Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

টি-২০তে মাশরাফিকে ছাড়েনি বিসিবি!

| প্রকাশের সময় : ৮ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : দেশের শততম টেস্ট জয়ের সঙ্গে সঙ্গেই ফোন করে মুশফিক, তামীম, সাকিবদের অভিনন্দিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের ক্রিকেট দল এভাবে অসংখ্যবার পেয়েছেন ক্রিকেটপ্রেমী প্রধানমন্ত্রীর অনুপ্রেরণা। তবে গত পরশু ক্রিকেট দলকে অভিনন্দিত করার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী টেলিফোনে কথা বলেছেন মাশরাফির সঙ্গে। সারা দেশ যখন টি-২০ থেকে মাশরাফির বিদায়ী ঘোষণায় কাতর, তখন প্রধানমন্ত্রীও নিশ্চুপ থাকতে পারেননি। টি-২০ ক্রিকেট থেকে বিদায়ের সিদ্ধান্ত পূনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি মাশরাফিকে।
এবারই প্রথম নয়, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের শীর্ষ কর্তার হস্তক্ষেপে ২০১২ সালে এশিয়া কাপের দলে যখন জায়গা হয়নি তামীমের, ক্ষোভে সে সময়ে প্রধান নির্বাচক আকরাম খানের পদত্যাগ নিয়ে মিডিয়ায় ব্যাপক সমালোচনা হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগেই দলে ফিরিয়ে আনা হয় তামীমকে, প্রধান নির্বাচক পদ থেকে আকরাম খান পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারও করেছেন প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে। প্রধানমন্ত্রীর সেই হস্তক্ষেপে দলে ফিরে এশিয়া কাপে টানা ৪ ম্যাচে ৪টি ফিফটি উপহার দিয়ে দিয়েছেন আস্থার প্রতিদান তামীম। টি-২০তে মাশরাফির বিদায়ী ঘোষণা এবং আনুষ্ঠানিক বিদায়ে যখন কাঁদছে মাশরাফি ভক্তরা, এমন সিদ্ধান্তের পেছনে বাংলাদেশ দলের হেড কোচ হাতুরুসিংহে এবং বিসিবি’র শীর্ষস্থানীয় কর্তাদের ষড়যন্ত্রের গন্ধ যখন পাচ্ছে তারা, তখন মাশরাফিকে প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে ইতিবাচক সাড়ার প্রত্যাশা করছেন মাশরাফি ভক্তরা। গতকাল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যখন শ্রীলংকা থেকে তিন তিনটি সিরিজ ড্র’র অবিশ্বাস্য সাফল্য নিয়ে ফিরেছে দেশে, তখন মাশরাফি ভক্তরা জড়ো হয়ে প্লাকার্ড, ব্যানার নিয়ে করেছে মানববন্ধন।
দারুণ অর্জন নিয়ে শ্রীলংকা থেকে ঢাকায় ফিরেছে ক্রিকেট দল যে ফ্লাইটে, সেই ফ্লাইটেই ফিরেছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এমপি। দেশে প্রত্যাবর্তানের সঙ্গে সঙ্গে বিসিবি কর্মকর্তারা ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করে নিয়েছেন মাশরাফি, মুশফিকদের। দারুণ তিনটি সিরিজে মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়া, অনুভুতি জানাবেন তিন ভার্সনের ক্রিকেটে ২ অধিনায়ক মুশফিক, মাশরাফি। এটাই স্বাভাবিক। তবে বিমানবন্দরে এই দুই অধিনায়ককে পাশে বসিয়ে নিজের মাশরাফি ইস্যুতে নিজের অবস্থানের ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এমপি। প্রেমাদাসায় আনুষ্ঠানিকভাবে টি-২০ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে গত পরশু মাশরাফি বিদায় নিলেও এটাকে বিদায় বলতে নারাজ বিসিবি সভাপতি ‘মাশরাফি কিন্তু টি-২০ এখনো ছাড়েনি। আমরা এখন পর্যন্ত মাশরাফিকে বলিনি যে, মাশরাফি টি-২০ স্কোয়াডে নেই। ও শুধু অধিনায়কত্ব ছেড়েছে। তিন ফরমেটে তিনজন অধিনায়ক। সেটা আমি অনেক আগেই বলে আসছি। ও যদি ফিট থাকে, খেলবে। যদি বলে খেলতে চায় না, কিন্তু আমাদের দরকার হয়, তাহলে কি ছেড়ে দিব?’
মাশরাফিকে পাশে বসিয়ে রেখে মাশরাফির জন্য সহানুভুতি প্রকাশ করেছেন পাপন ‘মাশরাফির মনে কষ্ট না থাকার কোনো কারণ নেই। কারণ ও একজন খেলোয়াড়। শুধু খেলোয়াড়ই নয়, ও দলটাকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। তাছাড়া খেলা থেকে অবসর, সেজন্য খারাপ লাগতেই পারে। এটা অস্বাভাবিক কিছু না। আমারও লাগত।’
মুশফিকুরের হাত থেকে ওয়ানডে এবং টি-২০ ক্রিকেটে অধিনায়কত্ব মাশরাফির হাতে অর্পিত করে সাফল্য দেখেছে বিসিবি। এশিয়া কাপ টি-২০তে পাকিস্তান, শ্রীলংকাকে হারিয়ে বাংলাদেশের সেরা অর্জন ফাইনালিস্ট, মাশরাফির ক্যাপ্টেনসিতেই। অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়ে শুরু থেকেই লিডিং ফ্রম দ্য ফ্রন্ট এ অবতীর্ণ মাশরাফি। অথচ, মাশরাফিকে ২০১৪ সালে যখন অধিনায়ক হিসেবে বেছে নেয়া হয়, তখন নাকি তার পারফরমেন্স প্রত্যাশিত ছিল না, এমনটাও জানিয়েছেন তিনি ‘ওকে যখন অধিনায়ক করা হয় টি-২০ ওয়ানডেতে ও স্কোয়াডেই ছিল না। ও তখন ইনজুরিতে। ওকে যখন বানানো হয়েছে, তখন নিশ্চয়ই একটা বিশেষ কথা চিন্তা করে করা হয়েছিল। সেই ভূমিকা সে পুরোপুরিভাবে সার্থকভাবে করেছে, সেজন্য ওর পাশাপাশি আমরাও গর্বিত।’ তবে এই তথ্যটি যে ঠিক নয়, সে সময়ে মাশরাফির পারফরমেন্স কিন্তু সে কথাই বলবে। টি-২০তে ক্যাপ্টেনসির অভিষেকে শ্রীলংকার বিপক্ষে ২ ম্যাচে ৪ উইকেট ছাড়াও ওয়ানডেতে ক্যাপ্টেনসি পাওয়ার আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ছিলেন দ্বিতীয় সর্বাধিক উইকেট শিকারী মাশরাফি।
সংক্ষিপ্ত ভার্সনের ক্রিকেটে বাংলাদেশকে সেরা সাফল্য দিয়েও যদি টি-২০’র জন্য যখন মাশরাফির পরিবর্তে অন্য কাউকে অধিনায়ক হিসেবে খুঁজছেন বিসিবি সভাপতি,তা জানার পর মাশরাফি টি-২০ ছেড়ে তো দিবেনই। তারপরও ফেসবুকে মাশরাফির ঘোষনার পর থেকে ভক্তদের আর্তনাদ, মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা,সমালোচনা মনো:পুত হচ্ছে না বিসিবি সভাপতির ‘বাংলাদেশ ছাড়া টি-২০তে অধিনায়কত্ব থেকে কে অবসর নিল, কে গেল, এটা নিয়ে কোনো দিন কোনো জায়গায় নিউজ দেখেনি। শুধু বাংলাদেশেই এত হুলস্থুল দেখছি। যে কোন দেশে ওয়ানডে নিয়ে কথা হয়, টেস্ট নিয়ে হয়, কিন্তু টি-২০ নিয়ে এমন আলোচনা হয় না।’ তবে টি-২০ থেকে বিদায় নিয়ে যে আর ফিরছেন না,দেশে ফিরে তা মিডিয়াকে জানিয়ে দিয়েছেন মাশরাফি। টি-২০ তে এক দশক কাটিয়ে দেয়ায় গর্ব অনুভব হচ্ছে নড়াইল এক্সপ্রেসের ‘কোনো আক্ষেপ তো অবশ্যই নাই। আমি এবং আমার পরিবার গর্বিত যে প্রায় ১০ বছর টি-টোয়েন্টি খেলতে পেরেছি। শুধু আমি না আমার আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব যারা আছে সবাই এর জন্য গর্ব অনুভব করে।’
বিসিবি কেন্দ্রিয় চুক্তির ক্রিকেটার বলেই বিসিবি সভাপতির এসব ব্যখ্যার পাল্টা জবাব দেননি মাশরাফি। চাপা হাসি হেসেছেন শুধু। তবে ভক্তদের আর্তনাদ ছুঁয়েছে মাশরাফির হৃদয়ে। ভক্তদের উদ্দেশে বলেছেন ‘যারা আমাকে নিয়ে আন্দোলন বা মানববন্ধন করছেন, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। উনাদের এই ধরনের ইতিবাচক দিকগুলোর কারণেই আমার ক্যারিয়ার এত লম্বা হয়েছে। আমার খুব খারাপ সময়েও তাদের দোয়া ছিল। আমি এখনও ওয়ানডে খেলছি। আমাকে মাঠে দেখা যাবে, মজা হবে ওখানেই।’
শ্রীলংকা সফরে বাংলাদেশের ওয়ানডে এবং টি-২০’র পারফরমেন্স গর্ব করার মতো হলেও পুরোপুরি তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে পারছেন না মাশরাফি ‘শ্রীলঙ্কায় আমরা ওয়ানডে সিরিজ ২-০ তে জিতলে ভাল হতো। কিন্তু এখানে যে ভুলগুলো করেছি, তাশুধরে ফেলে আয়ারল্যান্ড সফর ও চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে যেহেতু ভিন্ন উইকেটে খেলা হবে, সেখানে পরিকল্পনা করে মাঠে নেমে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চেষ্টা করব।’
টি-২০তে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ দল পরবর্তী টি-২০ বিশ্বকাপে ভাল করবে বলে বিশ্বাস তার ‘দল কিন্তু খুব ভাল খেলছে। শেষ ম্যাচ জয়ের আগে ৮টি টি-২০ম্যাচ আমরা হেরেছি। ছোট ছোট ভুলের কারণে কয়েকটি ম্যাচ হেরেছি, নইলে শেষ ৪-৫টি ম্যাচ আমরা জিততে পারতাম। আমি নিশ্চিত, সামনে আমাদের যে টি-২০ খেলাগুলো আছে, সেখানে আমরা ভালো করব এবং টি-২০ বিশ্বকাপেও ভালো করব।’
বিসিবি’র দেয়া গোলাপ ফুলগুলো যে কাঁটা হয়ে বিধছে তার, প্রাণোচ্ছল, হাসিখুশি স্বভাবের মাশরাফির গতকাল মলিন মুখই যে প্রকারান্তরে বলছে তা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাশরাফি

১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ