পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
২০২১ সালের মধ্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বিদ্যুতের উন্নয়নে এক সাথে আলাদা ৫টি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন হলে দেশের ১৫ লাখ নতুন গ্রাহক সৃষ্টি, ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছানোর সঞ্চালন লাইন, সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ নানাবিধ দিক উন্মোচিত হবে। গত মঙ্গলবার রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বিদ্যুতের ৫টিসহ মোট ১৬টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এগুলোতে মোট ব্যয় হবে সাড়ে ১৬ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা। একনেকের সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রকল্পের বিস্তারিত জানিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১৪ হাজার ৪১ কোটি টাকা, সংস্থাগুলোর নিজস্ব ৫৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা আর সহায়তা পাওয়া যাবে ২ হাজার ২২৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা। একসঙ্গে বিদ্যুতের এতগুলো বড় প্রকল্প অনুমোদনের প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, সরকারের লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে শতভাগ বিদ্যুত নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্যে প্রকল্পগুলো ২০১৯ সালের মধ্যেই বাস্তবায়িত করতে হবে। তাই একদিকে বিদ্যুতের গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছানো, অন্যদিকে উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বিদ্যুতের অপচয় রোধে ও সুষম বণ্টন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এসব প্রকল্প নেয়া হয়েছে। একদিকে উন্নয়ন করে অন্যদিকে ঘাটতি রাখলে মূল লক্ষ্য অর্জিত হবে না। এজন্য ধারাবাহিকভাবে আসা এসব প্রকল্প একসঙ্গে অনুমোদন দিয়ে কাজের গতি আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।
আলোচ্য প্রকল্প বাস্তবায়নের অর্থের যোগান প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের একজন সদস্য জানিয়েছেন, সরকারের সর্বোচ্চ গুরুত্বে রয়েছে এই খাত। তাই বিগত অর্থবছরেও সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে সংশোধিত এডিপিতে আরো বরাদ্দ দেয়া হবে। তাছাড়া বাস্তবায়ন সক্ষমতা দেখাতে পারলে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের রয়েছে। এর আগে ক্রমবর্ধমান চাহিদা সামনে রেখে বিদ্যুৎ বিভাগ একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করে। বাস্তবতা হচ্ছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা সামনে নিয়ে কাজ চলছে সে লক্ষ্যমাত্রা এখনো অর্জিত হয়নি। আশা করা যায়, আগামীতে যেসব প্রকল্পের কথা বলা হচ্ছে সেগুলো বাস্তবায়িত হলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হতে পারে। এটাও আশা করা অনুচিত নয় যে প্রকল্পগুলো যথা সময়ে শেষ হবে। যদি তা হয় তাহলে হয়ত ঘোষিত লক্ষ্য অর্জিত হতে পারে। দেখা যাচ্ছে, উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় সময় নষ্ট হবার কারণে তা অর্জিত হয় না। প্রকল্প শেষ হতে না হতেই চাহিদা বৃদ্ধি পেয়ে যায়। সাধারণ নিয়মানুযায়ী প্রতিবছরই বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। আশার কথা, আলোচ্য মহাপরিকল্পনার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেছেন, ২০২১ সালে বাংলাদেশের কোন স্থান অন্ধকারে থাকবে না। সকলের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেয়া হবে। তার মতে, একনেকে যে প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে এর ফলে ১৫ লাখ নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া যাবে।
উৎপাদনের অন্যতম পূর্বশর্ত বিদ্যুৎ। পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ না হলে যেমন উৎপাদন কাজ শুরু করা যায় না, তেমনি ব্যাহত হয় উৎপাদন। এখন পর্যন্ত বিদ্যুতের যে অবস্থা তাতে শহর এলাকায় কিছু বিদ্যুৎ থাকলেও গ্রামাঞ্চলের অবস্থা খুবই খারাপ। খোদ শহরেই একটু ঝড়-বৃষ্টি হলেই বিদ্যুতের লাইনে বিভ্রাট দেখা দেয়। শীতকাল ছাড়া গ্রীষ্মকালে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়ার সুযোগ নেই। সঞ্চালন লাইনের ত্রুটির কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘœ সৃষ্টি হওয়া অনেকটা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। এসব দিক বিবেচনা করে বিদ্যুতের উৎপাদন ও বণ্টন নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। তা না হলে উৎপাদিত বিদ্যুতের যথাযথ সুফল পাওয়া যাবে না। এ কাজটি করার দিকে সরকার ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় অধিকতর নজর দিয়েছে। এজন্য তারা প্রশংসার দাবিদার। আমরা মনে করি, শুধু পরিকল্পনা গ্রহণ নয়, এসব পরিকল্পনা যাতে সময়মত এবং নির্ধারিত অর্থেই সমাপ্ত হয় সেদিকে নজর দেয়াও জরুরি। সংশ্লিষ্ট সকলে আন্তরিক হবেন- এটাই প্রত্যাশিত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।