গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
রফিকুল ইসলাম সেলিম : চট্টগ্রাম বিমানবন্দর সড়কে এখন তীব্র যানজট আর নিত্য দুর্ভোগ। খোঁড়াখুড়ির কারণে সড়কজুড়েই ধুলাবালির যন্ত্রণা। নির্ধারিত সময়েও তিনটি সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় ভিআইপি সড়কটি এখন জনদুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেতু তিনটির কাজ চলছে ধীরগতিতে। এক বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয় বিগত ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে।
বেঁধে দেওয়া সময় শেষ হয়েছে তিন মাস আগে, অথচ এখন পর্যন্ত কাজ হয়েছে মাত্র ৩০ ভাগ। নির্মাণ কাজ শেষ করার নতুন সময় নির্ধারণ করা হয়েছে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত। তবে যে গতিতে কাজ চলছে তাতে বাকি কাজ কবে শেষ করা যাবে তাও নিশ্চিত নয়। সেই হিসাবে দুর্ভোগ থাকবে আরও ছয় মাসেরও বেশি।
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মহানগরীতে আসা যাওয়ার এ সড়কটি ভিআইপি সড়ক হিসাবে পরিচিত। বিমানযাত্রীদের আসা-যাওয়াসহ কর্ণফুলীর ওপারে আনোয়ারাসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিশাল জনগোষ্ঠির যাতায়াত এ সড়ক হয়ে। সড়কের পাশে রয়েছে বিমানবাহিনীর ঘাঁটি জহুরুল হক, বিএএফ শাহীন কলেজ, চিটাগাং ড্রাই ডক, ইস্টার্ন রিফাইনারি, দেশের একমাত্র টিএসপি সারকারখান, রাষ্ট্রায়ত্ব জ্বালানী তেল কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার ডিপো ছাড়াও বেশ কয়েকটি শিল্প কারখানা।
কর্ণফুলী নদী পার হয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার শ্রমিক এ সড়ক হয়ে নগরীর উত্তর পতেঙ্গার কর্ণফুলী ইপিজেড ও চট্টগ্রাম ইপিজেডের বিভিন্ন কারখানায় কাজ করতে আসে। ওই সড়কে পাশে থাকা জ্বালানি তেলের ডিপো থেকে তেল নিতে প্রতিদিন বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে তেলবাহী ট্যাঙ্ক লরি আসা যাওয়া করছে ওই সড়কে। সড়কের পাশে রয়েছে রেল লাইন। সড়কে ক্রসিং থাকায় জ্বালানি তেলবাহী রেলের ওয়াগন চলাচলের কারণেও দিনে কয়েক দফা সড়কটি বন্ধ করতে হয়।
এখন এই তিন সেতুর নির্মাণ কাজের কারণে সড়কে নিত্য যানজট হচ্ছে। পুরাতন সেতু ভেঙ্গে নতুন সেতুর কাজ চলছে। সেতুর পাশে বিকল্প সেতু দিয়ে একমুখী যানবাহন চলাচল করছে। একদিকে যানবাহন থামিয়ে অন্যদিকের যানবাহন পার করা হচ্ছে। এতে করে সড়কে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত যানজট হচ্ছে। যানবাহন আটকে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন চলাচলকারীরা। যানজটের কারণে অনেকে সময় মতো অফিসে যেতে পারছে না। খোঁড়াখুড়ির কারণে সড়কের অবস্থা এখন বেহাল, আছে ধূলাবালির যন্ত্রণাও।
জানা যায়, জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকার অর্থায়নে মহানগরীর অবকাঠামো উন্নয়নে তিনটি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। সড়কের রুবি সিমেন্টের পাশে ৭ নম্বর খালে, ৯ নম্বর গুপ্তখালে ও ১৫ নম্বর খালের ওপর এই তিন সেতুর নির্মাণকাজ চলছে। তিনটি সেতু নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৯ কোটি টাকা। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সিটি গভর্নেন্স প্রজেক্ট’র আওতায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।
নির্ধারত সময়ে কাজ শেষ হয়নি বিষয়টি স্বীকার করে সিটি কর্পোরেশন ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, সেতুর নকশা প্রণয়ন ও বিকল্প সেতু নির্মাণে জটিলতা, বিভিন্ন সেবা সংস্থার পাইপ লাইন অপসারণ জটিলতা, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ঠিক সময়ে প্রকল্প এলাকা বুঝিয়ে দিতে না পারার কারণে কাজে দেরি হয়েছে।
সিটি কর্পোরেশনের একজন কর্মকর্তা জানান, পুরাতন সেতুর নিচ দিয়ে যাওয়া হাইভোল্টেজ বৈদ্যুতিক লাইন ও ওয়াসার পানির পাইপ অপসারণ নিয়ে জটিলতা ছিল। এগুলো দূর করতে কিছু সময় ব্যয় হয়েছে। তাছাড়া কাজ শুরুর আগে বিকল্প সেতু নির্মাণেরও কোন পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। বাস্তব অবস্থা হচ্ছে বিকল্প সেতু ছাড়া সেখানে কাজ করা সম্ভব ছিল না। এসব কারণে কাজ শেষ হতে দেরি হচ্ছে।
সংশিষ্টরা জানান, বর্তমানে সেতুর প্রায় ৩০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যে ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হবে। প্রকল্পের মেয়াদ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হলেও জুনের মধ্যেই কাজ শেষ করার পরিকল্পনা আছে। সরেজমিন দেখা যায় সবচেয়ে বেশি যানজট হচ্ছে ৭ নম্বর খালের ওপর নির্মিত পুরোনো সেতু এলাকায়। পুরোনো সেতুটি ভেঙে অপসারণ করা হচ্ছে। পাশে বিকল্প সেতু দিয়ে গাড়ি চলাচল করছে। তবে এ সেতু দিয়ে এক পাশের গাড়ি চলাচল করলে বিপরীত দিক থেকে আসা যান চলাচল বন্ধ রাখতে হয়।
এতে এক পাশে গাড়ির জট সৃষ্টি হয়। সকালে অফিস শুরুর সময় যানবাহনের লাইন দুদিকে এক কিলোমিটারের বেশি বিস্তৃত হয়। বিকল্প সেতুটি সরু হওয়ায় একমুখি যানবাহন চলাচল করতে হয়। একই চিত্র দেখা যায়, ৯ নম্বর গুপ্তখালের ওপর নির্মাণাধীন সেতু এলাকায়। সেখানে বিকল্প সেতুটি খুবই দুর্বল। যানবাহন চলাচলের সময় সেটি প্রচন্ড ঝাঁকুনি দেয়। বিকল্প সেতুর দুপাশে প্রায় সময় জট লেগে থাকে।
ওই সড়কে দায়িত্বপালনকারী একজন ট্রাফিক সদস্য বলেন, প্রতিদিন একাধিক ভিআইপি বিমানবন্দর হয়ে আসা-যাওয়া করছেন। তাদের আসা-যাওয়ার সময় সড়কের একপাশ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এতে করেও যানজট বাড়ছে। ধূলোবালির কারণে তাদের দায়িত্বপালনেও কষ্ট হচ্ছে বলে জানান তিনি।
বিমানবন্দর- ইপিজেড রুটের টেম্পু চালক মো: হাবিব উলাহ বলেন, সেতুর নির্মাণ কাজ চলার কারণে যানজটের কারণে বিশ মিনিটের রাস্তা পার হতে কখনো এক ঘন্টা সময় লেগে যাচ্ছে। এতে তাদের আয় যেমন কমে গেছে তেমনি যাত্রীদেরও দুর্ভোগ হচ্ছে। কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ের দূরদূরান্তের বিভিন্ন গ্রাম থেকে হাজার হাজার শ্রমিক প্রতিদিন নদী পার হয়ে এই সড়ক হয়ে কর্মস্থলে আসেন। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন তারা। যথাসময়ে কারখানায় পৌঁছতে অনেকে ভোররাতে বাড়ি থেকে রওনা দিচ্ছেন। তার পরও রাস্তায় যানজটে আটকা পড়তে হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।