Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথের বাড়িটিতে জাদুঘরের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হচ্ছে না

| প্রকাশের সময় : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : কুমিল্লা নগরীর ঝাউতলায় ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের বাড়িটি ঘিরে কুমিল্লাবাসী জাদুঘরের যে স্বপ্ন দেখেছিল সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেয়ার কোনো লক্ষণ নেই। দুঃস্বপ্নই থেকে যাচ্ছে সেই স্বপ্ন। প্রায় ছয় বছর আগে তৎকালীন তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের স্মৃতি রক্ষার্থে ঝাউতলার বাড়িটি জাদুঘর করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই ঘোষণা মন্ত্রীর মুখ থেকে বেরিয়ে এলেও জাদুঘর বাস্তবায়নের আলো জ্বলে ওঠেনি অযত-অবহেলায় পড়ে থাকা ধীরেন্দ্র বাবুর বাড়িটি।
একাত্তরে শহীদ হওয়া বৃহত্তর কুমিল্লার কৃতী সন্তান অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বিশ্ববাসীর কাছে রাষ্ট্রভাষা বাংলার জন্য প্রথম সোচ্চার প্রতিবাদী কণ্ঠ হিসেবে পরিচিতি পেলেও বর্তমান প্রজন্ম ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে ততটা চেনে না বা তার সম্পর্কে বিশদ কিছু জানে না। ফলে ক্ষণজন্মা ওই গুণী ব্যক্তিত্বের সীমানা থেকে যেমন নতুন প্রজন্ম দূরে সরে যাচ্ছে তেমনি আগামী প্রজন্মের কাছে ধীরেন্দ্রনাথ নামটি মনে হবে অনেক অচেনা।
দীর্ঘদিন থেকেই ধীরেন্দ্রপ্রেমীরা কুমিল্লায় তার স্মৃতি রক্ষার দাবিসহ সাংগঠনিক উদ্যোগ নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আসছে। ঝাউতলার ওই ঐতিহাসিক বাড়িটির পরিচিতি তুলে ধরে ধীরেন্দ্রনাথের বাড়ির সামনের গাছে স্মৃতির নিদর্শনস্বরূপ রয়েছে ব্যক্তি উদ্যোগে টানানো একটি সাইবোর্ড। অন্যদিকে ধীরেন্দ্রনাথের প্রতি শ্রদ্ধা এবং তার স্মৃতি রক্ষার আহŸান জানিয়ে সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন সংলাপের উদ্যোগে সংগঠনের সভাপতি অভিনেতা শাহজাহান চৌধুরী ধীরেন্দ্রনাথের জীবনী নিয়ে ছাপানো ফোল্ডার সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে বিতরণ করেছেন। এছাড়াও ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে জানতে-চিনতে এবং নতুন প্রজন্মকে একুশের চেতনায় জাগিয়ে তুলতে কুমিল্লার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের বড় আকৃতির ছবি প্রদানের মহৎ কাজটি করছেন সংগঠক শাহজাহান চৌধুরী। আবার কবি ও চারুশিল্পী রহিম খান নিজ উদ্যোগে ধীরেন্দ্রনাথের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস লিখে বাড়িটির সামনে সাইনবোর্ড দিয়েও প্রচারণা চালিয়েছেন। ব্যক্তি উদ্যোগে এ ধরনের কাজ কতদিনই করা যায়। কুমিল্লার মানুষ ধীরেন্দ্রনাথকে ভালোবাসেন বলেই ঐতিহাসিক ধর্মসাগরের পশ্চিম দিকের রাস্তার ঝাউতলা এলাকার বাড়িটি জাদুঘর করার মধ্য দিয়ে অনন্তকাল ওই কীর্তিমান মানুষটিকে স্মৃতির ভেতর বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছেন। এটাই ছিল কুমিল্লার মানুষের দাবি।
তৎকালীন তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ ২০১০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর কুমিল্লায় এসে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের ঝাউতলাস্থ ধর্মসাগরের পশ্চিমপাড়ের বাড়িটিতে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি কুমিল্লার মানুষের দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘খুব শিগগিরই শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের স্মৃতি রক্ষায় বাড়িটিকে জাদুঘরের মর্যাদায় আনা হবে এবং কাজ শুরু হবে’। তৎকালীন মন্ত্রীর ওই আশ্বাসের প্রায় ৬ বছর অতিবাহিত হলেও বাড়িটি জাদুঘর হওয়ার কোনো লক্ষণ কুমিল্লাবাসীর চোখে পড়েনি। ধীরেন্দ্রনাথের পরিবারের জীবিত সদস্যরা বাড়িটি জাদুঘর করার জন্য সরকারের হাতে ছাড়তে নারাজ। ফলে বাড়িটি নিয়ে কুমিল্লার মানুষের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নই রয়ে গেল।
পাকিস্তানের গণপরিষদ অধিবেশনে ১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রæয়ারি উর্দু ও ইংরেজির পাশাপাশি বাংলাকে গণপরিষদের অন্যতম ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার প্রথম দাবি যিনি উত্থাপন করেছিলেন সেই মানুষটি হলেন কুমিল্লার কৃতী সন্তান অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ গভীর রাতে পাকবাহিনী ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথকে কুমিল্লার ধর্মসাগরের পশ্চিমপাড়ের নিজ বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় কুমিল্লা সেনানিবাসে। সেখানেই তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে বর্বর পাকসেনারা। দেশ স্বাধীন হলেও সেই ভাষাসৈনিকের মৃতদেহটি খুঁজে পাওয়া যায়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাস্তবায়িত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ