Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

চট্টগ্রামে লাইটারেজ শ্রমিকদের ধর্মঘট

আটকা ৮০ লাখ টন পণ্য

| প্রকাশের সময় : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম ব্যুরো : আমদানি পণ্য খালাসের অপেক্ষায় চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে ৬০টি বড় জাহাজ (মাদার ভেসেল) অলস দাঁড়িয়ে আছে। মাদার ভেসেল ও লাইটারেজ জাহাজে আটকা পড়েছে ৮০ লাখ মেট্রিক টনের বেশি আমদানি পণ্য। এসব পণ্যের বেশিরভাগ ভোগ্যপণ্য এবং শিল্পের কাঁচামাল।
লাইটারেজ শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে গত তিনদিন ধরে পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে। এতে করে অচলাবস্থার মুখে পড়ছে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম। আমদানি পণ্য খালাস ও পরিবহন বন্ধ থাকায় বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
অন্যদিকে মালামাল খালাস করে যথাসময়ে বন্দর ত্যাগ করতে না পারায় লোকসানের মুখে পড়েছে বিদেশি জাহাজগুলো। এতে করে আমদানি-রফতানির সাথে জড়িতরা পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।
শনিবার থেকে বর্ধিত বেতন-ভাতার দাবিতে ধর্মঘট শুরু করে লাইটারেজ শ্রমিকদের একাংশ। এতে বড় জাহাজ থেকে লাইটারেজ জাহাজযোগে পণ্য খালাস ও নৌপথে পরিবহন বন্ধ হয়ে গেছে। স্থবির হয়ে পড়েছে কর্ণফুলীর ১৬টি বেসরকারি ঘাট।
গেজেট অনুযায়ী বর্ধিত বেতন-ভাতা পুরোপুরি কার্যকর করার দাবিতে এই ধর্মঘট পালন করছে লাইটারেজ শ্রমিকেরা। তবে নৌযান শ্রমিকদের মূল সংগঠন নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন জাহাজ মালিকপক্ষের অনুরোধে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কর্মবিরতি স্থগিত করে। জাহাজ মালিক সংগঠনের ১৭ ফেব্রæয়ারি নির্বাচনের পরে নতুন কমিটি বর্ধিত বেতন-ভাতা কার্যকরে পদক্ষেপ নেবে এমন আশ্বাসে মূল সংগঠনটি কর্মবিরতি স্থগিত করার এই ঘোষণা দেয়।
চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে আমদানি পণ্য নিয়ে আসা বড় জাহাজ থেকে প্রথমে লাইটার জাহাজে পণ্য স্থানান্তর করা হয়। এরপর লাইটার জাহাজ কর্ণফুলীর ওই ১৬ ঘাটে এনে পণ্য খালাস করে। এছাড়া বন্দরের বহির্নোঙর থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে লাইটার জাহাজে পণ্য নেয়া হয়। কর্মবিরতির তৃতীয় দিনে বহির্নোঙরে বড় জাহাজ থেকেও পণ্য স্থানান্তরের কাজ ব্যাহত হয়। গতকালও বহির্নোঙ্গরে মালামাল খালাস হয়নি।
বারবার নৌপথে কর্মবিরতির নামে কার্যত আমদানিকারক ও শিল্পকারখানার মালিকদের জিম্মি করা হচ্ছে বলে মনে করেন চট্টগ্রাম চেম্বারসহ ব্যবসায়ী নেতারা। চেম্বারের পক্ষ থেকে ধর্মঘট প্রত্যাহারে নৌ পরিবহন মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হলেও এ ব্যাপারে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি হয়নি। আন্দোলনরত শ্রমিকরা বলছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের কর্মসূচি চলবে।
চট্টগ্রাম থেকে সারাদেশে চলাচলকারী প্রায় দেড় হাজার লাইটার জাহাজ আছে। এসব জাহাজের মালিক প্রায় ৮০০জন। এগুলোসহ সারাদেশের সব নৌরুট মিলিয়ে প্রায় ছয় হাজার লাইটার জাহাজ চলাচল করে।
সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ
নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের সাথে বৈঠকের পরও লাইটার জাহাজ শ্রমিকদের একাংশের ডাকা কর্ম বিরতির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে আজ (মঙ্গলবার) সকাল ১০টায় শ্রম পরিদপ্তরে শ্রম পরিচালকের সাথে আরেকটি সভা আহŸান করা হয়েছে। ওই সভায় লাইটার জাহাজ মালিক ও শ্রমিকদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। সেই সভা থেকে এ বিষয়ে কোনো একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসবে বলে আশা আন্দোলনকারী শ্রমিক ও মালিক সংগঠনের নেতাদের।
গতকাল নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের সাথে সভার বিষয়ে ধর্মঘট আহ্বানকারী লাইটার জাহাজ শ্রমিক ইউনিয়নের একাংশের সভার বিষয়ে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাহাদাত হোসেন বলেন, বিকেলে মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর সাথে সভা হয়েছে। সভায় লাইটার জাহাজ মালিক সমিতির প্রতিনিধিরা সময় চেয়েছেন। শ্রমিকদের দেয়া কাগজপত্র মন্ত্রী পরীক্ষা করে দেখেছেন। এরপর সভা থেকেই তিনি জ্বালানী ও শ্রম মন্ত্রণালয়ে কথা বলেছেন।
মালিক সমিতির প্রতিনিধিরা সময় চাওয়ায় শ্রম পরিচালকের দপ্তরে সভার বিষয়টি মন্ত্রী নির্ধারণ করে দিয়েছেন বলে জানান সৈয়দ সাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, বর্ধিত বেতন-ভাতার কথা বলে মালিকরা ১ জানুয়ারি থেকে লাইটারের ভাড়া বাড়িয়ে নিচ্ছে। এজন্য আমরা গত মাসেই লিখিতভাবে মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিলাম। ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বর্ধিত বেতন-ভাতা পরিশোধের কথা থাকলেও অনেক মালিক তা করেননি। আশাকরি শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি পূরণ হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম

৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ