পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
২ সোয়াত সদস্য আহত : উদ্ধার ২০ জিম্মি
সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুন্ড থেকে : সীতাকুন্ডে জঙ্গি নির্মূল ও জিম্মিদের উদ্ধারে অপারেশন ‘অ্যাসল্ট-১৬’ পরিচালনা করেছে সোয়াত। গতকাল (বৃহস্পতিবার) সকাল ৬টা ৫ মিনিটে জঙ্গি দমনে অভিজ্ঞ বিশেষ এই বাহিনী অভিযান শুরু করে। অভিযানকালে দু’পক্ষে ব্যাপক বন্দুকযুদ্ধ শুরু হলে ভোর সাড়ে ৬টার দিকে ভয়াবহ আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা। এতে ভেতরে থাকা জঙ্গি পরিবারের ৫ সদস্য নিহত ও সোয়াতের ২ জন আহত হন। পরে সেখান থেকে জিম্মি হয়ে থাকা মোট ২০ জন নারী-পুরুষ ও শিশুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে আস্তানার ভেতরে বিপুল পরিমাণ গ্রেনেড ও অস্ত্রশস্ত্র পড়ে থাকায় এখনো অভিযান শেষ করা যায়নি।
প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সীতাকুÐ সদরের প্রেমতলা এলাকায় ‘ছায়ানীড়’ নামক বাড়িটিতে গত বুধবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে জঙ্গি আস্তানার হদিস পাওয়ার পর থেকে সেখানে পুলিশ, র্যাব, ডিবি, বিজিবি থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তারা উপস্থিত হন। সেই থেকে তারা ভেতরে অভিযান পরিচালনার চেষ্টা করলেও ভেতর থেকে জঙ্গিদের পাল্টা গুলি ও ঐ বাড়িটিতে আরো ৭টি পরিবার আটকে থাকায় অভিযান চালানো সম্ভব হচ্ছিল না। রাতে বহু চেষ্টা করলেও পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় সেখানে অভিযান পরিচালনা করা যায়নি। তবে ভোরে ঢাকা থেকে সোয়াতের অভিজ্ঞ অপর একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছলে সকাল ৬টার পর সোয়াতের বিশেষ টিম অপারেশন ‘অ্যাসল্ট-১৬’ নাম দিয়ে ঐ বাড়িটিতে অভিযান শুরু করলে ভেতর থেকে গুলি চালাতে থাকে জঙ্গিরা। এ সময় সোয়াত বাহিনীও মহুর্মুহু গুলি ছুড়তে থাকলে উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক গুলিবিনিময় হয়। অন্তত ৫ কিলোমিটার দূর থেকে এই গুলির আওয়াজ শোনা যায়। এতে সর্বত্র আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে সাড়ে ৬টার দিকে আস্তানার ভেতর থেকে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ হয়। শক্তিশালী ঐ বিস্ফোরণের তীব্রতায় কেঁপে উঠে আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা। এতে আহত হয় অপারেশনে থাকা সোয়াত বাহিনীর দুই সদস্য। তাদের একজনের পা ভেঙে গেছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের দ্রæত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা দেন। তবে তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। অভিযানকালে ঘটনাস্থলের পাশে থাকা সীতাকুÐ থানার অফিসার এসআই মো: ইকবাল প্রতিবেদককে বলেন, সোয়াত মুহুর্মুহু গুলি চালিয়ে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে আস্তানার ভেতর থেকে আল্লাহু আকবর সেøাগান দিয়ে জঙ্গিরা আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। ঐ বিস্ফোরণের পর আস্তানার ভেতর থেকে মানুষের মাংস ও রক্ত ছিটকে আসে। কিন্তু এরপর ভেতরের প্রকৃত চিত্র বুঝতে না পারায় দীর্ঘ সময় সেখানে অভিযান থেকে বিরত থাকেন সোয়াত ও অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা। এভাবে কেটে যায় কয়েক ঘণ্টা। কিন্তু এসময় পর্যন্ত ভেতর থেকে আর কোনো গুলি বা গ্রেনেড চালানো হয়নি। সকাল ৯টার দিকে পুনরায় ঐ বাড়িতে প্রবেশ করে সোয়াতসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। দমকল বাহিনীর সহযোগিতায় বাড়িটিতে প্রবেশের জন্য বিকল্প দরজা তৈরি করে সেখানে প্রবেশ করে তারা। কিন্তু জঙ্গিদের কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। এসময় তারা বিভিন্ন কক্ষে আটকে থাকা বাড়ির মালিকের পরিবার ও ভাড়াটিয়াদের উদ্ধার করতে থাকেন। সকাল পৌনে ১০টা পর্যন্ত সময়ে অন্তত ২০ জন নারী-পুরুষ ও শিশুকে সেখান থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। জিম্মিদের উদ্ধারের পর বাড়ির রাস্তায় পড়ে থাকা একটি শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ধ্বংস করে সোয়াতের সদস্যরা। সকাল ১০টার দিকে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, সকালে সোয়াতের অপারেশন ‘অ্যাসল্ট ১৬’ পরিচালনাকালে আস্তানার ভেতরের জঙ্গিদের সাথে বন্দুকযুদ্ধ হয়। একপর্যায়ে তারা ধরা পড়ার ভয়ে দুই জঙ্গি আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ ঘটালে একই কক্ষে থাকা মোট ৪ জঙ্গি নিহত হয়। এদের মধ্যে একজন নারী জঙ্গিও আছে। তবে জঙ্গিদের ঐ আস্তানায় বিপুল পরিমাণ গ্রেনেড ও বিস্ফোরক রয়েছে। সেগুলো উদ্ধার করা কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ধীরে ধীরে কাজ চলছে। সম্পূর্ণ অপারেশন শেষ করতে আর কত সময় লাগবে তা নিশ্চিত করেননি তিনি। অবশ্য বিকালে জমে থাকা বিস্ফোরক ধ্বংস অভিযানকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জঙ্গি আস্তানায় আরেকটি শিশুর লাশ দেখতে পায়। আনুমানিক ৮ বছর বয়সী ঐ শিশুর লাশ উদ্ধার করা হলে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫ জনে। এছাড়া প্রায় একই সময়ে ঐ ঘরের ভেতর থেকে নির্মল ভৌমিক (৯০) নামে এক বৃদ্ধলোককে উদ্ধার করা হয়। তিনি মিরসরাইয়ের মিঠাছড়া এলাকার বাসিন্দা। অন্যদিকে উদ্ধারকাজের মধ্যেই নিয়মিত বিরতিতে ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা শক্তিশালী গ্রেনেডগুলো একে একে ধ্বংস করছিল বিস্ফোরক ধ্বংসকারী বিশেষজ্ঞ দল। এভাবে একটি বোমা ধ্বংস করার সময় ঐ বাড়িটিতে আগুন ধরে যায়। অবশ্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন নিভিয়ে ফেলেন। গতকাল সন্ধ্যায় বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয়করণ অভিযানকালে ঘটনাস্থলে থাকা সীতাকুÐ থানার ওসি (তদন্ত) মো: মোজাম্মেল হক প্রতিবেদককে বলেন, ছায়ানীড় থেকে বিকালে আরো এক শিশুর লাশ উদ্ধার হয়েছে। এতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ জনে। এছাড়া এক বৃদ্ধলোককেও উদ্ধার করা হয়েছে। তবে আস্তানার ভেতরের সব গ্রেনেড ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এগুলো একদিনে সম্ভব হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, বাড়িটি বিস্ফোরকমুক্ত করতে আরো অনেক সময় লাগবে।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার বিকালে সীতাকু পৌর সদরের আমিরাবাদ গ্রামের সাধন বৈদ্যর মালিকানাধীন সাধন কুঠিরে দুই জঙ্গির অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাদের বাড়ির মালিকের স্ত্রী ও প্রতিবেশীরা আটক করে পুলিশে খবর দিলে পুলিশ তাদের আটক করে এবং পিস্তল, গ্রেনেড, সুইসাইড বোম সংবলিত বেল্ট ও বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করে। এসময় আটক জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরবর্তী চৌধুরীপাড়ার ছায়ানীড় নামক বাড়িতে আরো একটি আস্তানার কথা স্বীকার করে। এর পর থেকে সেখানেও অভিযান শুরু হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।