পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল সম্প্রতি নির্বাচনকালীন সহিংসতা প্রসঙ্গে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা আত্মঘাতী ও অপরিণামদর্শী। জাতি সিইসি’র কাছে এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন বক্তব্য কোনভাবেই প্রত্যাশা করে না। সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের ‘তলোয়ারের বিপরীতে রাইফেল নিয়ে দাঁড়ানো’র বক্তব্যে গোটা জাতি হতাশ হয়েছে। তাঁর এই বক্তব্য নিয়ে সর্বমহলে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মতো একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান হয়ে সহিংসতাকে উসকে দেওয়ার মতো বক্তব্য তিনি কোনভাবেই দিতে পারেন না। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সূত্রে জানা যায়, রোববার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরুর দিনে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) সঙ্গে সংলাপে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, সব দল সহযোগিতা না করলে আমরা সেখানে ব্যর্থ হয়ে যাবো। আপনাদের সমন্বিত প্রয়াস থাকবে, কেউ যদি তলোয়ার নিয়ে দাঁড়ায়, আপনাকে রাইফেল বা আরেকটি তলোয়ার নিয়ে দাঁড়াতে হবে। আপনি যদি দৌড় দেন, তাহলে আমি কী করবো?
গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এ বক্তব্যে দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ গভীর বিস্ময় ও হতাশা প্রকাশ করেছে। নির্বাচন কমিশন একটি দায়িত্বশীল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। সেই প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে রাষ্ট্রের নির্বাচনসমূহ স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক ও সবার জন্য সমান ক্ষেত্র নিশ্চিত করার দায়িত্ব তার ওপর ন্যস্ত। কিন্তু নির্বাচনে সবার সহযোগিতা চাইতে গিয়ে সম্ভাব্য সহিংসতা প্রসঙ্গে সিইসির কথা প্রকান্তরে তা সহিংসতাকেই উসকে দেবে। এধরনের বক্তব্য যেকোনো নাগরিকের জন্য অপরাধ প্রবণতার শামিল এবং অদূরদর্শিতার প্রকাশ।
নির্বাচনকেন্দ্রিক পেশিশক্তির ব্যবহার, বুথ দখল কিংবা ভোটারদের ভোট দিতে বাধা প্রদান, ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আসতে বাধাদান, জোরপূর্বক বাক্স ভরার মতো ঘটনা, অরাজকতা বিগত কয়েকটি নির্বাচনকে প্রহসেনে পরিণত করেছে। সেখানে এমন বক্তব্য এই প্রবণতাকে আরো উৎসাহিত করবে। মূলত কথা কম বলে স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান আয়োজন করাটা সিইসি বা ইসির অঙ্গীকার হওয়া উচিত। নির্বাচনকালীন সহিংসতা রোধে পাল্টা সহিংস আচরণ যথোপযুক্ত কৌশল হতে পারে না। এ ধরনের বক্তব্য সহিংসতারোধে কার্যকর কৌশল প্রণয়নে কমিশনের ব্যর্থতা স্পষ্ট করে। একই সঙ্গে তা নির্বাচনের বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার বা রাজনৈতিক দলগুলো, ভোটার ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে হতাশ ও ভীত-সন্ত্রস্ত করার জন্য যথেষ্ট হতে পারে। বলা বাহুল্য, জাতি আশা করে, কমিশন এ ধরনের সহিংসতা সহায়ক প্রস্তাবের পথ পরিহার করে নির্বাচনকালীন সম্ভাব্য সহিংসতা রোধে কার্যকর কর্মকৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে উদ্যোগী হবে।
আমাদের একটা বিষয় কোনোভাবেই মাথায় ঢুকছে না যে, যাঁরাই নির্বাচন কমিশনে যান তাঁদের বিবেক বুদ্ধি ও স্বাভাবিক বিচার-বিবেচনাবোধ লোপ পেয়ে যায় কেন। নাকি যাঁদের বিচার-বিবেচনাবোধ খুবই কম শুধুমাত্র তাঁরাই কমিশনে নিয়োগ পান? প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশনররা কাজের চেয়ে কথা বলাটাকে যে কেন বেশি পছন্দ করেন তা মোটেই বোধগম্য নয়। তারা কি জনগণের মনের ভাষা বুঝতে ব্যর্থ? নাকি তাঁরা তা বুঝতেই চান না? ভোটাররা কথা নয় নির্বাচন সহায়ক দৃশ্যমান কাজ দেখতে চায়। যেখানে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশে এই মুহূর্তে সরকারি ও বিরোধী দলের মধ্যে ব্যাপক বাক্যযুদ্ধ চলমান। কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে তা এখনও অমিমাংসীত, ইভিএম’র ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো বিভক্ত। নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা কেমন হবে তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। জাতীয় সরকার নাকি দলনিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার তা নিয়েও যখন আলোচনা তুঙ্গে, আগামী নির্বাচন নিয়ে বিদেশি মিশনগুলো যখন তৎপর তখন ইসির এমন দায়িত্বহীন বক্তব্য কতটা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহায়ক হবে তা সচেতন মহলকে বেশ ভাবিয়ে তুলেছে।
যেখানে মানুষ নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষ দায়িত্বশীল ভূমিকা আশা করে, সেখানে এমন বিতর্কিত বক্তব্য রাজনৈতিক সংকটকে আরো ঘনীভূত করে তুলতে পারে। জনগণ আশা করে, নির্বাচন কমিশন যতদূর সম্ভব কম কথা বলবে। বিতর্ক সৃষ্টি হয় এমন কাজ করা বা কথা বলা থেকে বিরত থাকবে। জাতি কোনভাবেই ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন পুনরায় দেখতে চায় না। আমরা আশা করতে চাই, কমিশন সরকারের নয় বা কোনো রাজনৈতিক দলের নয় বরং প্রকৃত ভোটাদের মনোভাবটা জানার বা বুঝার চেষ্টা করবে। আমরা আরো আশা করতে চাই, নির্বাচন কমিশন কোনো বিশেষ দলের পক্ষে নয়, জণগণের পক্ষে, ভোটারদের পক্ষে কাজ করবে।
লেখক: প্রফেসর, আইবিএ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।