পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার শপথ গ্রহণ করেছেন গত বুধবার। তাদের এই শপথ গ্রহণের মধ্যে নতুন নির্বাচন কমিশনের যাত্রা শুরু হয়েছে। সাংবিধানিক বিধি মোতাবেক ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের বাধ্যবাধকতা ছিল। সে কারণে বেশ আগে থেকেই এর গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়। গত নির্বাচন কমিশন গঠনে যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছিল, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনেও মূলত সেই প্রক্রিয়াই অনুসৃত হয়। প্রেসিডেন্ট রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেন, সার্চ কমিটি গঠন করেন, সার্চ কমিটির প্রস্তাবকৃত ১০ জনের মধ্যে পাঁচজনকে নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করেন। ব্যতিক্রম হিসেবে সার্চ কমিটি নাগরিক সমাজের ১৬ জন প্রতিনিধির সঙ্গে মতবিনিময় করে। যদিও ওই মতবিনিময় কোনো কাজে আসেনি। বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন গঠনের গোটা প্রক্রিয়া আসলে ছিল লোক দেখানো। সরকারের ইচ্ছা ও অভিপ্রায় অনুযায়ী তার পছন্দের লোকদের নিয়েই কমিশন গঠন করা হয়েছে। উল্লেখ করা দরকার, নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগকর্তা প্রেসিডেন্ট হলেও তিনি প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ ছাড়া তাদের নিয়োগ করতে পারেন না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার নেতৃত্বাধীন জোট নতুন নির্বাচন কমিশনকে স্বাগত জানিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও বিএনপি ও তার নেতৃত্বাধীন জোট প্রত্যাখ্যান না করলেও হতাশা ব্যক্ত করেছে। তাদের অভিযোগ, কমিশনের পাঁচজনের চারজনই ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত। ফলে রকিব কমিশনের মতো, হুদা কমিশনও সরকারের আজ্ঞাবহ কমিশনই হবে। রকিব কমিশনের বিরুদ্ধে সমালোচনার অন্ত নেই। শুধু সরকারের আজ্ঞাবহই নয়, তার মতো অদক্ষ, অযোগ্য ও ব্যর্থ নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশের ইতিহাস আর দ্বিতীয়টি আসেনি। দেশে দীর্ঘদিন ধরে যে রাজনৈতিক সঙ্কট চলছে গণতন্ত্রহীনতার যে নজিরবিহীন পরিস্থিতি বিরাজ করছে, সেটা মূলত রকিব কমিশনেরই সৃষ্টি।
এরকম নির্বাচন কমিশন এ দেশের মানুষ চায়নি। কখনই চায় না। তাদের প্রত্যাশা ছিল, নতুন যে কমিশন হবে, তা হবে দলনিরপেক্ষ, দক্ষ, যোগ্য ও সাহসী লোকদের নিয়ে। রাজনৈতিক দলগুলোরও এমন প্রত্যাশা ও দাবি ছিল। পর্যবেক্ষকদের মতে, তাদের এ প্রত্যাশা ও দাবি পূরণ হয়নি। কাজেই, তাদের মধ্যে হতাশা দেখা দেয়া অসম্ভব বা অস্বাভাবিক নয়। নতুন নির্বাচন কমিশনের একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো, জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা অর্জন করা। আচরণ ও কর্মের মধ্য দিয়ে সেই আস্থা অর্জন সম্ভবপর হতে পারে। জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলো সেটা দেখার জন্যই অপেক্ষায় আছে। সুযোগও সামনে এসে পড়েছে। আগামী ৬ মার্চ ১৮টি উপজেলায় বিভিন্ন পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, রকিব কমিশন জাতীয় সংসদ নির্বাচনই নয়, স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনগুলোতেও চরম দলবাদী ভূমিকা, চরম অযোগ্যতা ও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। সুতরাং, আস্থার ব্যাপারটি ওই নির্বাচন থেকেই অর্জন করার চেষ্টা করতে হবে নতুন নির্বাচন কমিশনকে। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে আস্থার পরিবেশ তৈরির একটা শুভ সূচনা হতে পারে। দেখা যাক, এই পরীক্ষায় নতুন নির্বাচন কমিশন কতটা উত্তীর্ণ হতে পারে।
নির্বাচন কমিশনের প্রধান পরীক্ষাটি দিতে হবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে। স্থানীয় পরিষদের নির্বাচনার আর জাতীয় নির্বাচনের মধ্যে পার্থক্য আকাশ-পাতাল। স্থানীয় নির্বাচনে সরকার পরিবর্তনের বিষয়টি যুক্ত নয়, কিন্তু জাতীয় নির্বাচন মূলত: সরকার পরিবর্তনের লক্ষ্যেই অনুষ্ঠিত হয়। ফলে ওই নির্বাচনে নতুন নির্বাচন কমিশনকে আসল পরীক্ষাটি দিতে হবে। এ পর্যন্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার যা কিছুই বলেছেন, তা উৎসাহজনক। শপথ গ্রহণের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, ‘আমরা সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে শপথগ্রহণ করেছি, সংবিধান ও সংবিধানের অধীনে প্রণীত আইনকানুন ও বিধিবিধানের ভিত্তিতে দায়িত্ব পালনে অটল ও আপসহীন থাকবো।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘নিরপেক্ষ থেকে সব দলের সঙ্গে পরামর্শ করে কাজ করে যাবো। সরকারকে কমিশনের ওপর প্রভাব বিস্তারের কোনো সুযোগ দেবো না’। তার এই বক্তব্যে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে অটল ও আপসহীন থাকা, নিরপেক্ষ থাকা, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করে কাজ করা এবং সরকারের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ না দেয়ার নীতি ও প্রতিজ্ঞায় নির্বাচন কমিশন যদি অনড় থাকতে পারে, তবে তার সফল না হওয়ার কোনো কারণ নেই। নির্বাচন কমিশন সেটা করতে পারলে ইতিহাসে তার নাম স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ হবে। সেই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের প্রতি, নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি হৃত আস্থাও প্রতিষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশন শপথ ও অঙ্গীকার ঠিক থাকতে পারবে কিনা, সেটাই দেখার বিষয়। প্রসঙ্গক্রমে স্মরণ করা দরকার, আমাদের দেশে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন পরিচালনা করা নির্বাচন কমিশনের পক্ষে কেবল কঠিন নয়, প্রায় অসম্ভবও বটে। নির্বাচন কমিশনকে এই চ্যালেঞ্জও মোকাবেলা করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।