড়ে নিয়মিত আসা যাওয়া থাকায় ছোটবেলা থেকে তিনিও এভাবে গ্যাস জ্বলতে দেখে আসছেন। শুকনো মৌসুমে গ্যাসের এই আগুন দাবানলের মত পাহাড়ে ছড়িয়ে পড়ে গাছপালা, পশু পাখি পুড়িয়ে দেয়। এ গ্যাস কেন আহরণ করা হচ্ছে না তিনি বুঝতে পারেন না বলে জানান। একই অবস্থা কুমিরা ও বাড়বকুন্ড পাহাড়েও। সেখানে দুদীর্ঘকাল গ্যাস নির্গত হয়ে ফুরিয়ে যাচ্ছে। অবশ্য সীতাকুন্ডে যে গ্যাসের সম্ভাবনা উজ্বল তা আগেই প্রমাণিত হয়েছে। এ উপজেলার ফৌজদারহাটেই আবিষ্কৃত হয়েছে দেশের একমাত্র সামুদ্রিক গ্যাস ক্ষেত্র (সাঙ্গু গ্যাস ফিল্ড)। এখান থেকে প্রতিদিন বিপুল পরিমান গ্যাস আহরণ করা হচ্ছে। চট্টগ্রামের অসংখ্য শিল্প প্রতিষ্ঠান সাঙ্গু গ্যাস ফিল্ডের উপর নির্ভরশীল। ফলে সাঙ্গু দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছে।
সীতাকুন্ডে অন্যান্য স্থানে নিসৃত গ্যাস আহরণ করা হলে তাও সাঙ্গুর মতো ব্যাপকভাবে দেশের কল্যাণে অবদান রাখবে বলে সচেতন মহল মনে করেন। এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পেট্টো বাংলার এক কর্মকর্তা প্রতিবেদককে বলেন, সীতাকুন্ডে গ্যাসের সম্ভাবনার কথা অনেক আগে থেকেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জানা আছে। এ বিষয়ে সার্ভে করার লক্ষে ৮০ এর দশকে জিওলকিক্যাল সার্ভে অব বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একবার চন্দ্রনাথ পাহাড়ে ক্যাম্প করা হলেও শেষ পর্যন্ত অজ্ঞাত কারণে সার্ভে শেষ করা যায়নি। সম্ভবত সেখানে ঠিক কি পরিমাণ গ্যাস থাকতে পারে সে ধারণা না পাওয়ায় গ্যাস আহরণের উদ্দ্যোগ নেয়া হয়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।