Inqilab Logo

শুক্রবার ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৯ ভাদ্র ১৪৩১, ০৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

রক্ষক যখন ভক্ষক কুড়িগ্রামে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের সরকারি জমি পুলিশের অবৈধদখলে

| প্রকাশের সময় : ১৮ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম থেকে : কুড়িগ্রাম জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র কয়েক কোটি টাকা মূল্যের প্রায় ২ একর জমি অবৈধভাবে দখলে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে খোদ পুলিশের বিরুদ্ধে। রক্ষক হয়ে ভক্ষকের এ ভ‚মিকা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কুড়িগ্রাম জেলা স্টেডিয়ামের পশ্চিম দেয়াল ঘেঁষে সদর থানাসংলগ্ন এ জমি পুলিশ দখলে নিতে ইতোমধ্যে ১০-১২টি ফলজি গাছ কেটে ফেলেছে। এখন চলছে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের প্রস্তুতি। ইতোমধ্যে পুলিশকে অবৈধ দখলদার চিহিৃত করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কাজ বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারপরও পুলিশের টনক নড়েনি। সরানো হয়নি নির্মাণ সামগ্রী। বরং বসানো হয়েছে পুলিশ পাহারা। এনিয়ে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের মধ্যে চলছে রশি টানাটানি। জেলা প্রশাসক খান মো: নুরুল আমিন চিঠি দিয়ে পুলিশকে কাজ বন্ধের নির্দেশ দেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, সরকারের অধিগ্রহণকৃত এসব জমি আইনি প্রক্রিয়ায় নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বরাদ্দ দেয়া হয় সংশ্লিষ্ট বিভাগের চাহিদার ভিত্তিতে। জানা মতে পুলিশের কোনো চাহিদাপত্র নেই। আলোচিত প্রায় দুই একর জমির উত্তর প্রান্তের এক একর জমি গোয়েন্দা সংস্থা ‘এন এস আই’র জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আর দক্ষিণ পাশের্^ অপর ৯০ শতক জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে জেলা পর্যায়ে সরকারিভাবে একটি মডেল মসজিদ নির্মাণের জন্য। এ মসজিদটি হবে ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং গবেষণাগার। কাজেই পুলিশের এখানে কোনো জমি নেই। এর আগে পুলিশের চাহিদা মোতাবেক জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কুড়িগ্রাম শহরকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে ১৯৫৮ সালে তৎকালীন সরকার ৩০২একর জমি অধিগ্রহণ করেন। এসব জমিতে সরকার চাহিদার ভিত্তিতে নীতিমালা অনুসরণ করে পর্যাক্রমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে। কুড়িগ্রাম মহিলা কলেজের সামনে এবং কুড়িগ্রাম স্টেডিয়াম ও সদর থানার মাঝখানে ফাঁকা ৩ একর জমি দীর্ঘদিন থেকে কুড়িগ্রাম পুলিশ দখলে নিয়ে ধানচাষ করে আসছিল। এ জমি বর্তমানে জেলা প্রশাসনের ১নং খাস ক্ষতিয়ানে রেকর্ড ভুক্ত। কুড়িগ্রাম স্টেডিয়ামের নতুন প্যাভিলিয়ন নির্মাণ, ইনডোর স্টেডিয়াম নির্মাণের জন্য বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করে। এছাড়া গোয়েন্দা সংস্থা ‘এন এস আই’ বিভাগ এবং মডেল মসজিদ নির্মাণের জন্য জমি বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। জমি পুন:গ্রহণ, ব্যবহার ও বরাদ্দ সংক্রান্ত জেলা কমিটি কুড়িগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে স্টেডিয়ামের জন্য ১ একর ১০ শতক, গোয়েন্দা সংস্থা ‘এনএসআই’ বিভাগকে ১একর এবং মডেল মসজিদ নির্মাণের জন্য ৯০ শতক জমি বরাদ্দের সুপারিশ করে ঢাকায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। ইতোমধ্যে জেলা ক্রীড়া সংস্থা স্টেডিয়ামের নতুন প্যাভিলিন নির্মাণ করে নতুন বরাদ্দপ্রাপ্ত জমিতে। বাকি ১ একর ৯০ শতক জমি সীমানা প্রাচীর দিয়ে অবৈধদখলে নিতে পুলিশ তৎপর হয়ে ওঠে। অথচ ২০০৮ সালে পুলিশকে অবৈধ দখলদার হিসাবে চিহ্নিত করে চিঠি দেয়া হয়। তাগিদ দেয়া হয় অবৈধভাবে দখলে রাখা ৩ একর জমি ছেড়ে দেয়ার জন্য। এরপর ২০০৯ সালের ৩ আগস্ট তৎকালীন জেলা প্রশাসক আসাদুজ্জামান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় পুনরায় পুলিশকে অবৈধদখলদার চিহ্নিত করে জমি ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত রেজ্যুলেশনে আনা হয়। এরপরও কয়েক দফা চিঠি চালাচালি হলেও পুলিশ তার দখল ছাড়েনি। বরং স্থায়ী দখলে নিতে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এ জমি বর্তমানে জেলা প্রশাসনের ১নং খাস খতিয়ানে রেকর্ড ভুক্ত।
কুড়িগ্রাম সদর থানার অফিসার পরিদর্শক ইনচার্জ (তদন্ত) রওশন কবীর জানান, কৃষ্ণপুর মৌজায় সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ বন্ধ করণ প্রসঙ্গে একটি পত্র জেলা প্রশাসক স্বাক্ষরিত সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর পাঠানো হয়। এরপর থেকে নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে।
কুড়িগ্রাম অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেনহাজুল আলম জানান, এ জমির মালিক গণপূর্ত বিভাগ। সে কারণে গণপূর্ত বিভাগের অনাপত্তিপত্র নিয়ে আমাদের সার্কেল অফিস কাম কোয়ার্টার নির্মাণের আবেদন করা হয়েছে। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন রয়েছে। বাজেট বরাদ্দ পেলেই আমাদের কাজ শুরু হবে। আমরা আইন সম্মতভাবে আবেদন করেছি সংশ্লিষ্ট বিভাগে। শক্তির জোরে নয় আইনি প্রক্রিয়ায় পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
গণপূর্ত বিভাগের ভূমি সংক্রান্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী খাইরুল ইসলাম জানান, এ জমি সরকারের অধিগ্রহণকৃত। গণপূর্ত বিভাগের মালিক। জেলা প্রশাসকের ১নং খাস খতিয়ানে ভুল করে রেকর্ডভুক্ত হয়েছে। পুলিশের সার্কেল অফিস করার জন্য ২০/২৫ শতক জমি বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করায় তা গণপূর্ত বিভাগ অনুমোদন দিয়েছে। গণপূর্ত বিভাগ সরাসরি জমি বরাদ্দ দেয়ার এখতিয়ার রাখে। তবে গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাওদুদুর রহমান এর ০১৭১১০৫৫০৭০ নম্বর মোবাইলে গত তিন থেকে ফোন করেও কোন সাঁড়া পাওয়া যায়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রক্ষক

১২ এপ্রিল, ২০১৯
১২ মার্চ, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ